খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক
এমডিএ বাবুল রানা

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১৩ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে যে ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্র হয়েছিল জাতি তা কোনদিনই ভুলবে না। তবে বিএনপি ও ড. ইউনুস যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আওয়ামীলীগ আগামী ২৫ জুনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছে। আ’লীগের এই উদারতা দেখেও পদ্মা সেতু নিয়ে বিরোধীতাকারীদের শিক্ষা নেয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিত্র বদলে যাবে উল্লেখ করে নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন আর খুলনাঞ্চলের চাকরীজীবীদের ঢাকায় অবস্থান করার প্রয়োজন হবে না। খুলনা-বাগেরহাটে থেকেই প্রতিদিন ঢাকায় গিয়ে অফিস করে ফিরে আসতে পারবেন। আর সকল প্রকার দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদ্মা সেতু করে দিলেন এজন্য জাতি তাঁর কাছে চির ঋণি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পদ্মা সেতু নিয়ে চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন এমনটি উল্লেখ করে বাবুল রানা বলেন, অন্য কেউতো চেষ্টা করেনইনি, বরং তিনি যখন উদ্যোগ নেন তখনই তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে বাঁধাগ্রস্থ করা হয়। যার ফলে বিশ^ব্যাংক অর্থায়ন থেকে বিরত থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করলেন।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওইদিন দেশের জন্য একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য ২৫ জুন হবে ঐতিহাসিক দিন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণ সম্পর্কে আ’লীগ নেতা বাবুল রানা বলেন, এক সময় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢাকার সাথে যোগাযোগে অনেক সময় নষ্ট হতো। কখনও কখনও ৮/৯ঘন্টা এমনকি বিশেষ বিশেষ সময়ে দিনের পর দিন বসে থাকতে হতো মাওয়া ