অনেক অনেক আগে পরীদের রাজ্যের রানীর একটা ছোট্ট রাজকন্যা জন্ম নিল।রাজ্যের সবাই এলো রাজকন্যাকে দেখতে।রাজকন্যাকে দেখে তো সবাই অবাক।ওমা!রাজকন্যার সারা গা যে ঝলমল করছে।ঠিক যেন রাজকন্যার ভিতর থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে।রানী এবং রাজ্যের বাকী পরীরা ছোট্ট রাজকন্যাকে দেখে মহাখুশি।দিন যেতে থাকল, রাজকন্যাও বড় হতে থাকল।কিন্তু একী!রাজকন্যার না আছে পরী ডানা,না আছে পরীদের জাদু ক্ষমতা।রাজ্যের বাকী পরীদের মতো উড়তেও পারে না,জাদুও করতে পারে না।রাজ্যের সবাই তখন রাজকন্যাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে থাকল।রাজকন্যা তখন ভাবতে শুরু করলো ❝আমি তো কিছুই পারি না।পরীদের এতো বড় রাজ্যের রাজকন্যা আমার হওয়াই উচিত না।❞রাজকন্যা যখনই এমন ভাবতো তখনই তার ওজন হাওয়ায় মিলিয়ে যেত।ওজন হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে যেতে ঝলমলে রাজকন্যা মলিন কাঠিতে রূপান্তর হলো।যেই কাঠির হাত-পা আছে কিন্তু হাতে-পায়ে আঙুল নেই।যেই কাঠির মাথা আছে কিন্তু মাথায় চুল নেই।কাঠির শরীর আছে কিন্তু তাতে চামড়া ছাড়া আর কিছুই নেই।রাজ্যের সবাই তখন রাজকন্যাকে ” কাঠিকন্যা” বলে ডাকতে শুরু করলো।মনের কষ্টে রাজকন্যা একদিন রাজপ্রাসাদ,রাজ্য সব ছেড়ে দিয়ে পরীদাদুকে খুঁজতে বনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।কারণ পরীদাদু যে সকলের কষ্ট দূর করে। বনের ভিতর দিয়ে রাজকন্যা শুধু হাঁটছে আর হাঁটছে।পথ যেন শেষ হয় না।কিন্তু রাজকন্যা যে বড্ড ক্লান্ত।পা যে আর চলে না।বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খুঁজতে খুঁজতে রাজকন্যা একটা বড় গাছের নিচে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।রাজকন্যার ঘুম ভাঙলে দেখলো চারদিক অন্ধকার।রাতের বেলায় বনের ভিতর একা একা ভয়ে মা-বাবার কথা মনে করে রাজকন্যা কাঁদতে থাকলো আর জোরে জোরে পরীদাদুর কাছে সাহায্য চাইতে থাকলো।রাজকন্যার ডাকে সাড়া দিয়ে পরীদাদু রাজকন্যার সামনে হাজির হলো।❝তুমি আমায় ডাকছিলে কেন?❞রাজকন্যা পরীদাদুকে দেখে বললো❝আমি শুনেছি তুমি সবার কষ্ট দূর করো তাই আমি তোমার কাছে সাহায্য চাইছি।আমি রাজকন্যা থেকে কাঠিকন্যা হয়ে সব হারিয়ে আজ একা বনে বনে হাঁটছি।❞❝আমি বুঝেছি তোমার অবস্থা।তুমি এখন থেকে তিনদিন ধরে তোমার সমস্যাটা ভাবো।।তিনদিন পর আমায় তোমার সমস্যার কথা বলবে।❞এই বলে পরীদাদু আবার হারিয়ে গেল।তিনদিন তিনরাত ভেবে ভেবে অবশেষে রাজকন্যা আবার পরীদাদুকে ডাকলো।পরীদাদু এলে রাজকন্যা পরীদাদুকে বললো ❝আমি বুঝতে পেরেছি পরীদাদু।সবাই যখন বলতো আমার পরী ডানা নেই, আমি জাদু করতে পারি না,আমায় নিয়ে হাসাহাসি করতো।তখন আমি সবার কথা শুনে নিজের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছিলাম।❞ পরীদাদু মুচকি হেসে বললো ❝তাহলে তুমি এখন কী করবে?❞ রাজকন্যা বললো ❝আমি আর অন্যদের কথা না শুনে নিজেকে বিশ্বাস করবো।আমার ডানা হয়তো দেরিতে উঠবে,আমার জাদু শিখতে হয়তো সময় লাগবে।কিন্তু আমি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবো যে আমারও একদিন ডানা উঠবে,জাদু ক্ষমতা হবে।আমি যদি উড়তে বা জাদু করতে নাও পারি তবুও আমি পরীদের রাজকন্যা।❞পরীদাদু তখন হেসে দিয়ে বললো ❝এবার তুমি সব পাবে কারণ তুমি নিজেকে বিশ্বাস করেছ।❞অমনি রাজকন্যার মাথায় চুল,হাতে-পায়ে আঙুল, ঝলমলে শরীর সব ফিরে এলো।সাথে এলো জাদু ক্ষমতা এবং পিঠে ঝলমলে রূপালি একজোড়া অপূর্ব ডানা।রাজকন্যা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরীদাদুকে ধন্যবাদ জানালো এবং কথা দিলো সে এখন থেকে সবসময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখবে।তারপর উড়তে উড়তে প্রাসাদে ফিরে এলো রাজকন্যা। অবশেষে রাজকন্যা এবং রানী রাজ্য নিয়ে সুখে-শান্তিতে বাস করতে থাকলো।
-×-

লেখক:তাসনিয়া ইসলাম প্রত্যাশা

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ

একাদশ,মানবিক বিভাগ