দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ১০০টির মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৯৩ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের। বেসরকারী খাতে অনুমোদন পেয়েছে ১১, যার মধ্যে ৮টি চালু হয়েছে। এই বিনিয়োগে দেশের শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ২০৩০ সাল নাগাদ ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের প্রায় ১ হাজার ৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। দেশের সর্ববৃহৎ পরিকল্পিত ও আধুনিক শিল্পাঞ্চল হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের এ পর্যন্ত ২০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের ১৭ বিলিয়ন ও বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের ৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুখবর দিচ্ছে সরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এখন পর্যন্ত ১৫১টি দেশী-বিদেশী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোন্ডা মটরস, সুমিটোমো, নিপ্পন, এশিয়ান পেইন্টস ও বার্জার পেইন্টস, আদানি, উইলমার, ইয়াবাং, জিনদুন, সিয়াম গ্রুপ, টিআইসি গ্রুপ, ইউনিলিভার, সাকাতা ইনক্স ও চায়না হারবার অন্যতম। প্রস্তাবিত প্রায় ৪ দশমিক ৮০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্যে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন (০.৫৫ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে জাপান, চীন, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নেদারল্যান্ডস উল্লেখযোগ্য। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সম্প্রতি বলেন, বিনিয়োগ প্রস্তাবের বাইরেও অনেক বিশ্বখ্যাত বিদেশী প্রতিষ্ঠান বড় বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে তাদের এই আগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পরিকল্পিত শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করতে বেজা ইতোমধ্যে আটটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে শিল্প স্থাপনের উপযুক্ত করেছে। এগুলো হলো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের আওতাধীন মীরসরাই-২-এ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই-২বি অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং এসবিজি অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের অনেক উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন তাদের শিল্প ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিজিএমইএ গার্মেন্টস পার্ক ও পিপিপি জোন এবং ৫৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ পর্যন্ত ৬,০৭৭ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সম্ভাব্য কর্মসংস্থান (বিজিএমইএ গার্মেন্টস পার্ক, বেপজা ও এসবিজি ইকোনমিক জোনসহ) প্রায় ৭ লাখ। চীনা জুজু জিনয়ুয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেডের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জিনয়ুয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার মীরসরাই, সীতাকুন্ড ও সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি প্রতিষ্ঠান তাদের চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনী ঘিরে ৩০ হাজার একর জমি গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। সেখানেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। বেজার হিসাবে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রস্তাব ১ হাজার ২৩৯ কোটি ডলারের। এতে জমি নিয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান। মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি নিয়েছে ২টি প্রতিষ্ঠান। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ২৪৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের পুরো জমি নিয়ে নিয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠান। তাদের মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব ১৩১ কোটি ডলার। বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৬টিতে বিনিয়োগকারীরা কারখানা করছে। আমরা বেজার এই অগ্রগতির সাফল্য কামনা করি।