/ নদী জলাশয় পুকুর সংরক্ষণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

নদী জলাশয় পুকুর সংরক্ষণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে নদীগুলিকে বাঁচাতে হলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে ঠিক রাখতে হবে। নদীকে বিরক্ত করা যাবে না। নদী যে জীবন্ত স্বত্তা চিরন্তন এই কথাটিকে বিশ্বাস করতে হবে।কারণ নদী যদি টিকে না থাকে তাহলে বাংলাদেশের হাজার বছরের সভ্যতা হারিয়ে যাবে। কারণ নদীই এই দেশের ভৌগলিক অবয়বকে সবুজ-শ্যামল রেখেছে। নদী এদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে বিশ্বের অনন্য উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। নদীর কারণে এদেশের বিনুনির মত খাল, নালা, জলাধার টিকে আছে। এ দেশের প্লাবন ভূমিনির্ভর যে মৎস্যসম্পদ তা’ এই নদীর কারণেই টিকে আছে। গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ হলো নদী এবং নদীমালার পানি প্রবাহ যা গ্রামের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মূল আকর্ষণ। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে নদীর মহাত্ম বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তাই আমরা সর্বান্তকরণেই চাই যে কোন মূল্যেই হোক নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কোন নদীই ছোট নয়। ছোট-বড় সব নদীই স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র বা ইকোলজির ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য অতীব জরুরী। নদী সুরক্ষায় পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ সংক্রান্ত এক সংবাদ একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা তিনি বলেছেন ‘দেশে বালি ও ভূমিদস্যুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে ডিসিদের ১০ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দিনে বা রাতে যখনই অবৈধভাবে মাটি বা বালি উত্তোলন করা হবে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বড়াল নদীর উৎসমুখ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসককে পুকুর-জলাশয় সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে তার মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে বলে আশ্বস্ত করেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘চারঘাটের বড়াল নদীতে ¯øইস গেট আর দরকার নেই, সমন্বিত উদ্যোগে নদী খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু প্রকল্পের স্বার্থে নদীর প্রবাহে আর বাধা রাখা যাবে না।’ ফারাক্কা পানি চুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা পানি চুক্তি নিয়ে কথা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। যথাসময়ে চুক্তি নবায়ন হবে।’ ফসলি জমিতে পুকুর খনন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ অঞ্চলে ফসলি জমিতে পুকুর খনন পরিবেশ হুমকিতে ফেলছে। ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না।’ এদিন রাজশাহী সার্কিট হাউজে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগ সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা জরুরি।’ প্লাস্টিক ও পলিথিন শপিং ব্যাগের ভয়াবহ পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার এরই মধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ এগিয়ে এলে এ কাজে সফল হওয়া যাবে।’ সভায় নগরায়ণের চাপে পুকুর, খাল ও অন্য জলাশয় ভরাটের প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্য রক্ষায় প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা করা অপরিহার্য।’ সভায় উপদেষ্টা তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব জীবনধারার চর্চায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে।’ পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যে কথাগুলো বলেছেন, তা’ পরিবেশের সাম্যবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবেই সমর্থনযোগ্য। আমরাও চাই নদী দখল হবে না। নদী থেকে কেউ বালু উত্তোলন করবে না। খাল বিল পুকুর কেউ ভরাট করবে না। প্রাকৃতিক জলাধারের গুরুত্ব সকলেই অনুধাবন করে তা’ রক্ষায় সচেষ্ট হবে। সকলেই পলিথিনের আগ্রাসন বন্ধে সচেতন হবে। জীবনের নানা অনুসঙ্গে পলিথিন যেভাবে জায়গা দখল করে জনস্বাস্থ্যে যে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে তা’ মানুষ বুঝতে পেরে পলিথিন কে বর্জন করবে। পরিবেশ সুরক্ষায় যে আইন রয়েছে তা মানুষ মেনে চলবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। আইনের অপব্যবহার ও হয়রানি হবে না। সুশাসনের সকল উপাদানগুলি চর্চার মধ্য দিয়ে পরিবেশ আইন প্রয়োগ হবে। বাংলাদেশে ৬ ঋতুর বৈচিত্রময় পরিবেশ আবার ফিরিয়ে আনতে সকলে সরকারের সাথে মিলেমিশে পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার হবে। আমরা মনে করি পরিবেশ কোন দল বা মতের নয়। পরিবেশকে রাজনৈতিক বিশ্বাস বা মতাদর্শ দিয়ে আলাদা করাও যাবে না। কারণ পরিবেশ সকলেরই জীবনের উপাদান। পরিবেশ ভাল না থাকলে আমাদের জীবনের অন্যতম উৎস অক্সিজেন আমরা পাব না। জীবন ধারণের জন্য পানি পাব না। জীবনের অপর নাম পানি। এই পানি পরিবেশের প্রধান উপাদান। সুতরাং এই পানির উৎসের জন্য নদী ভরাট, খাল এবং পুকুর জলাশয় ভরাট কর যাবে না। বায়ুকে আমাদের নির্মল রাখতে হবে। পরিবেশের প্রতি প্রতিটি মানুষের এমনি বহুমুখী নির্ভরশীল অজন্মই থাকবে। বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশের এই উপাদানগুলিকে আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এ জন্য আমরা চাই সকলেই মিলেই পরিবেশ সুরক্ষায় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হোক। কার্যকর অর্থেই পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহীত হোক।