/ নগরীর মোড়ে থাকে না ট্রাফিক পুলিশ: ক্রসিং আটকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় জনদুর্ভোগ

নগরীর মোড়ে থাকে না ট্রাফিক পুলিশ: ক্রসিং আটকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় জনদুর্ভোগ

রঞ্জু আহমদ: শহরের ক্রসিং আটকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় দুর্ভোগ বেড়েছে নগরবাসীর। একই সাথে নগরীতে প্রতিদিনই তীব্র হচ্ছে যানজট। মোড়ে মোড়ে বাড়ছে ভোগান্তি। সকালে অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে বিকেলে স্কুলছাত্র-ছাত্রী, সবাইকে পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক রূপসা, নিউমার্কেট, গল্লামারী, সোনাডাঙ্গা ও পিটিআই মোড়, গল্লামারি, ময়লাপোতা মোড়ে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। নগরবাসীর অভিযোগ, এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠা মার্কেট, হকারের দখল আর ট্রাফিক পুলিশের সীমিত নিয়ন্ত্রণের কারণেই খুলনায় এখন যানজট নিত্যদিনের চিত্রে পরিণত হয়েছে।

শহরের কিছু মোড়ে নির্দিষ্ট সময়ে যানজট এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মোড়গুলোতে যানজটের সময়ে থাকে না ট্রাফিক পুলিশ। অথবা কোন কোন মোড়ে দুই একজন ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও চতুর্মূখী সড়কে তারা জট ছাড়াতে ব্যর্থ হয়। এসব জায়গায় একাধিক পুলিশ প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন যাত্রীরা।

ক্রসিং আটকে দুর্ভোগ বৃদ্ধি: নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের মূল ক্রসিং পয়েন্টটি আটকে দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। এতে ছোট যানবাহনগুলোকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। ফলে এক ধরনের ভোগান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে আবাসিক এলাকার ছোট গলিপথগুলোতে মটর সাইকেল, পিকআপ, ইজিবাইক, প্রাইভেট কারের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। বিশেষ করে ইকবাল নগর গলি দিয়ে এসব গাড়ি গিয়ে মিসছে শেরে বাংলা রোডে। অপরদিকে ময়লাপোতা মোড়ের দীর্ঘ পথ না ঘুরতে যান চালকরা শেরে বাংলা রোডের ক্রসিং পার হয়ে উল্টোপথে ইকবাল নগর সড়কে ঢুকছে। এই এলাকাটি জনাকীর্ণ হওয়ায় প্রায়ই সময় যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন। ছোট খাট জট এবং দুর্ঘটনা লেগেই থাকে এই সড়কে। এছাড়া কোন যানবাহন ময়লাপোতা মসজিদের সামনে থেকে কোন গাড়ি রূপসায় যেতে চাইলে তাকে ডালমিল মোড় হয়ে এক কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত পাড়ি দিয়ে যেতে হচ্ছে। সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোরমত ভারি যানবাহন চালকদের ডালমিল মোড়ের ছোট ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে ঘোরাতে রীতিমত গলদঘর্ম পোহাতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালক বলেন, ‘গল্লামারির থেকেও ময়লাপোতার ডালমিল মোড়ে গাড়ি ঘোরানোতে বড় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’

শহরের মোড়ে মোড়ে যানজট ভোগান্তি: রূপসা সেতু এলাকা থেকে শহরে প্রবেশের মুখেই অর্থাৎ ট্রাফিক মোড়ে শুরু হয় দীর্ঘ যানজট। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এ রুটে প্রায় কিলোমিটার ব্যাপী যানবাহন থেমে থাকে। বিশেষ করে ট্রাফিক মোড়টিতে ছয়টি সড়ক। এখানে এক পাশে জট লাগলে চর্তুপাশ আটকে পড়ে। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে শহরে আসা অফিসগামী ইমরান হোসেন বলেন, ‘রূপসা ব্রিজ থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত আধঘণ্টার পথ এখন এক ঘণ্টাতেও শেষ হয় না। সকালে বের হলেও অফিসে দেরি হয়।’

