একযুগ ধরে নষ্ট খুমেক
হাসপাতালের মেশিনটি

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ সংকটের কথা জানানো হয়েছিল আগেই। প্রায় এক যুগ ধরে নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকা সেল সেপারেটর মেশিনটি মেরামতের জন্যও বলা হয়েছিল। এজন্য একাধিকবার পত্রও দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ বা নিমিইউ’র চীফ টেশনিক্যাল ম্যানেজার বরাবর। জানানো হয়েছিল মেশিনটি মেরামত না করা হলে ডেঙ্গু রোগীদের সেবাদান বাধাগ্রস্ত হতে পারে। দেখতে দেখতে সময় বয়েই গেলো। আর এরই মধ্যে চলে আসলো ডেঙ্গু। এর ফলে এখনই সংকটের চূড়ান্ত রূপটি সামনে এসে হাজির। কিন্তু কিছুই করার নেই। এ চিত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ডেঙ্গু রোগীদের সেবার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে পদ্মার এপারের স্বাস্থ্যসেবার এ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি ঠিক তখনই এমন একটি মেশিনের অভাবই এখন প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা সেল সেপারেট মেশিনটি আর মেরামতযোগ্য নয় বলে গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর নিমিইউ থেকে আসা একটি প্রতিনিধিদল জানিয়ে দেয়। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পত্রের পর পত্র দিয়ে মেশিনটি মেরামতের দাবি জানিয়ে আসছেন। পাশাপাশি দাবি করা হয় নতুন আরও একটি মেশিন সরবরাহের।
পক্ষান্তরে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটেলেট সরবরাহের জন্য নতুন একটি আধুনিক মানের প্লাজমা এ্যাফারেসিস মেশিনের চাহিদাপত্র দিয়েও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ওই পত্রও দেয়া হয় একাধিকবার। এছাড়া হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ থেকে দেয়া ৩৯টি আইটেমের চাহিদাপত্রের প্রথমেই উল্লেখ করা হয় ওই যন্ত্রটির নাম।
এ্যাফারেসিস মেশিনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে একজন দাতা বা রোগীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ রক্ত সরিয়ে নেওয়া এবং রক্তকে পৃথক উপাদানে বিভক্ত করা সম্ভব। যাতে একটি নির্দিষ্ট উপাদানকে সরিয়ে ফেলা যায়। অবশিষ্ট রক্তের উপাদানগুলি আবার রোগী বা দাতার রক্ত প্রবাহে পুনরায় চালু করা হয়। সেল সেপারেট মেশিনের চেয়ে এ্যাফারেসিস মেশিনের দামেরও খুব বেশি একটা তারতম্য নয় বলে দেখা গেছে। ইউএসএ’র এ মেশিনটির বাজার দর ৩৫ লাখ টাকা, আর সেল সেপারেট মেশিনের বাজার দর ৩০ লাখ টাকা।
সরকারের পক্ষ থেকে এর যে কোন একটি মেশিন কেনার উদ্যোগ যেমন নেয়া যেতে পারে তেমনি স্থানীয় পর্যায়েও কেনার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে একটি সূত্র বলছে, খুমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের নিজস্ব যে তহবিল রয়েছে তা দিয়েও এমন একটি মেশিন কিনে জরুরি প্রয়োজন মেটানো কঠিন কোন কাজ নয়। এজন্য প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ। কিন্তু সে উদ্যোগ কে নেবেন সেটিই এখন প্রশ্ন।
খুমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ডা: এসএম তুষার আলম বলেন, খুলনা অঞ্চলের জন্য কমপক্ষে একটি এ্যাফারেসিস মেশিন এই মুহূর্তে খুবই জরুরি। এজন্য তিনি নিজেও সম্প্রতি চাহিদাপত্র যেমন দিয়েছেন তেমনি হাসপাতালের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: বিধান চন্দ্র ঘোষ গত ৩ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পত্র দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি নামের একটি প্রকল্প থেকে একটি মেশিন দেয়ারও আশ^াস দেয়া হয়েছিল বলেও তিনি জানান। কিন্তু কেন আজও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি সেটি জানাতে পারেননি তিনি।
এমনকি গত ১৫ জুলাই বর্তমান পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসানও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই প্রকল্পের লাইন ডাইরেক্টর বরাবর যে চাহিদাপত্র দিয়েছেন তাতেও এ্যাফারেসিস মেশিনের কথা উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ এই মুহূর্তে হয় একটি সেল সেপারেট মেশিন অথবা একটি এ্যাফারেসিস মেশিন সরবরাহ করা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তা না হলে ঢাকার মতো খুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলেও তাদের আশংকা।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, দু’টি মেশিনের জন্যই চেষ্টা চলছে। হয়তো শীঘ্রই এর একটি সমাধান হবে। আর সেল সেপারেট বা এ্যাফারেসিস মেশিন হলে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেয়া সহজ হবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, সেল সেপারেট আর এ্যাফারেসিস এ দু’টি মেশিনই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরি। সম্ভব হলে দু’টি মেশিনই খুলনায় দেয়ার জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে অনুরোধ জানাবেন। না হলে যে কোন একটি মেশিন জরুরি ভিত্তিতে দেয়ার আহবান জানান তিনি।
খুমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ডা: এসএম তুষার আলম বলেন, এ্যাফারেসিস মেশিন হলে রক্ত নষ্ট হবে না। এটি একটি অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের মেশিন। কোন রক্তদাতা একজন রোগীকে রক্ত দিলে সেখান থেকে শুধুমাত্র প্লাজমা আলাদা করে নেয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ রোগীর যা দরকার শুধু সেটুকুই গ্রহণ করা হবে। বাকীসব দাতার শরীরে থেকে যাবে।