করোনায় গত ৫ মাস আয় বন্ধ থাকলেও
অগ্রিম আয়কর দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা

এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অগ্রিম আয়কর দিতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা। করোনাকালে চলতি বছরের ৫ মাসই বন্ধ ছিলো বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আয় বন্ধ থাকলেও অগ্রিম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর আয় করসীমার নিচে, কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় তাদেরও দিতে হচ্ছে অগ্রিম আয়কর। যা আর্থিক কষ্ট বাড়াচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। অনেকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি বাড়াতে আয়কর অধ্যাদেশের ৫২ কে ধারায় সংশোধন আনা হয়। এই সংশোধনের মাধ্যমে খুলনা সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নকালে উৎসে কর ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর থেকে কেসিসির কর্মচারীরা অগ্রিম আয়কর জমা দেওয়ার চালান দেখে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনের ট্রেড লাইসেন্স বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকে লাইসেন্স নবায়ন করছেন। নবায়ন না করেই ফিরে যাচ্ছিলেন শেখপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র লৌহ ব্যবসায়ী হোসাইন আহমেদ। পূর্বাঞ্চলকে তিনি বলেন, গত এপ্রিল থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। অন্যান্য বছর ব্যবসা সচল থাকে, আয়কর দিতে সমস্যা হয় না। কিন্তু বছরের প্রায় ৫ মাস ব্যবসা বন্ধ। আয় তো দূরের কথা পুঁজিই প্রায় শেষ। আয়ই যেখানে বন্ধ, আয়কর কিভাবে দেবো? অথচ দুই হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর প্রদানের চালান জমা না দিলে লাইসেন্স নবায়ন করছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার লাইসেন্স ফি ১ হাজার টাকা। সাইনবোর্ডের ওপর কর দিয়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। এর বাইরে আরও দুই হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর দিতে হয়েছে। অর্থ্যাৎ ১ হাজার ৩০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্স ফি পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ টাকা।’
আরও কয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, শুধু হোসাইন আহমেদই নন; ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অগ্রিম আয়কর দিতে গিয়ে আর্থিক সংকট বাড়ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তাদের ভাষ্য, গত ৫ মাস ধরে সবারই ব্যবসা বন্ধ, আয় বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে নাজুক পরিস্থিতিতে তাদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর আদায় অনায্য। আয়সীমা পার হলে সবাই আয়কর দেন, কিন্তু এ বছর সবাই কমবেশি ঋণগ্রস্ত। আবার ছোট মুদি দোকান, পান ও সিগারেটসহ ছোট দোকান, হস্ত-কুটির শিল্পে নিয়োজিত নারী ব্যবসায়ীদের বার্ষিক আয় করসীমার নিচে থাকে। তাদেরও বাধ্যতামূলক ২ হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর দিতে হচ্ছে। আর্থিক এই দুঃসময়ে অগ্রিম আয়কর ব্যবস্থা বাদ দেওয়ার দাবি তাদের।
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, এটা রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত আয়কর। এই টাকা সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে সেই জমা স্লিপ বা চালানের কপি কেসিসিতে জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এই অর্থ বৃদ্ধির বিষয়ে কেসিসির কোনো হাত নেই।
তিনি বলেন, অগ্রিম আয়করের কারণে কেসিসির ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন কমে গেছে। বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন সিদ্ধান্ত না আসলে আমাদের কিছু করার নেই।