কুয়েটে বঙ্গবন্ধু কর্নার

এ এইচ হিমালয় ঃ দুর্লভ সব আলোকচিত্র। সেখানে সাদাকালো ফ্রেমে আলো-ছায়ার মাঝে তুলে ধরা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, কলেজ জীবন, ৫৪ এর নির্বাচন থেকে শুরু করে আন্দোলন সংগ্রাম, দেশ গঠন এবং ঘাতকের বুলেটে একটি ইতিহাসের সমাপ্তির দৃশ্য।
এছাড়া স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল, দেশি-বিদেশী পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ সময়কার প্রকাশিত সংবাদের ছবি ও আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে সেখানে। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা বেশকিছু চিঠি, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বিভিন্ন বই।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বঙ্গবন্ধু কর্নারের দৃশ্য এগুলো। এখানে আলোকচিত্র ও শিল্পীর কারুকাজে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ইতিহাস। প্রায় এক বছর কাজ করার পর আজ ১৫ ডিসেম্বর খুলে দেওয়া হচ্ছে কর্নারটি। বঙ্গবন্ধুর এতো আলোকচিত্র এবং ইতিহাসের দুর্লভ এতো দলিল খুলনার অন্য কোথাও নেই।
কুয়েটে প্রবেশ করতে চোখে পড়বে বিশাল ‘ছাত্র কল্যাণ কেন্দ্র’। এর নিচ তলাতেই বঙ্গবন্ধু কর্নারের অবস্থান। দূর থেকেই চোখে পড়ে কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা ৭ মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তৈরি বিশাল শিল্পকর্ম।
ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় তিন শতাধিক আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তি জীবন, রাষ্ট্রপরিচালনা সব পর্যায়ের ফটো বায়োগ্রাফি দিয়ে কেন্দ্রটি সাজানো হয়েছে। এছাড়া সাল অনুয়ায়ী জীবনী ছবির নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রে প্রবেশমুখে রয়েছে ‘জনকের ডাকে জাতির মুক্তি’ শিরোণামে একটি শিল্পকর্ম। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে পৃথকটি তিনটি মেটালের শিল্প কর্ম। করিডোরে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি প্রতিকৃতির সঙ্গে জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন উপদেশ তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে হাতে আকা বঙ্গবন্ধুর ৩টি পোট্রেট। কেন্দ্রের মধ্যে ছোট একটি লাইব্রেরি রয়েছে। তবে প্রবেশদ্বারের সামনেই ছাত্র কল্যাণ কেন্দ্র উদ্বোধনের বিশাল ফলক বঙ্গবন্ধু কর্নারের সৌন্দর্য কিছুটা ম্লান করছে। ফলক ৩টি অন্যত্র স্থানান্তর করলে সৌন্দর্য আরও বাড়বে।
কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আসলাম পারভেজ জানান, কুয়েটে একটি বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরির জন্য ইউজিসির কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। ইউজিসি কুয়েটকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। দায়সারাভাবে কিছু না করে শিক্ষার্থীরা যাতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে এজন্য পূর্ণাঙ্গ এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি কর্নার তৈরির পরিকল্পনা করে কুয়েট প্রশাসন। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী আনিস মামুনকে। এখন পর্যন্ত এই কাজে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইউজিসির ৩ লাখ বাদে বাকি অর্থ কুয়েট কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করছে।
কিউরেটরের দায়িত্ব থাকা শিল্পী আনিস মামুন বলেন, সময়ের গুরুত্ব অনুযায়ী কিছু ছবি ছোট, কিছু বড় করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক মুহূর্তের অনুভূতি দশনার্থীর মাঝে জাগিয়ে ওঠাতে দেয়ালজুড়ে টানানা হয়েছে ৭ মার্চ ভাষণের ছবি। বঙ্গবন্ধু কেন্দ্র ঘুরেই একজন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিতে পারবেন।
কাজ চলা অবস্থায় কর্নার ঘুরে দেখছিলেন কুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট স্নাতকোত্তরের ছাত্র সোহেল বিশ্বাস। পূর্বাঞ্চলকে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য এটি অসাধারণ উদ্যোগ। তিনি বলেন, সারাদেশে নাম সর্বস্ব বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কুয়েটের বঙ্গবন্ধু কর্নার একটি মডেল হতে পারে।
কুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী এ বি এম মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক এবং অবিচ্ছেদ্য। বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হলে আগে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য এই কর্নারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বঙ্গবন্ধু কর্নারের মাধ্যমে কুয়েট শিক্ষার্থীরা নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে।