খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি
এড. মোঃ সাইফুল ইসলাম
* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১৯ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, দেশের শ্রেষ্ট অর্জনের নাম পদ্মাসেতু। এ সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ যাতায়াতের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে এটি যেমন ঠিক সাথে সাথে দেশের অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। জাতীয়ভাবে দেশের জিডিপি দেড় থেকে দুই শতাংশ বাড়বে। সেই সাথে হবে দারিদ্র বিমোনচনও। পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের আন্দোলনের ফসল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতুর জন্য খুলনাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, মিছিল করেছে এমনকি রাতেও অবস্থান করেছে। অর্থাৎ খুলনার মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল প্রধানমন্ত্রী সেটি বাস্তবায়ন করে প্রমাণ করেছেন তিনি এদেশের মানুষের সাথে আছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আর বাকী ১৯দিন। এই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে তিনি দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, এটি শুধু যাতায়াতের একটি সেুত নয়, এটি বহুমুখী সেতু। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯০ শতাংশ পণ্য রপ্তানী হলেও মংলা থেকে হয় মাত্র ১০ শতাংশ। আর পদ্মাসেতু চালু হলে মংলা থেকে রপ্তানী হবে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পণ্য। সেই সাথে মংলা বন্দর থেকে গার্মেন্টস পণ্যও রপ্তানী হবে। যা এখন চট্টগ্রাম থেকে শতভাগ রপ্তানী হয়। এর ফলে মংলা বন্দরে জাহাজ সংখ্যা বাড়বে। এতোদিন বন্দরকে কেন্দ্র করেই চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে আসছিল। যেটি এখন মংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে খুলনাঞ্চলে হবে। ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। নতুন করে পরিকল্পনা নিয়ে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে বিপুল পরিমাণ শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাড়বে কর্মসংস্থান। যেটি দারিদ্র বিমোচনে অনেকটা সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগেই মংলা বন্দরের জেটি সম্প্রসারণ কাজ চলছে, বন্দরের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও চলছে।
খুলনা-মংলা রেল লাইনের কাজ শীঘ্রই শেষ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে ভারত ও নেপালের সাথে বাণিজ্যের নতুন দিগন্তের উম্মোচন হবে। এগিয়ে যাবে বিমান বন্দরের কাজও। আসবে নতুন নতুন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। সুন্দরবন, খানজাহান(রহ:) এর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী ষাট গম্বুজ কেন্দ্রিক পর্যটনের স্বর্ণদুয়ারও খুলে যাবে। সব মিলিয়ে খুলনার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণের।
যে কোন উন্নয়নের জন্য তিনটি শর্তের কথা তুলে ধরে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, যোগাযোগ, জ¦ালানী ও আবাসন হলেই ওই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব। পদ্মাসেতুর মধ্যদিয়ে যেমন যোগাযোগ নিশ্চিত হতে যাচ্ছে তেমনি এর সাথে এ অঞ্চলের আরও অনেক সড়ক সম্প্রসারণ ও নতুন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জ¦ালানীর ক্ষেত্রে রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে এবং গ্যাস লাইনও আসছে। আর পদ্মা সেতুকে ঘিরেই এ অঞ্চলে নতুন নতুন পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে খুলনাঞ্চলই এক সময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে নেতৃত্ব দেবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগকে ম্লান করে দিতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিশ^ব্যাংক এবং একজন নোবেল বিজয়ীকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র শুরু করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন অর্থ বরাদ্দই হয়নি তখন কিভাবে দুর্নীতি হয় ? সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করলেও তার কথা মানা হয়নি। পরে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীকে অব্যাহতি এবং অর্থ উপদেষ্টাকে ছুটি দিয়ে পদ্মাসেতুর কাজ করা হয়। এর পরও বিশ^ব্যাংক ছাড় দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কারণে নিজস্ব অর্থায়নেই হয় পদ্মা সেতুর কাজ।
যদিও বিশ^ব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ করার বিষয়ে অনেকেই শংকিত ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং সেনা বাহিনীর সঠিক তদারকির মধ্যদিয়ে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। যেটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
আমাজানের পর বিশে^র সবচেয়ে খর¯্রােতা নদী পদ্মায় নির্মিত এ সেতুর রয়েছে অনেক গুনাবলী এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪শ’ মিটার স্টিলের পাইল ষ্ট্রাকচার। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার বলা হলেও দু’পাড় মিলিয়ে সর্বমোট নয় কিলোমিটারের এ সেতুই হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু।
পদ্মা সেতুর নামের ব্যপারেও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অনেকটা উদার উল্লেখ করে এড. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে এ সেতুর নামকরণ শেখ হাসিনার নামে করার প্রস্তাব করা হলেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু পদ্মা নামেই করার ব্যাপারে মত দিয়েছেন এবং পদ্মা সেতু নামেই আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ২৫ জুন ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। এর মধ্যদিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যে পরির্তন হবে।
খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে এড. সাইফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যের নগরী খুলনা যেমন পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে তেমনি একাধিক বিশ^বিদ্যালয় থাকায় এটি শিক্ষার নগরীতেও পরিণত হয়েছে। এখন নতুন সংযুক্তি পদ্মা সেতুকে নিয়ে আগামী দিনের পথচলা শুরু হতে যাচ্ছে।
পদ্মাপাড়েই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতা, দৃঢ়তা, মূল্যবোধ আর সততার জন্যই যেমন চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে তেমনি নতুন পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। রামপালের বিমান বন্দরের কাজও দ্রুত শেষ হবে বলেও আশা করেন তিনি।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ উচ্চ আদালতের সুফল ভোগ করবে উল্লেখ করে আইনজীবী সমিতির এ নেতা বলেন, পদ্মা নদীর বাঁধার কারণে আগে এ অঞ্চলের বিচার প্রত্যাশীদের এমনকি অনেক সময় আইনজীবীদেরও বিচার প্রত্যাশীদের সহযোগিতা দিতে ঢাকায় গিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। সেটির আর এখন প্রয়োজন হবে না। এখন দিনে দিনেই ঢাকায় গিয়ে আদালতের কাজ সেরে খুলনায় ফিরে আসা যাবে। অর্থাৎ শুধু যে ব্যবসায়ী, চাকরীজীবীরা সুবিধা পাবেন সেটি নয়, আইনজীবী ও বিচার প্রত্যাশীরাও পাবেন পদ্মা সেতুর সুফল।
পদ্মা সেতু চালু হলে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের গুরুত্ব মোটেই কমবে না উল্লেখ করে এড. সাইফুল ইসলাম বলেন, বরং এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। কেননা, মংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নৌ ও স্থল উভয় পথেই চাপ বাড়বে। সুতরাং ২৫ জুনকে সামনে রেখে যেমন পরিবহন ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তেমনি নৌ-পথেও যানবাহন বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।