খালিশপুরে গণসংহতির সমাবেশে বক্তারা
চাল-ডাল-তেল-চিনি-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং রাষ্ট্রীয় ২৬টি পাটকল চালু, আধুনিকায়ন ও সঠিক হিসাব অনুযায়ী সকল শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির উদ্যোগে গত শুক্রবার বিকেল ৫টায় খালিশপুর গোলচত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সদস্য আল আমিন শেখ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি শ্রমিকনেতা মোঃ মোজাম্মেল হক খান, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সংগঠক সেলিম বকুল, খালিশপুর থানা সংগঠক আবু বক্কার সিদ্দিক, খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক মোঃ মনির হোসেন মনি, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, খুলনা-যশোর বদলী আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক মোঃ ইলিয়াস হোসেন, সদস্য সচিব মোঃ আবদুর রাজ্জাক তালুকদার, প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিকনেতা মোঃ নূরুল ইসলাম, ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিকনেতা মোশারেফ হোসেন, শ্রমিকনেতা ডালিম কাজী, মাস্টার আবুল কালাম আজাদ, মোঃ সোহেল, পুতুল বেগম প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ধারাবাহিকভাবে চাল-ডাল-ভোজ্য তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে শ্রমজীবীসহ সাধারণ মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের উর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক খড়গ মেনে এসেছে। একারণে সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হচ্ছেন। শ্রমজীবী মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমাতে সরকারের তরফ থেকে চাল ও টিসিবির পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এব্যবস্থায়ও দুর্নীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রের পরিসর কমিয়ে দেয়া হয়েছে, পণ্যের পরিমাণ সঙ্কুচিত করা হয়েছে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকেরাই দফায়-দফায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটছে। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা লুণ্ঠন করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। সরকার মাঝে মধ্যে বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কারণ এসব অসাধু ব্যবসায়ীরাই এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সরকার-প্রশাসন-মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রক। বক্তারা বলেন, স্বৈরতান্ত্রিক সরকার মহামারী করোনার সময়ে পাটকল শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে প্রায় ৬০ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী-বদলী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এ সকল কর্মহীন অভুক্ত শ্রমিকদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৯ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত কোন শ্রমিক একটি টাকাও পায়নি। ফলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের লালন-পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে। পাটকলে উৎপাদন বন্ধের ২ বা ৩ মাসের মধ্যেই শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা স্ট্রোক, হার্ট, কিডনী, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত।
অথচ টাকার অভাবে এসব অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা করাতে পারছে না।
এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন উর্ধ্বগতির ফলে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। বক্তারা আরো বলেন, রাতের অন্ধকারে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছে জনগণের কোন মূল্য নেই। কারণ সরকার জনগণের ভোট বা ম্যান্ডেট ছাড়াই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ফলে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এ সরকার চিন্তিত নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গণমানুষের অধিকার, ভোটের অধিকার ও বাঁচার অধিকারকে পিষে মারা হচ্ছে। ফলে ফ্যাসিবাদী সরকারের এই দুঃশাসন থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সাধারণ মানুষের বাঁচার তাগিদে দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। গণসংহতি আন্দোলন তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সেই লড়াই জারি রেখেছে।-খবর ঃ বিজ্ঞপ্তির ॥