/ তেরখাদায় দুই বছর ধরে থমকে আছে সড়ক সংস্কার, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

তেরখাদায় দুই বছর ধরে থমকে আছে সড়ক সংস্কার, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

রাসেল আহমেদ, তেরখাদা (খুলনা): তেরখাদা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ তেরখাদা-উপজেলা সদর-নাচুনিয়া সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল বহু আশার আলো জ্বালিয়ে। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সেই কাজ আর এগোয়নি। রাস্তার একাংশে কিছু খোয়া ফেলে ফেলে রাখা হলেও বাকি অংশে এখন শুধুই ধুলা, কাদা আর বড় বড় গর্ত।

এ অবস্থায় প্রতিদিন যাতায়াত করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, কর্মজীবী মানুষ এবং রোগীবাহী যানবাহনের যাত্রীরা। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি একাধিক গ্রামের সঙ্গে তেরখাদা উপজেলা সদরের প্রধান সংযোগ সড়ক। প্রতিদিন এ পথেই এলাকার শত শত মানুষ চলাচল করেন। অথচ চলাচলের জন্য এখন এটি হয়ে উঠেছে জীবনের ঝুঁকি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যনুযায়ী, এ সড়কের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও কার্পেটিংয়ের জন্য ২ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘মেসার্স আর.এস. ট্রেডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। তবে কয়েকদিন কাজ করার পরই হঠাৎ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তারা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন শিক্ষার্থী জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, “বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে যায়, হাঁটতে গিয়ে প্রায়ই পড়ে যাই। এতে শরীরেও ব্যথা পাই, আবার স্কুলে যেতে ভয়ও লাগে।”

একই সড়কে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন পেশাদার ভ্যানচালক জাহিদ। তিনি বলেন, “রাস্তায় গর্তে পড়ে চাকা আটকে যায়। যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে, আয়ও কমে গেছে।”

স্থানীয় যুবক অনিক শিকদার বলেন, “প্রথম যখন কাজ শুরু হয়েছিল, মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। ভেবেছিলাম এবার দুর্ভোগের শেষ হবে। কিন্তু এখন রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ। কাজ বন্ধ করে রাখায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।”

আরেক তরুণ আরমান খান বলেন, “আগে যেভাবেই হোক রাস্তা দিয়ে চলা যেত। এখন তো খোয়া ফেলে আর কেটে কেটে রেখেছে, হাঁটাও মুশকিল। মানুষ যেন দুর্ভোগে বন্দি হয়ে আছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার মোহাম্মদ সোহেল আর কোনো যোগাযোগ নেই। একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী ভাস্কর মৃধা বলেন, “ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর আমরা বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বর্তমানে প্রকল্পটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে রয়েছে। তবে কবে নাগাদ পুনরায় কাজ শুরু হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।”