/ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানে আরও জোর দিন

তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানে আরও জোর দিন

সম্পাদকীয়

একটি দেশের এগিয়ে যাওয়া বা উন্নয়নের পেছনে সুস্থ্য জাতি অত্যাবশ্যক। সুস্থ্য এবং নিরোগ জাতি তৈরী করা না গেলে কাংঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। অসুস্থ্য মানুষ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। এজন্যই দেশে দেশে সুস্থ্য এবং নিরোগ জনশক্তি তৈরীর উপর জোর দেয়া হয়। বাংলাদেশেও সরকার এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই মানুষ অসুস্থ্য হওয়ার হার কমানো যাচ্ছে না। দিন দিন রোগাক্লান্ত এবং অসুস্থ্য মানুষের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। সরকার প্রচুর টাকা ব্যয় করছে স্বাস্থ্য খাতে। এ খাতের উন্নয়নে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয়ও করা হয়। কিন্তু তার পরও কাজের কাজ হচ্ছে না। এজন্য এখন স্বাস্থ্যশিক্ষার উপরও জোর দেয়া হচ্ছে। খাদ্যাভাস এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে আমাদের দেশে অসংক্রমণ রোগের আধিখ্য দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি খাদ্যাভাস এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে পারলে মানুষ অনেক সুস্থ্য থাকবে বলে জনস্বাস্থ্যবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দেশে অসংক্রমণ রোগের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। এই উচ্চ রক্তচাপ বা হাই বøাডপ্রেসারে প্রতি বছর প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। অথচ কিছু স্বাস্থ্যবিধি, খাদ্যাভাস বা জীবনাচারণে পরিবর্তন আনলে প্রাণঘাতি এ রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। একটি সহযোগী দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তরুণদের মধ্যেও বিশাল একটি অংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। বংশগত কারণের পাশাপাশি অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, কম কায়িক পরিশ্রম ও স্থূলতাসহ নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের হার বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে অষ্টম বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে বিডিএইচএস) সর্বশেষ গবেষণা চালায় ২০১৭-১৮ সালে। ফলাফলে দেখা যায়, ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের হার প্রায় ৪০ শতাংশ, যা ২০১১ সালে ছিল ২৬ শতাংশ। পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়েসের নারীদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। যেখানে পুরুষদের সংখ্যা ৩৪ শতাংশ। ২০১১ সালে এ সংখ্যা ছিল নারীদের ৩২ শতাংশ ও পুরুষদের ১৯ শতাংশ। জরিপে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। ইউনাইটেড হসপিটালের চিফ কার্ডিওলজি কনসালট্যান্ট ডা. এনএএম মোমেনুজ্জামান বলেন, ‘হাইপারটেনশনের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায় না। বংশগতভাবে অনেকের হয়ে থাকে। তবে উচ্চ রক্তচাপ নির্দিষ্ট একটি মাত্রা অতিক্রম করলে হার্ট অ্যাটাকসহ দীর্ঘমেয়াদি কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকলে অন্যান্য রোগেরও ঝুঁকি বাড়ে। যেমন কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে বা স্ট্রোক করতে পারে। এজন্য কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অবশ্যই তা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়া সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।’ উচ্চ রক্তচাপ প্রাথমিক স্তর থেকেই নিরাময়ের প্রচেষ্টা করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ থেকে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে, কিডনি রোগ হতে পারে। এসব রোগীর হৃদরোগ ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ে। অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপের মূল কারণ হলো জেনেটিক। অনেকের ক্ষেত্রে হরমোনাল প্রভাব থাকে। এছাড়া আমাদের যে খাদ্যাভ্যাস, আমরা অনেক রিচ ফুড খাই। এসব খাবারে অনেক পরিমাণে লবণ থাকে। এছাড়া যে মসলা আমরা ব্যবহার করি সেগুলোও প্রেসারের ঝুঁকি বাড়ায়। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অনেকেই কায়িক পরিশ্রম করি না। এগুলোও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।’ রিসার্চ ইন হেলথ সার্ভিস অ্যান্ড রিজিওন্সের করা আরেকটি গবেষণায় উঠে আসে, ২০১১ সালে দেশের শহরাঞ্চলে মোট উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশ (৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ) ছিল তরুণ। ২০১৭-১৮ সালে তা ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের তরুণদের মধ্যেও অস্বাভাবিক হারে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ছে। ২০১১ সালে গ্রামাঞ্চলে মোট উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের ৩৬ শতাংশ ছিল তরুণ, যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে ৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে। আমরা মনে করি, নিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখন মানুষের মধ্যে কায়িক পরিশ্রম অনেক কমে গেছে। যে কারণে বর্তমান তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। নগরায়ণের কারণে আমাদের হাঁটার জায়গা কমে আসছে। দেশের আগামী দিনের কর্ণধর তরুণ জনগোষ্ঠীকে সুস্থ্য এবং কর্মক্ষম অবস্থায় থাকতে হবে। কারণ দেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে সুস্থ্য, সবল, কর্মক্ষম ও যুগের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় পারদর্শী তরুণ জনগোষ্ঠী আমাদের প্রত্যাশিত। সুতরাং তরুণ জনগোষ্ঠীসহ সকল বয়সীদের সুস্থ রাখতে সরকারের চলমান কর্মসূচীগুলিকে আরও বেগবান করতে হবে বলে আমরা মনে করি।