গত কয়েকদিন ধরে তুরস্কের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বোয়াযইচি বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল। নবনিযুক্ত রেক্টর প্রফেসর ড. মেলিহ বুলুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি। সাধারণ একটি ছাত্র বিক্ষোভ হিসেবে শুরু হলেও এটি রূপ নিতে পারে এরদোগান পতনের আন্দোলনে। অন্তত বিরোধী দলগুলোর এমনই আশা।

বোয়াযইচি বিশ্ববিদ্যালয় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

বসফরাস বা বোয়াযইচি বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্কের সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে এদেশের প্রধান তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। ইস্তান্বুলের বিখ্যাত বসফরাস প্রণালির পাশ ঘিরে পাহাড়ের ওপরে সবুজে ঘেরা প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার জায়গার ওপরে অবস্থিত এটি।
একদিকে ওসমানীদের বীরত্বের প্রতীক রুমেলি হিসার দুর্গ অন্যদিকে বসফরাসের ওপড়ে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজ। ইস্তান্বুলের ইউরোপ অংশে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি কয়েকশ বছর ধরে মানুষ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতগলু তাদের মধ্যেই একজন। প্রতি বছর দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।

১৮৩৯ সালে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক সাইরাস হ্যামলিন তার মিশনারি কাজের অংশ হিসেবে সুদূর আমেরিকা থেকে পাড়ি জমান তৎকালীন উসমানীয় সম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমানের ইস্তান্বুলে)। তিনি ছিলেন আমেরিকান হোম মিশনারি সোসাইটি নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রটেস্টান মিশনারি গ্রুপের সদস্য।

ইস্তান্বুলে এসে তিনি সেখানে বালকদের জন্য একটি ধর্মীয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মিশনারি)গড়ে তুলেন। সাথে সাথে দরিদ্র আর্মেনীয়দের সাহায্য করার মাধ্যমে তার মিশনারি কাজ শুরু করেন। একই সাথে ছোট খাট ব্যবসাও করেন। পরবর্তীতে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তুরস্কে ১৩ টি প্রটেস্টান আর্মেনীয় গির্জা তৈরিতে আর্থিক সহযোগিতা করে।

আমেরিকার ব্যবসায়ী ক্রিস্টোফার রবার্ট ১৮২৯ সালে আমেরিকান হোম মিশনারি সোসাইটি নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রটেস্টান মিশনারি গ্রুপের সাথে পরিচিত হন। পরবর্তীতে তৎকালীন ওসমানী সম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমানের ইস্তান্বুলে) পরিচয় হয় আরেক ব্যবাসায়ি এবং (মিশনারি) ধর্ম প্রচারক সাইরাস হ্যামলিনের সাথে। হ্যামলিন তার ধর্ম প্রচারের কাজে ১৮৩৯ সালে ইস্তান্বুলে আসেন।

এই হ্যামলিন মিশনারি সোসাইটি নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রটেস্টান মিশনারি গ্রুপের।

১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময়ে ইস্তান্বুলে বসে হ্যামিলনের দেখা হয় আমেরিকার ব্যবসায়ী ক্রিস্টোফার রবার্টের সাথে। রবার্টকে তিনি উসমানীয় সম্রাজ্যের রাজধানীতে একটি মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং তাকে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠায় অর্থদানে রাজি করান। সে সময় উসমানী সালতানাতে অধিষ্ঠিত ছিলেন সুলতান আব্দুল মেজিদ। তখন ফরাসি বিপ্লবের ধাঁচ তার মসনদেও এসে লেগেছিল। বাধ্য হয়েছিলেন তার সালতানাতে পশ্চিমাদের এবং বিধর্মীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সংস্কার নিয়ে আসতে ।

যাইহোক, মার্কিনী এই দুই মিশনারি তাদের স্কুলের জন্য ১৮৬০ সালে সুলতান আব্দুল মেজিদ-এর দরবারে তদবির করা শুরু করেন। এক বছর পরে আব্দুল মেজিদ মারা গেলে পরবর্তী সুলতান আব্দুল আজিজের দরবারে তদবির শুরু হয়। প্রায় তিন বছর তদবির করার পরে ১৮৬৩ সালে স্কুল করার অনুমতি মিলে।

প্রতিষ্ঠা হয় রবার্ট কলেজ। এটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মার্কিনীদের প্রতিষ্ঠিত প্রথম কোন আমেরিকান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।