ঠিকাদারের মেয়াদ
শেষ হচ্ছে আজ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ বুধবার। কিন্তু এখনও সরানো যায়নি বৈদ্যুতিক পোলগুলো। যে কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে শের-এ-বাংলা রোডের সম্প্রসারণ কাজ।
এদিকে, নগরীর ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার ক্ষেত্রে ওজোপাডিকো এবং সড়ক ও জনপথের মধ্যে চলছে সমন্বয়হীনতা। বৈদ্যুতিক পোল সরাতে গিয়ে কয়েক জায়গায় জমির মালিকদের বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন এমন অভিযোগ ঠিকাদারের। এ প্রসঙ্গে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ বলছেন, সওজ কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। পক্ষান্তরে সওজ কর্তৃপক্ষ বলছেন এটি প্রশাসনিক বিষয়। তাছাড়া ওজোপাডিকোর চাহিদা অনুযায়ী এখনও সওজ থেকে অর্থও প্রদান করা হয়নি এমন দাবিও ওজোপাডিকোর। যদিও অর্থ না দেয়া হলেও সেটি কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নয় বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খুড়ে রাখা শের-এ-বাংলা রোড দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।
ওজোপাডিকোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তিতাস ব্রাদার্সের অংশীদার মো: রকিবুল ইসলাম বলেন, শের-এ-বাংলা রোড সম্প্রসারণ কাজের জন্য বৈদ্যুতিক পোল সরাতে গত ৮ জুন তারা কার্যাদেশ পান। সেই থেকেই তারা কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে সবগুলো পোল তুলে নতুন ১৫ মিটারের পোল বসানো হয়। কিন্তু ওই পোলে বৈদ্যুতিক লাইন টানতে গিয়েই কয়েক জায়গায় জমির মালিকদের পক্ষ থেকে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কারণে কাজটি যথা সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আরও এক মাসের সময় চেয়ে ওজোপাডিকোর কাছে আবেদন করা হয়েছে। হয়তো সময় বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৩৩ কেভি, ১১ কেভি এবং ০.৪ কেভি এই তিন ধরনের লাইন রয়েছে। বর্তমানে সড়কটিতে ১২ মিটারের পোল থাকলেও নতুন করে ১৫ মিটার উঁ”ু পোল বসানো হয়।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) মো: আবু হাসান বলেন, নগরীর নিরালা সংলগ্ন কয়েকটি স্থানে পোল দিয়ে লাইন টানতে বাঁধা দেয়া হলে ওজোপাডিকো ও সওজের পৃথক টিম সম্প্রতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। যদিও লাইন টানার জন্য জায়গা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে হবে সওজকে। তার পরেও ওজোপাডিকো চেষ্টা করছে। তাছাড়া লাইন টানার ক্ষেত্রে শার্ট ডাউন দিতে গিয়েও অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে বিশেষ কিছু দিবসকে সামনে রেখে সব সময় শার্ট ডাউন দেয়া যায় না। সব মিলিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজটির ক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সওজের কাছে সাড়ে চার কোটি টাকা দাবি করা হলেও তারা দিয়েছে মাত্র ৯৭ লাখ টাকা। তার পরেও সিটি মেয়রের অনুরোধে তারা অন্য একটি প্রকল্প থেকে মালামাল সরবরাহ করেছেন। যার আলোকে সওজের কাছে তাদের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা পাওনা থাকলেও তারা টাকার জন্য কাজ বন্ধ করেননি।
পক্ষান্তরে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ওজোপাডিকো প্রথমে তাদের কাছে ৯৭ লাখ টাকার চাহিদা দেয়। এরপর হঠাৎ করে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়। তাছাড়া নতুন বৈদ্যুতিক পোল বসানো হলেও সে ক্ষেত্রে সওজের অনুমতি নেয়া হয়নি। তাদেরকে না জানিয়েই বাড়তি সাড়ে তিন কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে। যেটি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্যও জানেন। এছাড়া জমির মালিকদের বাঁধার ব্যাপারে তিনি বলেন, এজন্য এককভাবে সওজকে দায়ী করা যাবে না। এজন্য প্রশাসনিক সহায়তা নেয়া যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, শের-এ-বাংলা রোড সম্প্রসারণ কাজের জন্য কয়েকটি জায়গায় বাঁধা দেয়া হলে তারা সেখানে গিয়ে পরিদর্শন করেছেন। সিটি কলেজের মজিদ ছাত্রাবাসের সামনে ইতোমধ্যে পোল বসানো হয়েছে। বাকী যে কয়েকটি জায়গায় এখনও বাঁধা দেয়া হচ্ছে সেটি দ্রুত সমাধান না হলে তাদেরকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
অপরদিকে, জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে ওজোপাডিকো এবং সড়ক ও জনপথ উভয় সংস্থাকে দায়ী করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’র খুলনা মহানগর কমিটির সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব। তিনি বলেন, প্রথমত: ওজোপাডিকো সওজের কাছে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে, সওজ কর্তৃপক্ষও এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করে সমন্বয়ের মাধ্যমে আগে সব বিষয়ে সমাধান করে তারপর কাজটি শুরু করা উচিত ছিল। কিন্তু সওজ আগে কাজ শুরু করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এখন দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি করেছে। এভাবে দীর্ঘসূত্রতার মাধ্যমে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক সংস্কারের কথা বলে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর অবসান চান তিনি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, যে গতি নিয়ে শের-এ-বাংলা রোডের কাজ শুরু হয়েছিল শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক পোল সরাতে গিয়ে তা থমকে যায়। এটি নগরবাসির জন্য আর একটি দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে শের-এ-বাংলা রোড চার লেনে উন্নীতকরণ জরুরী। সরকারও এটিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতার দায়ভার এখন জনসাধারণকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনিও এর দ্রুত অবসান দাবি করেন।
উল্লেখ্য, নগরীর ময়লাপোতা থেকে শুরু করে নিরালা, গল্লামারী ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি ২২ দশমিক ১ মিটার (৭৫ ফুট) চওড়া হবে। সড়কের মূল অংশটির কার্পেটিং হবে ১৮ দশমিক পাঁচ মিটার। পরে এক দশমিক পাঁচ মিটার করে দু’পাশে ড্রেন তৈরি হবে। ওই ড্রেনের উপর স্লাব বসিয়ে সেটি ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আগামী বছর(২০২২ সাল) জুন মাসের মধ্যে সড়কের কাজটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক পোল সরাতেই লেগে যাচ্ছে ছয়মাস। কেননা ইতোমধ্যে যেসব স্থাপনা ভেঙ্গে রাস্তাটি চওড়া করা হয়েছিল তার কিছু জায়গার ফুটপাত আবারো দখল হয়ে গেছে। বিশেষ করে গল্লামারী বাজার এলাকায় দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র।