/ তেরখাদার বারাসাত গ্রামে থামছেই না সহিংসতা,স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবি

তেরখাদার বারাসাত গ্রামে থামছেই না সহিংসতা,স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবি

রাসেল আহমেদ,তেরখাদা (খুলনা): তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামে সম্প্রতি একাধিক হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার ফলে এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন এবং জরুরি ভিত্তিতে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে বারাসাত গ্রামে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। আবারও সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। যদিও নৌবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বারাসাতের পাশে রয়েছে হরিদাসবাটী ও চালিতাতলা নামে আরও দুইটি গ্রাম। ওই গ্রামের মানুষও বারাসাত গ্রামের সাথে মিলেমিশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বর্তমানে গোটা বারাসাত হরিদাসবাটী ও চালিতাতলা এলাকা জুড়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দ সংঘাত চলছে।


স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে বারাসাত গ্রামে বিবাদমান দু’টি গ্রুপের সংঘর্ষ,সংঘাত ও লুটপাটের মত ঘটনা চলে আসছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতি বছর কয়েকদফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জমাজমি, অর্থ সম্পদ এবং নারী ঘটিত কোনো বিষয় নয়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা। যুগ যুগ বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা চলে আসলেও পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা আজও পরিলক্ষিত হয়নি। যুগ যুগ ধরে থানা পুলিশ কোনোমতে সংঘর্ষ সংঘাত দমিয়ে রাখলেও নির্মূল করতে পারেনি আজও। ফলে প্রতিবছরই অতীতের ঐতিহ্য ধরে রেখে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বারাসাতবাসী তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। কবে কখন সংঘর্ষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। সংঘর্ষের মত জীবন বিধ্বংশী কর্মকাণ্ডেড জড়িয়ে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বারাসাত গ্রাম শিক্ষা সংস্কৃতির দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছে। কতিপয় ব্যক্তির খামখেয়ালীপনার কারণে স্বপ্নের বারাসাত এখন অবহেলিত বারাসাতে রূপান্তরিত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিবদমান গ্রুপের অনেকেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছে আবার পঙ্গুত্ববরণ করে অনেকে অসহাযত্ব এবং দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানার দূরত্বের কারণে পুলিশের তাৎক্ষণিক উপস্থিতি অনেক সময় সম্ভব হয় না, ফলে বিবাদ বড় ধরনের সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে। তারা মনে করছেন,একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে এবং অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। সর্বশেষ গত ১৩ জুন বিবদমান দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দেশী তৈরি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষই ঝাপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষ ৫৬ জন আহত হয়। বারাসাত এলাকায় সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে থানা পুলিশ ও নৌবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনার সাথে জড়িত ১৯জন কে গ্রেপ্তার করে। যৌথবাহিনী বারাসাত গ্রামে তল্লাসী চালিয়ে দেশী তৈরী বিপুল পরিমাণ দেশী তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করে।

বারাসাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কেএম আলমগীর হোসেন বলেন, “এলাকায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতির জন্য একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন অত্যন্ত জরুরি।আমরা প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অনেকবার দাবি জানিয়েছি।”তেরখাদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”এদিকে এলাকাবাসী দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন, যাতে পুরো বারাসাত গ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে।