খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে চরমোনাই পীর

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, সরকার দেশে মদ ও অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয় বিক্রয় এবং সংরক্ষণের দুয়ার উন্মুক্ত করতে চায়। কিন্তু দেশের ইসলামপ্রিয় একজন মানুষের রক্ত থাকতেও দেশে কোন ইসলামবিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।

একটি অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতাকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করে বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড রুখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ আজ ভালো নেই, সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না। কারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, গ্যাসসহ সকল নির্মাণ সামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। কিন্তু প্রতিবাদও করতে পারছে না হামলা-মামলা ও হয়রানির ভয়ে।
স্বাধীনতার ৫১ তম বর্ষে এসেও আজকের সরকার ৭১ পূর্ববর্তী সরকারের মতো, নিপীড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোন অধিকার ও সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। অথচ স্বাধীনতা উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে। সম্মান পাবে। বাক স্বাধীনতা পাবে। ন্যায়বিচার পাবে। জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সাম্য ও রুটি রুজির নিশ্চয়তা পাবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণ-মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শাসক শ্রেণীর এহেন কর্মকান্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জাতিকে নেশাগ্রস্ত করতে মদের বিধিমালা প্রণয়ন করতে সরকার ও তাদের দোসররা মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।
গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনা রেলষ্টেশন সংলগ্ন কদমতলা রোডে অনুষ্ঠিত এ এইচ ফারাজী ইনস্টিটিউটের সামনের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন ও মাওলানা শোয়াইব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ এর জয়েন্ট সেক্রেটারী জেনারেল মুফতী মোস্তফা কামাল, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারী জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, মুফতী আমানুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলনা আব্দুল্লাহ ইমরান, অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম, মাওলানা তাসনীম, ডা. কাজী ওয়ায়েস কুরনী, হা. মনিরুজ্জামান, মুহা. আইউব আলী মিয়া, হাসানুজ্জামান সজিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমাদ আলী, ডা. এইচ এম মোমতাজুল করিম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, আলহাজ¦ আব্দুল হালীম আলহাজ¦ শামসুদ্দিন মোল্লা,চেয়ারম্যান মুফতী ওসমান গনী মুছাপুরী, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মারুফ, ডা. কেএম আল আমিন এহসান, মুফতী আ: জলিল, হাফেজ মাওলানা মুস্তাক আহমেদ, মাওলানা রফিকুর রহমান, মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী, মুফতী আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, মুফতী জিহাদুল ইসলাম, মাওলনা মিছবাহ উদ্দিন, মাওলানা আলী আহমাদ, মাওলানা ওমর ফারুক নূরী, এইচ এম সাইফুল ইসলাম, মুফতী মাহবুবুর রহমান, মাওলনা আবু সাইদ, শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, আলহাজ¦ মাওলানা দ্বীন ইসলাম, মুফতী রবিউল ইসলাম রাফে, মাওলানা শাইখুল ইসলাম বিন হাসান, আবুল কালাম আজাদ, আলহাজ¦ জাহিদুল ইসলাম, মুহা. মেহেদী হাসান, আলহাজ¦ আবুল কাশেম, মুহা. সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদি, মুফতী আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ নোমান প্রচার, গাজী ফেরদাউস সুমন, মাওলানা হারুন অর রশিদ, মাওলানা এস.কে নাজমুল হাসান, মুফতী শেখ আমীরুল ইসলাম, এইচ এম খালিদ সাইফুল্লাহ, মুহা. মইনুদ্দিন, ইনামুল হাসান সাইদ, আলহাজ¦ আমজাদ হোসেন, হাফেজ আ: লতিফ, আলহাজ¦ আবু তাহের, মাল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, ফরহাদ মোল্লা,আব্দুল্লাহ আল মামুন, নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা হাফিজুর রহমান, হায়দার আলী, মুহা. ইমরান হোসেন মিয়া, গাজী মুরাদ হোসেন, মুফতী হেলাল উদ্দিন শিকারী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মুফতী ফজলুল হক প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব ও মুফতী ইমরান হোসাইন।
আগের রাতে রাজপথে সমাবেশ করার জন্য পুলিশী অনুমতি না পাওয়া এবং ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও গতকালকের এ সমাবেশে ছিল হাজারো জনতার উপস্থিতি। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমাবেশ চলার কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আসরের আজানের সাথে সাথেই শেষ করা হয়।
রাজপথে অনুমতি না পাওয়া প্রসঙ্গ তুলে ধরে চরমোনাই পীর বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ হওয়ার কথা ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বরে। কিন্তু একদিন আগে সেখানে অনুমতি দেয়া হয়নি। তার পরেও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের এ স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি। এটিই প্রমাণ করে বর্তমান সরকারকে আর দেশবাসী চায় না। সুতরাং একটি জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সরকারের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, সরকারী দলের সমর্থনপুষ্ট মধ্যস্বত্বভোগীরা স্তরে স্তরে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে। পথে-ঘাটে পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করার ক্ষেত্রে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের কারসাজী করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যায় পানিবন্দী দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, সরকারের উচিত সেখানে হেলিকপ্টারযোগে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া। একইসাথে তিনি দলের নেতা-কর্মী এবং বিত্তবানদের প্রতি সিলেটের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।