স্টাফ রিপোর্টার ঃ করোনা মহামারীর কারণে বিগত দু’বছর বন্ধ থাকার পর নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে গতকাল শনিবার খুলনার রূপসা নদীতে ১৪তম নৌকাবাইচ সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে এ নৌকাবাইচ হলেও এবারই শীতকালে নৌকাবাচই হওয়ায় নৌকার সংখ্যাও অনেকটা কমেছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২ বছর ধরে এ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয় মোবাইল কোম্পানী বাংলালিংক ও গ্রামীণফোনের সৌজন্যে। আর এবার অনুষ্ঠিত হলো আকিজ বেকার্স লিমিটেড বিস্কুট ব্র্যান্ড ফানটাস্টিক-এর পৃষ্ঠপোষকতায়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এ নৌকাবাইচটি জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে এবারের নৌকাবাইচটি সম্পন্ন হয়।
নৌকাবাইচ উপলক্ষে রূপসা নদীর দু’পাড়ে যেমন মানুষের ভীড় ছিল তেমনি শত চেষ্টা সত্বেও এবারও নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত যানবাহনযোগে দর্শনার্থীদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি। যদিও আগের বছরগুলোর তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল অনেকটা কম। এছাড়া প্রতি বছর নৌকার সংখ্যাও ৩০টির উপরে থাকলেও এবার বড় নৌকা ছিল ১২টি ও ছোট নৌকার সংখ্যা ছিল আটটি। বরাবরের ন্যায় এবারও নৌকাবাইচটি নগরীর কাষ্টমঘাট সংলগ্ন রূপসা নদী থেকে শুরু হয় এবং রূপসা সেতুতে গিয়ে শেষ হয়। দুপুরে কাষ্টমঘাটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যায় রূপসা সেতুর পশ্চিম পাড়ে সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও সকালে নগরীর শিববাড়ি থেকে র‌্যালী বের হয়।
বাইচ প্রতিযোগিতায় বড় গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর মালিকানাধীন কয়রার সুন্দরবন টাইগার, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে মাগুরার আকরাম বিশ^াসের দল মাগুরা টাইগার আর তৃতীয় স্থান অধিকার করে তেরখাদার মো: দেদার মোল্লার দল ভাই ভাই জলপরী এবং ছোট গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে পাইকগাছার রিয়া নৌকাবাইচ, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তালার কপোতাক্ষ তালা ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে তালার কপোতাক্ষ পঙ্খিরাজ। সন্ধ্যায় রূপসা সেতুর পশ্চিম পাড়ে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরস্কার ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। পরে সেখানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দুপুর ১টায় নগরীর ১নং কাষ্টমঘাটে বাইচ প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ও সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায় রূপসা সেতুর পশ্চিম পাড়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এবং সকাল নয়টায় শিববাড়ি মোড়ের র‌্যালী উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মো: ইসমাইল হোসেন এনডিসি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ও বাইচ প্রতিযোগিতার প্রধান সমন্বয়কারী মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার সভাপতিত্ব করেন।
র‌্যালী উদ্বোধন ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি মোল্লা মারুফ রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম। এসব অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, রেঞ্জ ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন, বিপিএম বার, কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এস. এম ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার(প্রশাসন) সরদার রাকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মাহবুব হাসান, ট্যুরিষ্ট পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ, কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ ইউসুফ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিকুর রহমান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পুলক কুমার মন্ডল, রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা, রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাসনিম, নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আল-জামাল ভূঁইয়া, এস.এম আকতার উদ্দিন পান্নু, গোলাম রব্বানি ভূঁইয়া, কিশোর কুমার সরকার, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নিজাম-উর-রহমান লালু, শাহীন জামান পন, মিনা আজিজুর রহমান, রওশনা রুবি প্রমুখ।
এদিকে, নৌকা বাইচ সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো: মনিরুজ্জামান রহিম বলেন, করোনার কারণে বিগত দু’টি বছর যথাক্রমে ২০১৯ ও ২০২০ সালে খুলনায় নৌকাবাইচ হয়নি। আবার এবার পৃষ্ঠপোষক পেতে দেরি হওয়ায় অক্টোবরের নৌকাবাইচ ডিসেম্বরেও করা সম্ভব হয়নি। বরং পয়লা জানুয়ারি করতে হয়েছে। শীতকালে নৌকাবাইচ হওয়ায় অনেক নৌকা অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলেও তিনি জানান।