আযমখান সরকারি কমার্স কলেজ
স্টাফ রিপোর্টার ঃ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ফি কমানো এবং শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের নামে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা আদায়ের দাবিতে নগরীর আযমখান সরকারি কমার্স কলেজে ফরমপূরণ কার্যক্রম দুই ঘণ্টা বন্ধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার চূড়ান্ত বর্ষের ফরমপূরণের প্রথম দিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ফরমপূরণ বন্ধ ছিলো। এতে ভোগান্তির শিকার হন দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা।
পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বৈধ অনুমতি না পেয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৪০০ টাকা করে আদায় শুরু করে ছাত্ররা। প্রথম দিন সোমবার ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল দাবি আদায়ের পুরো কার্যক্রমে কৌশলী ভূমিকায় দেখা গেছে ছাত্রলীগ নেতাদের। পুরো কার্যক্রম পরিচালনা হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ফি কমানোর দাবিকে সামনে রেখে। এমনকি অধ্যক্ষের কাছে যে দাবি দেওয়া হয়েছে, সেখানেও ফরম পূরণ ফি কমানোর দাবির কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ বেশিরভাগ আলোচনা হয়েছে অতিরিক্ত ওই ৪০০ টাকা নিয়ে। অবশ্য বাড়তি টাকা আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা। কলেজ প্রশাসনও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে।
কলেজ থেকে জানা গেছে, গতকাল সোমবার থেকে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরমপূরণ শুরু হয়েছে। এবছর সর্বনিম্ন ফি রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ৩৫ টাকা। কয়েকদিন ধরে এর সঙ্গে শিক্ষা সমাপনীর জন্য বাড়তি আরও ৪০০ টাকা আদায়ের দাবি জানিয়েছে আসছিলো ছাত্র নেতারা। এনিয়ে দৈনিক পূর্বাঞ্চলে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে করোনকালীন সময়ে বাড়তি টাকা আদায় করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল ১০টা থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টাকা জমা নেওয়া কার্যক্রম চলে। এরপরই টাকা গ্রহণ ও ফরমপূরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে যান ছাত্রলীগ নেতারা। দীর্ঘ আলোচনার পর কলেজের অধ্যক্ষ তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠান এবং পুনরায় ফরমপূরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আলোচনায় ৩ শর্তে তাদের টাকা আদায়ের অলিখিত অনুমতি দেওয়া হয়। শর্তগুলো হচ্ছে-শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থাপনায় টাকা আদায় হবে, এর সঙ্গে কলেজের কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না এবং টাকা দিতে কোনো শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা যাবে না।
তারা জানান, প্রথম দিন কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয়নি। আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ফরমপূরণ করা হবে। হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করার আশংকা রয়েছে। এজন্য এই দুটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকের শক্ত ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কমার্স কলেজের ৮০ ভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের। ফরমপূরণের ৬ হাজার টাকা জোগাড় করতে অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় আরও ৪০০ টাকা জোগাড় করা তাদের জন্য কষ্টকর। টাকার অভাবে গতকাল অনেকে ফরমপূরণ করতে পারেনি। লজ্জায় তারা বিষয়টি কাউকে বলতেও পারেননি। তারা ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের উচ্চবিত্ত পরিবারের সহপাঠী যদি অনুষ্ঠান করতেও চায়, সেটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা উচিত। এখন তাদের আনন্দ, আমাদের কষ্টের কারণ।
এছাড়া বিগত দিনগুলোতে শিক্ষা সমাপনী নামের টাকা আদায় এবং উদযাপনের নামে সিংহভাগ অর্থ ভাগবাটোয়ারার যে অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে-সেটাও স্থায়ীভাবে বন্ধ করা উচিত। এজন্য মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহানারা বলেন, কিছু শিক্ষার্থী এসেছিলো। তাদের বলেছি, ফরমপূরণে ফি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাড়িয়েছে, এটা কমানো সম্ভব নয়। আর কলেজের পক্ষ থেকে কোনো অতিরিক্ত একটাকাও আদায় করা সম্ভব না। কোনো অনুষ্ঠানও হবে না। শিক্ষার্থীরা নিজেরা যদি টাকা আদায় করে বা কোনো অনুষ্ঠান করে এটা তাদের বিষয়। এখানে কলেজের কোনো ভূমিকা নেই। তাদের সঙ্গে কলেজের কোনো সম্পর্ক নেই।
কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। গতকালকের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বায়েজিদ সিনা বলেন, ফরম পূরণ কার্যক্রম কখনো বন্ধ ছিলো না। শিক্ষা সমাপনীর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
মহানগর ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মশিউর রহমান বাদশা বলেন, শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজক সাধারণ শিক্ষার্থীরা, তারাই সব করছে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো ভূমিকা নেই।