রাসেল আহমেদ,তেরখাদা (খুলনা): মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারের নেওয়া মোবাইল ফোনে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন কার্যত অচল। স্থানীয় জনগণের অধিকাংশই জানেন না এই সেবার কথা। প্রচার-প্রচারণার অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি উদ্যোগটি সাধারণ মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে।
২০০৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারাদেশের ৪১৮টি জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোবাইল ফোনে চিকিৎসা পরামর্শ ও জরুরি সেবা দেওয়ার কার্যক্রম চালু হয়। প্রতিটি কমপ্লেক্সে একটি নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া কথা।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নম্বরটি জরুরি বিভাগে দৃশ্যমান রাখা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করার কথা থাকলেও তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেই নির্দেশনা মানা হয়নি। উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শামীম আহমেদ রমিজ জানিয়েছেন, তিনি এই মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সম্পর্কে কখনো শুনেননি। স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এমন কোনো তথ্যও চোখে পড়ে না বলে জানান তিনি। তার মতে, এই সেবা প্রচার না হওয়ায় সাধারণ মানুষ জানে না এবং কোনো কাজে লাগছে না।
উপজেলা বিএনপির নেতা শেখ আজিজুর রহমান আজিবর বলেন, তিনি দীর্ঘদিন উপজেলা সদরে বসবাস করলেও মোবাইলে চিকিৎসাসেবার বিষয়ে কখনো অবহিত হননি। তার মতে, সেবাটি সম্পর্কে গ্রামীণ জনপদের মানুষ আরও অন্ধকারে আছে। তিনি বিষয়টিকে প্রচারণার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা হিসেবে দেখেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুন্নবী তুহিন জানিয়েছেন, মোবাইলে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনো চালু রয়েছে। প্রতিদিন যে চিকিৎসক দায়িত্বে থাকেন, তাঁর কাছেই মোবাইল ফোনটি থাকে। তবে ডাক্তার সংকটের কারণে অনেক সময় ফোন রিসিভ করা সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি। একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, যেসব নির্দেশনা মোতাবেক নম্বরটি জনগণের সামনে টাঙিয়ে রাখার কথা এবং জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের কথা বলা হয়েছে, তার কিছুই কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং সেই মোবাইল নম্বরটি কখনো কখনো শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এই উদ্যোগ সঠিকভাবে বান্তবায়ন করতে হলে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে মোবাইল নম্বরটিকে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন, ডাক্তার সংকট দূরকরণ এবং ফোন রিসিভ নিশ্চিত করতে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। সরকারের একটি জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ শুধু প্রচার ও ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকছে এমন চিত্রই উঠে এসেছে তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাস্তবতায়।