স্টাফ রিপোর্টা : দু’দিনের ব্যবধানে খুলনার পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার নদী থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। পরপর তিনটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়ে উঠেছে। পাইকগাছায় নিহত দুজন খুলনা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় জোরালো হচ্ছে সন্দেহ এদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না।
আমাদের পাইকগাছ অফিস জানায়, গতকাল শুক্রবার সকালে পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা বাজারসংলগ্ন শিবসা নদীর চর থেকে ইকরাম হোসেন (৪৭) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইকরাম খুলনা শহরের বানরগাতি এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেনের মেঝো ছেলে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সোনাডাঙ্গা মহসিন উদ্দিন সড়কে বসবাস করতেন।
পাইকগাছা নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সবুর হোসেন জানান, সকালে স্থানীয়রা নদীর চরে একটি মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত করেন।
এর মাত্র একদিন আগে, বৃহস্পতিবার সকালে একই উপজেলার দেলুটি নদী থেকে রানা খলিফা (৪০) নামের আরেক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত রানা খলিফাও খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত রানা ও ইকরামসহ খুলনার আরও কয়েকজন ব্যক্তি সম্প্রতি একসঙ্গে ছিলেন। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে স্থানীয়দের আশঙ্কা নদী থেকে আরও মরদেহ উদ্ধারের খবর সামনে আসতে পারে।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ বলেন, দুটি মরদেহের শরীরে দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, দাকোপ(খুলনা) জানান, একইদিন দুপুরে খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আশিষ সরকার (৫৪) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ। নিহত আশিষ স্থানীয় মৃত নির্মল সরকারের ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আশিষ সরকার গত ১৪ অক্টোবর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন স্ত্রী কমল সরকার দাকোপ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শুক্রবার দুপুরে স্থানীয়রা নদীতে ভাসমান একটি বস্তা দেখতে পেয়ে সন্দেহবশত সেটি তীরে টেনে আনেন। বস্তা খুলে দেখা যায়, ভেতরে আশিষ সরকারের মরদেহ।
দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, লাশটি বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, তিনটি মরদেহই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। ধারাবাহিকভাবে একাধিক নদী থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সম্প্রতি পাইকগাছা ও দাকোপ এলাকায় বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর সম্পর্ক আছে কি না, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।