১ হাজার টাকার কেবিনের টিকিট সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি

শামসুল হক। পেশায় একটি দোকানের সেলসম্যান। বাড়ি লালমনিরহাটে। সোমবার রাতে টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১২ টার দিকে কাউন্টার থেকে বলা হয় টিকিট শেষ। বাধ্য হয়ে শামসুল বুধবার বিক্রি করা টিকিটের জন্য লাইন ধরেন।এমন করে মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার দিকে ১ নম্বর থেকে ৫ নম্বর কাউন্টারে রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেসের জন্য টিকিট কাউন্টারে দাঁড়ানো টিকিট প্রত্যাশীর সিরিয়াল ছিল ২২০। সেই লাইন কতদূর পর্যন্ত যাবে তা সময়ই বলে দেবে বলে আগত টিকেট প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন। যারা লাইন ধরেছেন তাদের অনেকে আবার শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, ‘লাইনে তো দাঁড়াচ্ছি। ইফতার করব। রাতও জাগবো। সাহরি করব। এখন সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট মিলবে কিনা তা নিয়ে টেনশনের মধ্যে থাকতে হবে।’এর আগে দুপুরে রেলস্টেশনের কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। অর্ধদিন লাইনে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ টিকিট না পেয়ে এক ধরনের হৈ চৈ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে এক যুবক ২৭ এপ্রিলের ৬টি টিকিট বের করে বিক্রি করছেন। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৬টি টিকিটই কেবিনের। টিকিটগুলো অনলাইনে সহজ ডটকম থেকে কাটা হয়েছে ২৫ এপ্রিল বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিট। ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত এসি কেবিনের টিকিট মূল্য ৯৮৫ টাকা। এই টিকিটের দাম হাঁকা হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।কয়েকজন টিকিট প্রত্যাশী টিকিটগুলো হাতে নিয়ে বললেন, জাল নয় তো। ওই ব্যক্তি নিজেকে সহজ ডটকমের একজন চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভাই ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাটা টিকিটে এনআইডি ও মোবাইল নম্বর চেক হবে না। তাই এই টিকিট নিতে পারেন।’ এরই মধ্যে প্রতিটি টিকিট সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেলো।সূত্র জানায়, ঈদের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮ টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। তাহলে কালোবাজারিতে বিক্রি করা নীলসাগর এক্সপ্রেসের ওই ৬টি টিকিট ২৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ক্রয় করা হল কিভাবে? এমনকি ২৭এপ্রিল ভ্রমণের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ২৩ এপ্রিলে। এভাবে অনলাইন থেকে সহজ ডটকম অবৈধভাবে টিকিট বাইরে বিক্রি করছে।অপরদিকে, কমলাপুর রেলস্টেশনে বিকাল ৪ টার পর অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ১ নম্বর কাউন্টারে অন্তত ১০-১৫ জনের লাইন দেখা গেছে।লাইনে দাঁড়ানো একজন টিকিট প্রত্যাশী বলেন, রেল ভবন থেকে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দিয়ে ফোন করে টিকিট বুকিং রাখা হয়েছে। ২৯ এপ্রিল ভ্রমণের টিকিট মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার দিকে ১ নম্বর কাউন্টার থেকে এনআইডি জমা দিয়ে টিকিট নিতে বলা হয়েছে। এজন্য তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন।এভাবেই কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে রেল মন্ত্রণালয় ও রেল অধিদফতরের বড় কর্তাদের ভিআইপিদের নামে বুকিং করা সিন্ধা ও স্লিপার বার্থের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ যারা রাতদিন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন-তারা এসি টিকিট তো দূরের কথা শোভন চেয়ার কোচের টিকিট পর্যন্ত কপালে জুটেনি।সূত্র জানায়, ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপী ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলবে বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এদিন দেওয়া হবে ১ মে যাত্রার টিকিট। এই টিকিট নামক ‘সোনার হরিণ’ পেতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে মানুষজন কমলাপুর স্টেশনের নির্ধারিত কাউন্টারের সামনে থেকে লাইন ধরেছেন।লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মিরপুর থেকে আসাম নাজিম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১ মের অগ্রিম টিকিট নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তার মতো আরো কয়েকজন রাজশাহী, লালমনিহাট, রংপুর, খুলনা, কুড়িগ্রাম, চিলাহাটি ও পঞ্চগড় রুটের টিকিট নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন।সিরিয়াল নাম্বার কত ? আমার সিরিয়াল আড়াইশ চলছে। আরও লোক আছে নাকি-এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, লোক আছে। কেউ গেছে খাইতে, কেউ গেছে গোসল করতে। আবার কেউ গেছে একটু বিশ্রাম নিতে। সময় হলে তারা চলে আসবে। কেউ ইফতার কিনতে গেছে।এ নিয়ে এক টিকেট প্রত্যাশী বলেন, আগামীকাল কাউন্টার যখন খুলবে তখন সর্বোচ্চ ৫০-১০০ জনকে টিকিট দেওয়ার পর বলবে টিকিট শেষ। তারপরও দাঁড়ালাম। দেখি কি আছে ভাগ্যে। এসময় তারা বলেন, এখানে দুই দিন আগে লাইনে দাঁড়ানো লোকও আছেন যারা টিকিট পাননি।এ সময় একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্টেশনে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও টিকিট পাইনি। বেলা ১২ টার দিকে ঘোষণা হয় টিকিট শেষ। তাহলে বিকাল ৫টার সময় কাউন্টার থেকে কিসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে? অবশ্যই এই লোকগুলো বড় কর্তাদের ফোন দিয়ে টিকিট নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, রেলের ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে। তবে অনলাইনে অনেকে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে ভিড় করছেন। বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল থেকে ঢাকার কমলাপুর, তেজগাঁও, ফুলবাড়িয়াসহ ৫ স্টেশনে একযোগে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া হয়েছে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। এদিনও অনেক লোক রাত জেগে লাইনে দাঁড়ানোর পরও টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন। এবার রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ ও ইমাজেন্সি কোটায় ২ শতাংশ টিকিট দেওয়া হচ্ছে।