খানজাহান আলী সড়ক ধরে রূপসা সেন্ট্রাল রোড মোড়ে সকালে থাকে যানবাহনের চাপ। পিটিআই মোড়ে সন্ধ্যায় থাকে দীর্ঘ ভোগান্তি। মোড়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকে এক দুইজন। পিটিআই মোড়টি ৬টি সড়কের মুখ। স্কুল কলেজ এই কেন্দ্রিক হওয়ায় রিক্সা, ইজিবাইক ও গাড়ির চাপ থাকে বেশি। ফলে সন্ধ্যায় বড় জ্যাম পড়ে। ঠিক এই সময়টাতে সেখানে থাকে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতি। একজন বা দুই জনে এই মোড় সামলাতে হিমশিম খায়। স্থানীয় বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, ‘পিটিআই মোড় পার হতে গেলে ১০ মিনিট লাগে, কখনও পুলিশের হাত নেড়ে গাড়ি ছাড়ে, কখনও নিজেরাই পথ খোঁজে।’

দুপুর এবং সন্ধ্যার পর জ্যাম বাধে নগরীর শান্তিধাম ও ফুল মার্কেট এলাকায়। ঠিক ওই সময়টাতে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ অনুপস্থিত থাকে।
বর্তমানে নগরীর অন্যতম যানজটপূর্ণ এলাকা গল্লামারি মোড় ও ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা। এখানকার ফুটপাতগুলোও দখল করে রয়েছে হাকাররা। শুধু ফুটপাতের ওপরের ভাসমান দোকানগুলো সরিয়ে দিলে মোড়টির যানজট অর্ধেকে নেমে আসে। তবে ট্রাফিক বিভাগ এবং কেসিসি কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন নজর নেই। শহরে ঢোকা এবং শহর থেকে বের হতেই এই মোড়ে মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। মোড়টিতে একাধিক ট্রাফিক পুলিশ দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে। তবে যানজট নিরসনে তাদের কোন ভুমিকা দেখা যায় না।

এছাড়া সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় থাকে অন্যরকম দুর্ভোগ। মোড়টি একেবারে থানা এলাকায় হলেও সড়কে শৃঙ্খলা থাকে না দিনভর। এই এলাকার সমস্যা আরও জটিল। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে বাস থামানো ও যাত্রী ওঠা নামানোয় বিশৃঙ্খলার কারণে পুরো সড়ক জুড়েই জট তৈরি হয়।
শহরের মোড়ে মোড়ে এই ধরনের যানজট তৈরি হলেও ট্রাফিক বিভাগ যেন নির্বিকার। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শহরে প্রতিদিন দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশ। সকাল ৬টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ২৪ জন সার্জেন্ট, ৭জন টাউন সাব ইন্সপেক্টর, ১৬ জন সহকারি টাউন সাব ইন্সপেক্টর ও ৬৫ জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত সম জনবল দায়িত্ব পালন করে যানজট নিরসনে। অথচ সারা শহরে কেএমপির ট্রাফিক বিভাগের যানজটের তালিকায় রয়েছে মাত্র ১২টি পয়েন্ট। ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা এসব পয়েন্টগুলো হচ্ছে শিববাড়ি সোনাডাঙ্গা, গল্লামারি, ময়লাপোতা, পিটিআই মোড়, রূপসা, ডাকবাংলা, বয়রা বাজার, দৌলতপুর বাজার মোড়, ফুলবাড়িগেট ও শিরোমনি। তবে সে তুলনায় এসব গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন একাধিক যাত্রী।

যানজটের বিষয়ে কেএমপির ট্রাফিক বিভাগে কথা বলতে গেলে ডেপুটি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনার যানজট চট্টগ্রাম বা ঢাকার মত নয়। এখানে ভোগান্তির কিছু নেই। শহরের কয়েকটা জায়গায় সকাল বিকেল অফিস ফেরত মানুষের চাপ বাড়ে সেসময় একটু জট তৈরি হয়। তবে সেটি উল্লেখযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, এর জন্য আমরাই দায়ী, আমরা সচেতন নই। যেকোন জায়গায় ফাঁকা পাইলেই গাড়ি চালিয়ে দেই। শহরে অতিরিক্ত ইজিবাইক রিক্সা চলাচল করে। কেসিসির উচিত শহরে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমানো। তবে মোড়গুলোতে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এরপরও শহরে সকলেই সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।

যানজট নিরসনের বিষয়ে নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘খুলনা শহরের রাস্তা-ঘাট পরিকল্পনাহীনভাবে বিস্তৃত হয়েছে, কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থাপনা সে অনুপাতে উন্নত হয়নি। তিনি মনে করেন, হকার উচ্ছেদ, নির্দিষ্ট পার্কিং জোন তৈরি, স্কুলঅফিস সময়সূচির সমন্বয় ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ছাড়া যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।’