প্রাথমিকভাবে যাচ্ছে খুলনা ও সাতক্ষীরা
মেডিকেলের কাজ, নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে দেশের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ চলে যাচ্ছে স্বাস্থ্য পকৌশল অধিদপ্তরের হাতে। প্রাথমিকভাবে খুলনা ও সাতক্ষীরার দু’টি বড় প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকান্ড করার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যদিয়ে দূর হচ্ছে স্বাস্থ্য এবং পূর্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা। তবে এ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গণপূর্ত অধিদপ্তরের স্থানীয় একজন কর্মকর্তার দাবি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড করার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এজন্য হঠাৎ করে এমন নির্দেশনায় উন্নয়ন কর্মকান্ডে কিছুটা বিঘœ ঘটতে পারে বলেও তার আশংকা। যদিও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলছেন, পূর্ত বিভাগের এমন মন্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। কেননা, ইতোমধ্যেই দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্মাণ অধিশাখার উপসচিব মুহাম্মদ শাহাদত খন্দকার স্বাক্ষরিত গত ৫ সেপ্টেম্বরের এক পত্রে বলা হয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেইনট্যানেন্স খাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। উক্ত দু’টি হাসপাতালের পরিচালকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেও পত্রে উল্লেখ রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশের মধ্যদিয়ে খুলনা ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেইনটেন্যান্সসহ যাবতীয় কর্মকান্ডে শৃংখলা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে কাজে কোন ত্রুটি হলে আগে যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানাতে হতো এখন আর তেমনটি প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ আগে দু’টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা ছিল এখন আর সেটি থাকবে না বলেও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান দু’টির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর, খুলনা-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নাসির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই পত্রের বিষয়টি তিনি অবগত। কিন্তু পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এখনও পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি। বর্তমানে খুলনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় ক্যান্সার হাসপাতাল, বিভাগীয় শিশু হাসপাতালসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু থেকেই গণপূর্ত বিভাগ করেছে। সুতরাং গণপূর্ত বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ডে রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। যেহেতু হাসপাতালগুলোর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গণপূর্ত বিভাগ অবগত সেহেতু কোথায় এর পয়:নিষ্কাশন লাইন, কোথায় পানির লাইন এসব কিছুই তাদের জানা। এজন্য এর মেইনটেন্যান্স কাজ এইচইডির কাছে চলে গেলে কিছুটা সমস্যা হতেও পারে। তাছাড়া দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি গণপূর্ত বিভাগের রয়েছে প্রয়োজনীয় জনবলও। এমনকি করোনাকালীন সময়ে তাদের কর্মকান্ডে সন্তুষ্টিও রয়েছে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের। রয়েছে একাধিক প্রশংসাপত্রও। অর্থাৎ গণপূর্ত বিভাগের কোন ত্রুটি বা দুর্নীতির কারণে কাজটি এইচইডির হাতে দেয়া হচ্ছে এমনটি নয়। তার পরেও যেহেতু সরকারি নির্দেশ সে কারণে তারা এটিকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর(এইচইডি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার বলেন, সরকার যেহেতু নির্দেশনা দিয়েছে সেহেতু তারা এসব কর্মকান্ড করতে প্রস্তুত। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর, খুলনা-১এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই পত্রটি এখনও তারা পাননি। হয়তো উর্দ্ধত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছতে পারে কিন্তু এখনও মাঠ পর্যায়ে আসেনি। চিঠি পেলে তাতে কি নির্দেশনা রয়েছে সেটি দেখার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এমন একটি নির্দেশনার কথা তারা শুনেছেন বলেও তিনি জানান। খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি শিশু হাসপাতালটি তাদের আওতায় নির্মাণাধীন রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যেটি কেডিএ’র ময়ুরি আবাসিক এলাকার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশে এইচইডির ৩০টি অফিস রয়েছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এখনও এসব অফিসে বিভিন্ন্ পর্যায়ে জনবল সংকট রয়েছে। তবে জনবল সংকট দূর করার চেষ্টা করছে সরকার। পর্যায়ক্রমে সকল অফিসে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়ার মধ্যদিয়ে দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কাজ তাদের ওপর ন্যস্ত করা হবে এমন লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সুতরাং একই মন্ত্রণালয়ের কাজ অন্য মন্ত্রণালয়ের আর করার প্রয়োজন হবে না। যেমনটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করানো হচ্ছে তেমনি এইচইডির মাধ্যমেই দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করানো হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এবং গোপালগঞ্জের সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজসহ দেশের অনেক বড় বড় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত কাজ এইচইডি বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং এখন তারা অনেকটা স্বয়ংসম্পন্ন।