হাসান চৌধুরী, দৌলতপুর খুলনা সংবাদদাতা: জাপানে বিনা খরচে চাকরির স্বপ্ন বাস্তবায়নে খুলনায় চলছে বাস্তবমুখী প্রস্তুতি। দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যুবসমাজকে প্রবাসমুখী দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতায় ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি সময়ের সঙ্গে আধুনিকায়িত হয়ে এখন খুলনা অঞ্চলের অন্যতম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তিন থেকে পাঁচ মাস মেয়াদি কোর্স। বিষয় গুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং ফর ফ্রিল্যান্সিং, রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং, ইলেকট্রিক্যাল ইন্সটলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, টেইলারিং অ্যান্ড ড্রেসমেকিং, ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, অটোমোটিভ মেকানিক্স, মেশিন শপ প্রাকটিস, রড বাইন্ডিং প্রভৃতি। ভাষা কোর্সের মধ্যে রয়েছে জাপানিজ, ইংরেজি এবং কোরিয়ান ভাষা। দেশ ও বিদেশমুখী মোটরসাইকেল চালনা শেখার জন্য রয়েছে চালকের প্রশিক্ষণ কোর্স।
টিটিসি খুলনা বর্তমানে সেন্টার অব এক্সসিলেন্সে রূপান্তরের প্রক্রিয়াধীন। উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সেশনে জাপানিজ ভাষা কোর্সের ৩৩ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে ২৮ জনকে আইএম জাপান কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জাপানে যাওয়ার জন্য মনোনীত করা। বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে প্রতি মাসে দেড় লক্ষ টাকা বেতনে সম্পূর্ণ বিনা খরচে জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মীদের জন্য তিন দিনব্যাপী প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন এবং বিনামূল্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিটিসি খুলনা। এতে বিদেশগামী কর্মীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা লাভ করছেন।
টিটিসি খুলনার নিজ কার্যালয়ে অধ্যক্ষ মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ২০২০ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে টিটিসি খুলনায় ৮টি বিশ্বমানের ওয়ার্কশপ/ল্যাব এবং একটি একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি সেশন থেকে এখানে মোট ১৪টি নিয়মিত কোর্সসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ১৮টি কোর্স চালু রয়েছে।
বর্তমানে দেশের ১১০টি টিটিসি এবং ৭টি আইএমটি’র মধ্যে খুলনা টিটিসি অন্যতম সেরা প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
অধ্যক্ষ মো. জিয়াউর রহমান দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
টিটিসি খুলনার এই প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কার্যক্রম খুলনা জেলা তথা সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেমিটেন্স প্রবাহ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।