রাসেল আহমেদ, তেরখাদা (খুলনা): তেরখাদা উপজেলার চিত্রা নদী, ভূতিয়ার বিল, বিল বাসুয়াখালীসহ বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে নিষিদ্ধ রিং জাল অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই জাল পরিবেশ এবং দেশীয় জলজ প্রাণি বৈচিত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। নিষিদ্ধ রিং জালের কারণে প্রতিনিয়ত পোনা মাছ, ডিমওয়ালা মা মাছ এবং সদ্য ফোটা মাছের ব্যাপক নিধন ঘটছে। এতে দেশীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং শোল, টাকি, বেলে, ট্যাংরা, কৈ ও বোয়ালসহ বহু দেশীয় মাছের প্রজাতি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের কার্যকর নজরদারির অভাবে রিং জালের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কাটেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ শেখ বলেন, আজ সকালেই তিনি দেখেছেন একজন জেলে প্রায় ১০-১২টি রিং জাল ফেলেছে। যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মিটার। এমন অবস্থা প্রতিদিনই চলছে। অথচ এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
সচেতন এলাকাবাসী জানান, শুধু নিষেধাজ্ঞা জারি করলেই রিং জালের ব্যবহার বন্ধ হবে না। মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত অভিযান,জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং বিক্রয়-বিতরণে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। তারা বলেন, খাল-বিলে মাছ ধরার দোকানগুলোতে রিং জালের বিক্রয় বন্ধ করতে হবে এবং জালের দোকানগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। পাশাপাশি জলাশয়গুলোতে নিয়মিত টহল দিয়ে জাল জব্দ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে রিং জাল নিষিদ্ধ করতে আইন প্রণয়ন করাও জরুরি।
তারা আরও অভিযোগ করেছেন যে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল খাল-বিল দখল করে বাণিজ্যিক মাছচাষ করছেন, যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এই বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু বলেন, প্রতি বছর পোনামাছের এই ব্যাপক নিধনের কারণে দেশীয় মাছের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। যদি এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশীয় মাছের স্বাদ ভুলে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেরখাদা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন এবং রিং জালের বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, মাঠ পর্যায়ে এসব অভিযানের যথাযথ কার্যকারিতা দেখা যায় না। তারা বলছেন, জলজ সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ জরুরি, নইলে দেশের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দেশীয় মাছ এক সময় বিলুপ্তির মুখে পড়বে।