/ তেরখাদায় বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, নিধন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মা ও ছোটমাছ

তেরখাদায় বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, নিধন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মা ও ছোটমাছ

মফিজুল ইসলাম জুম্মান, তেরখাদা(খুলনা): প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষার শুরুতে তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রয় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বিক্রি হচ্ছে অবাধে। খাল বিল নদী নালায় পানি আসার সাথে সাথেই তেরখাদা উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার হাটবাজারের সুচতুর দোকানীরা অতি কৌশলে কারেন্ট জাল আমদানি করে তা বিক্রি করছে। কারেন্ট জাল কিনে পেশাদার জেলে ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা বিভিন্ন বিলে জাল ফেলে ছোট বড় সব ধরণের মাছ নিধন করছে।


মাছ আরোহনকারী এবং বিক্রেতারা বলেন, কারেন্ট জালে কোনো মাছই রক্ষা পায়না। কারেন্ট জালে সব শ্রেণির মাছ ধরা পড়ে। ছোট বড় মাঝারি মাছ ধরা পড়ায় সমূলে বিনাশ হচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ। একদিকে মা মাছ ধরা পড়ায় খালে বিলে ডিম দিতে পারছেনা অপরদিকে ছোট মাছ ধরা পড়ায় ছোট মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এমনিতেই বিগত প্রায় ২ যুগেরও বেশী সময় ধরে তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন বিলে দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে।


এক সময় তেরখাদার বিভিন্ন বিলে দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কই, মাগুর, সিংগি, টাকি, শোল, পুটি, স্বরপুটি, রয়না, বোয়াল, টেংরা, পাবদাসহ ইত্যাদি মাছে ভরপুর ছিল। এসব সুস্বাদু মাছের কদরও ছিল খুব। দেশী প্রজাতির এসব মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে তারপর আবার অসাধু কারেন্ট জাল বিক্রেতা অধিক মুনাফায় বিক্রয় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বিক্রি করে ছোট মাছ এবং মা মাছ/ডিম ওয়ালা মাছ নিধনে সহায়তা করছে। আর এই কারেন্ট জাল কিনে সব শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন বিলে ফেলে ধ্বংশ করছে দেশী প্রজাতির মা মাছ/ডিম ওয়ালা মাছ এবং ছোট মাছ।

তেরখাদার মানুষ দেশী প্রজাতির মাছ আগের মত এখন আর সেইভাবে খেতে পায়না। এক সময় খালে বিলে পুকুর জলাশয়ে নদী নালায় দেশী মাছে ভরপুর ছিল। সে সময় রান্নার আধাঘন্টা আগেও খালে বিলে খেপলা জাল ফেলে মাছ ধরে নিয়ে আসছে। আবার সন্ধ্যায় কৈয়ে জাল বিলে ফেলে আসছে। সকালে গিয়ে এক ঝাঁকা মাছ নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে। জেলেদের পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষ জাল ফেলে মাছ ধরতো। এসব দেশী প্রজাতির মাছ এখন গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন নতুন করে কিছু প্রজাতির মাছ বিভিন্ন বিলে দেখা গেলেও কারেন্ট জাল বিক্রেতা ও মাছ শিকারী উভয়ের অসচেনতা ও অজ্ঞতার কারণে ধ্বংশ হচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ।


অসাধু জাল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এলাকার অনেকে বলেছেন, জাল বিক্রেতা/দোকানীদের অনেকেই লোক চক্ষুর অন্তরালে অতি গোপনে জাল বিক্রি করে থাকে। কেউ বা বাড়িতে রেখেও জাল বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ আছে। প্রতিনিয়ত কারেন্ট জাল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নজরদারি থাকলে জাল বিক্রি অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলে অসাধু মাছ শিকারীরা মাছ শিকার/নিধনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। এতে দেশী প্রজাতির মাছের প্রজনন বেড়ে যাবে। বিভিন্ন বিলে আবারও পর্যাপ্ত পরিমানে দেশী মাছ দেখা যাবে।


এদিকে, বিক্রয় নিষিদ্ধ কারেন্টজাল বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের মাঠে নামা দরকার এমন মন্তব্য করেছে এলাকার সচেতন মহল। তাহলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কারেন্টজাল বিক্রেতারা জাল বিক্রিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। মাছ শিকারীরাও কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস্য আহোরণ বন্ধ করে দিবে।
এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন, দেশী প্রজাতির মা মাছ ও ছোটো মাছ নিধন বন্ধে এবং কারেন্ট জাল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, যারা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।