সম্পাদকীয়
দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু। আবার করোনার সংক্রমণের ঘটনাও ঘটছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণের উচ্চ হার আমাদেরও ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেশ কিছু সর্তকতামুলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে ১২ দফা নিদের্শনাও জারী করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার নতুন সাব ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এ কারণে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আবারও এক ধরনের আশংকা তৈরী হয়েছে। এমনি অবস্থায় অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলে আমরা মনে করি। এদিকে বর্ষা মৌসুম খুবই সামনে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বৃষ্টি শুরুর কথা বলেছে। এ সময়ে প্রতি বছরই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। এবার ডেঙ্গু আরও জোরালোভাবে আগ্রাসী রূপ ধারণ করতে পারে বলে কীট বিজ্ঞানীরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। সারা দেশেই ডেঙ্গুর আগ্রাসী রূপের ইঙ্গিত ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকে এ সংক্রান্ত এক সংবাদে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে নতুন করে আরো ২৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬১ জনই বরিশালের বাসিন্দা। তবে, এসময় নতুন করে কারো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৮ জন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগেই ২৬১ জন, ঢাকা দক্ষিণে ১২, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, ময়মনসিংহে দুইজন এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে একজন করে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা প্রতি বছরই ডেঙ্গু নিয়ে অনেক উদ্যোগ আয়োজনের কথা শুনি। কিন্তু বর্ষা আসলে দেখি ডেঙ্গুকে প্রতিহত করা যাচ্ছে না। গত বছর আমরা দেখেছি প্রায় প্রতি দিনই মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। মৃত্যু যেমন হয়েছে তেমনি আক্রান্তের সংখ্যাও ধারাবহিকভাবে বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। যদিও ডেঙ্গু এখন অনেকটাই আমাদের সমাজে সহনীয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু মৃত্যু হার বেশী হওয়ায় এ নিয়ে মানুষের ভয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রচেষ্টার কথা বলা হচ্ছে সত্য কিন্তু তেমন ফলাফল মিলছে না। আমরা মনে করি সরকার যদি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে এর প্রকোপ কমে আসতে বাধ্য। বিশেষজ্ঞরা সব সময়ই ডেঙ্গুর উৎসস্থল ধ্বংস করার বিষয়ে বেশী মনোযোগ আকর্ষণ করে আসছেন। কিন্তু কাজটি ঠিকভাবে হচ্ছে না। যার কারণে ডেঙ্গুকে নির্মুল বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা জানি, ডেঙ্গু পৃথিবীতে নতুন রোগ নয়। কিন্তু ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে মৃত্যু হার অপরাপর দেশ থেকে অনেক বেশী। এ জন্য মানুষের চিন্তার বিষয় এটি। ডেঙ্গু মাঝেমাঝে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয় যদি কী না যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা করা না হয়। এ জন্য আমরা সব সময়ই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার কথা বলে আসছি। আমাদের বিশ্বাস মানুষ যদি এ বিষয়ে বেশী বেশী করে সচেতনতামুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে ডেঙ্গুর উৎসস্থল ধ্বংস হবে এবং এর প্রকোপও সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন,‘দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ না হলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমানো সম্ভব না। বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা জরুরি। কোনো ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলেই যেন তিনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন যে, তার ডেঙ্গু হয়েছে কি না? এজন্য কমিউনিটি ক্লিনিকসহ পরীক্ষা ব্যবস্থা মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে যেতে হবে।’ ডেঙ্গুতে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হতেই পারেন, কিন্তু এটিতে মৃত্যু হওয়ার মতো পরিস্থিতি কেন তৈরি হবে? বর্তমান সরকার ডেঙ্গু রোগী খুঁজতে কিংবা মশার ঘনত্বপূর্ণ এলাকা খুঁজতে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে পারেন। আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের বৃত্তের বাইরে এসে কাজ করতে হবে। এজন্য দরকার উদ্যোগ। ‘সরকার যদি ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়-এই তিন ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা দেয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ও মৃত্যুহার কমানো সহজ হবে।’ আমরা মনে করি স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমাদের অসচেতনতায় ডেঙ্গু ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয়ার ব্যবস্থাপনা তৈরী করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মশা নির্মুলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। উৎসস্থলে হাত দিয়ে ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও প্রয়োজনে পরিবর্তন এনে ডেঙ্গুর বিভিন্ন ধরণ বিনাশে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াসহ গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।