নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় কয়েকটি হাওরের অধিকতর নিচু জমির প্রায় ৫০০ একর পরিমাণ বোরো ফসল ভারতীয় ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে ঢলের পানি আসলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ উপজেলার ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসলই তলিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এদিকে, খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এখানে ইতোমধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১১৩ হেক্টর জমির ফসল। গত ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল সন্ধ্যা সময়ের মধ্যে এসব জমি তলিয়েছে। খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কীর্তনখলা হাওর, চুনাই হাওর, বাদিয়ারচর হাওর, টাকটারের হাওর, মনিজান হাওর, লেবরিয়া হাওর, হেমনগর হাওর চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গবদও হাওর, নয়াখাল হওর, গাজীপুর ইউনিয়নের বাগানী হাওর ও ডাকাতখালি হাওরের অধিকতর নিম্নস্থানে ও ফসলরক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা ওই সব তলিয়ে যাওয়া জমির ফসল ছিল দুধ ও দানা পর্যায়ে।খালিয়াজুরী সদরের কৃষক মনির হোসেন জানান, খালিয়াজুরীতে কমপক্ষে ৫০০ একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে তার নিজের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ একর জমির ধান।খালিয়াজুরীর লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক, আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রউফ ও ফুল মিয়া জানান, ঢলের পানিতে তলিয়ে তাদের ১৫ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।খালিয়াজুরী কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঢলের পানি প্রবাহ অব্যাহত রযেছে। পানির এমন প্রবাহ থাকলে সপ্তাহখানের মধ্যেই ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে খালিয়াজুরী উপজেলার সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে যাবে। এ উপজেলায় এবার ২১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত শনিবার সন্ধ্যায় জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে খালিয়াজুরীর ধনু নদীতে ঢল আকারে নামছে। তাই ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত ধনু নদীর পানি বেড়েছে পৌনে ৬ ফুট। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ৩ ফুট।তিনি আরও বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আগামী কয়েকদিনও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। যদি সেখানে বৃষ্টি হয় তবে কয়েক দিনের মধ্যে সেই বৃষ্টির পানি এসে তা ধনু নদীতে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।এদিকে তিনি বলেন, নেত্রকোনার হাওরে এবার ১৮৩ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২৩ কোটি ৬ লাখ টাকার ব্যয় বরাদ্দের এ বাঁধ মজবুত হলেও অতিরিক্ত পানি বেড়ে উপচে পড়লে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা কঠিন হয়ে যাবে।নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট একটি নিয়মের উচ্চতায় প্রতি বছর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এবারও নিয়ম অনুযায়ীই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন অতিরিক্ত মাত্রায় পানি বেড়ে গেলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে পানি ঠেকিয়ে বর্তমানে ঠিকে থাকা ফসল বাঁচাতে। আর ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ফসল মার গেছে সেসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।