জমি অধিগ্রহণ স্থবির রেখেই ঝিনাইদহে
নতুন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ এক যুগেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রটি। ঝুলে আছে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিও। বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় ফেজের একটি ভাড়া বাড়িতে চলছে আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রম। আবার জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের যে অর্গানোগ্রাম নিয়ে কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মূলত: বেসরকারি কলেজগুলোর কারিকুলাম নিয়ন্ত্রণ, উত্তরপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনে কলেজগুলোতে সরবরাহ ও তা’ সংগ্রহ করে সেগুলো আবার জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে পাঠানোর কাজটিই করা হয় এ কেন্দ্র থেকে।
এদিকে, খুলনা কেন্দ্রের এমন নড়বড়ে অবস্থার মধ্যেই নতুন করে ঝিনাইদহে একটি কেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে খুলনা কেন্দ্রটি ঝিনাইদহে চলে যাচ্ছে এমন গুঞ্জণও শুরু হয়েছে। যদিও এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র যেমন খুলনায় আসেনি তেমনি খুলনা কেন্দ্রটি যাচ্ছে না, বরং ঝিনাইদহে নতুন একটি কেন্দ্র হচ্ছে বলেও দাবি করা হয় জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ থেকে। কিন্তু খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বিভাগের ১০ জেলার কার্যক্রম চললেও এর মধ্যে আরও একটি কার্যালয় হলে সেটি কোন কোন জেলা নিয়ে পরিচালিত হবে সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক বলেন, খুলনা কার্যালয়টির কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে। আর ঝিনাইদহে হবে নতুন কার্যালয়। হয়তো সেটি জেলা কার্যালয় হিসেবেই পরিচালিত হবে বলেও তিনি মনে করছেন।
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র মতে, ২০১১/১২ সালের দিকে খুলনা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে একজন পরিচালক নিয়োগ করে কিছু কাজকর্ম এ কেন্দ্র থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হয়। নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় ফেজের একটি ভাড়া বাড়িতে কেন্দ্রের কার্যক্রম চললেও শহরতলির জিরো পয়েন্ট থেকে জয়বাংলা মোড়ের মাঝামাঝি জায়গায় স্থায়ী কেন্দ্রের জন্য জমি দেখা হয়। কয়েক বছর ধরে জমি দেখার কার্যক্রম চললেও পরে আর আধিগ্রহণ হয়নি। তবে ভাড়া বাড়িতে অফিসের কার্যক্রম চললেও এ কেন্দ্রের ফলে এ অঞ্চলের বিশেষ করে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বেসরকারি কলেজগুলোর সুবিধা হয়। এতে কলেজ শিক্ষকদের সময় ও অর্থ খরচ করে গাজীপুরে যেতে হয় না। খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রে এসেই পরীক্ষার উত্তরপত্র সংগ্রহ এমনকি পরীক্ষার পর উত্তরপত্রগুলো এ কেন্দ্রে দিয়ে যেতে পারছেন শিক্ষকরা।
অবশ্য খুলনা কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান থাকার এক পর্যায়ে জাতীয়বিশ্ববিদ্যলয় থেকে ছয়টি কেন্দ্রের স্থলে তিনটি কেন্দ্রের জন্য একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। যেগুলো হচ্ছে বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম। একনেকে ওই তিনটি কেন্দ্রের জন্য অনুমোদন হলে সেখানে কার্যক্রম শুরু হয় এবং বরিশালের কেন্দ্রটি জমি অধিগ্রহণ শেষে টেন্ডার হয়ে ভবন দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু খুলনার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সেভাবেই পড়ে আছে।
এ অবস্থায় যখন খুলনায় একটি স্থায়ী কেন্দ্র হবে এমনটি আশা এ অঞ্চলের কলেজ শিক্ষকদের, ঠিক তখনই জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির রেখেই নতুন করে ঝিনাইদহে আরও একটি কেন্দ্র করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এমনকি অতি গোপনে এ কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনাও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এমনটিও জনশ্রুতি রয়েছে। যার ফলে খুলনা কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকাও করেন অনেকে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে খুলনার জনপ্রতিনিধিদেরও জানানো হয় সংশ্লিষ্ট মহল থেকে।
সূত্রটি বলছে, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা পরিচালক সুমন চক্রবর্তী সম্প্রতি খুলনায় আসলে তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, এটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ প্রকল্প। অবশ্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের বিকেন্দ্রিকরণের জন্য এমন পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বিভাগীয় শহর খুলনার কেন্দ্র থাকাবস্থায় একই বিভাগে আর একটি কেন্দ্রের প্রয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক এ এস এম আব্দুল হক বলেন, এখনও পর্যন্ত খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে তিনি শুনেছেন ঝিনাইদহে একটি নতুন কেন্দ্র হচ্ছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র খুলনায় আসেনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক(পরিকল্পনা) সুমন চক্রবর্তী বলেন, খুলনা কেন্দ্র যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে। ঝিনাইদহে নতুন কেন্দ্রের জন্য কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে সেটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ঝিনাইদহে কেন্দ্র হলে সেটি হতে পরে জেলা কার্যালয়। যার সাথে খুলনা কেন্দ্রের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে খুলনা বিভাগের একটি জেলায় নতুন কেন্দ্র হলে বিভাগের কার্যক্রম কিভাবে চলে এমনটি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসির সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানান।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রটির জন্য জমি অধিগ্রহণ স্থবির রেখে নতুন করে ঝিনাইদহে যে কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এটি শুধু খুলনার প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণই নয়, বরং খুলনাকে অবহেলা করার শামিল। তিনি অবিলম্বে খুলনায় স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, দ্রুত এ কার্যক্রম শুরু না হলে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, প্রথমত: খুলনা হচ্ছে একটি বিভাগীয় শহর এবং এটি একটি ‘এডুকেশনাল হাব’ তথা শিক্ষাগত কেন্দ্র। এখানে সব ধরনের বিশ^বিদ্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ^বিদ্যলয় কলেজ এবং পোষ্ট গ্রাজুয়েট কলেজও। এ অবস্থায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রের কার্যক্রম বিগত প্রায় এক যুগ ধরে চললেও এমন কোন কিছু দেখা যায়নি যে, এ কেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন আছে। কোন অসদ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ঝিনাইদহে নতুন কেন্দ্র করা হচ্ছে সেটি রহস্যজনক বলেও তিনি মনে করেন। কেননা ঝিনাইদহ হচ্ছে খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলা। এমনকি অনেক ছোট্ট একটি জেলা ও সেখানে শিক্ষা বিস্তারের কোন জায়গাও নেই। যাতায়াতের জন্য নেই রেল সংযোগও। খুলনা কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম স্থবির রেখে কেন ঝিনাইদহে নতুন কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করে তিনি বলেন, তা’ না হলে মনে হবে এ নিয়ে কোন দুরভিসন্ধি রয়েছে এমনকি এতে অনিয়মের অপছায়া দেখা যাচ্ছে। কোন স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন উদ্যোগ বলেও তিনি মনে করেন।