খুবিতে অনুষ্ঠিত
কর্মশালায় তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার ঃ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার(এমডিজি) সফল বাস্তবায়ন হলেও এখনও বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে ১৬৯জনের মাতৃমৃত্যু এবং প্রতি এক হাজারে ৪৫জন শিশুর(পাঁচ বছরের নিচে) মৃত্যু হয়। এছাড়া এখনও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে শতকরা ৫৯ ভাগ এবং গ্রামাঞ্চলে ৬০ দশমিক সাত ভাগ বাল্যবিয়ে(১৮ বছরের নিচে) হয়। শহর ও গ্রামের মধ্যে পার্থক্য সবচেয়ে বেশি সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে। শহরে এ হার ৪০ শতাংশ এবং গ্রামে ৩৩ শতাংশ।
‘টেকসই উন্নয়নে স্বাস্থ্যকর গ্রাম’ শ্লোগানকে সামনে রেখে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর গ্রাম প্রচারণা কর্মসূচির ভালো শিখনসমূহ বিনিময় ও অগ্রগতি টেকসইকরণ বিষয়ক কর্মশালা ও মেলায় এমন তথ্য দেয়া হয়েছে। খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী অডিটরিয়ামে গতকাল সোমবার সকালে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
দ্যা নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জেজেএস এবং খুবি’র ডেভেলপমেন্ট ষ্টাডিজ ডিসিপ্লিনের অংশীদারিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুলনার জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি নির্বাচনি ইশতেহার ছিল আমার গ্রাম আমার শহর। এজন্য সরকার শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে। একইসাথে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) স্লোগান হচ্ছে কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সকলকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এজন্য শহরের অধিবাসীদের সাথে সাথে গ্রামের মানুষের জীবনমানও যেন উন্নত হয় সেজন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একা সরকারের পক্ষে গ্রামের উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, এজন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে অংশীদায়িত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। যাতে গৃহীত উদ্যোগগুলো টেকসই হয়। সেই সাথে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সকলের মধ্যে একটি সমন্বয়ের মধ্যদিয়ে স্বাস্থ্যকর গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
খুলনার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের বাবুল শেখের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম জাহিদ হোসেন ও জেজেএস’র নির্বাহী পরিচালক এটিএম জাকির হোসেন।
কর্মশালায় টেকসই উন্নয়নে স্বাস্থ্যকর গ্রাম বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, খুবি’র ডেভেলপমেন্ট ষ্টাডিজ ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো: হাসান হাওলাদার এবং প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন, খুবি’র সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. তুহিন রায়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, ডুমুরিয়ার খর্নিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল ইসলাম, ধামালিয়া ইউনিয়নের টোলনা হিন্দুপাড়া সিএসজি’র মেন্টর লিপিকা মন্ডল ও ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন ম্যানেজার সজল কোরাইশী।
এছাড়া মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন খুবি’র পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের লেকচারার রাবেয়া সুলতানা, বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন’র নির্বাহী পরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়ার্ল্ডভিশনের মামুন হোসেন, বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: মো: মিজানুর রহমান, দৈনিক পূর্বাঞ্চলের স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন প্রমুখ।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে গ্রামীণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি কমিটি গঠন করা, টেকসই পয়:নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সুপেয় পানির সুব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করা এবং নিজেরা একে অপরকে সাহায্য করে সমাধান করার সুপারিশ করা হয়।
এর আগে সকাল থেকে খুবি’র মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গনে টেকসই উন্নয়নে স্বাস্থ্যকর গ্রাম বিষয়ক মেলা বসে। মেলায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে স্টল দেয়া হয়। সেখানে স্বাস্থ্যকর গ্রামের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা। প্রদর্শন করা হয় বিভিন্ন প্রকাশনাও।
উল্লেখ্য, ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালি জেলার ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ১৮টি স্বাস্থ্যসূচক নিশ্চিত করার মাধ্যমে এক একটি গ্রামকে স্বাস্থ্যকর গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গতকালকের মেলা ও কর্মশালা থেকে কয়েকটি গ্রামকে স্বাস্থ্যকর গ্রাম ঘোষণা করা হয়।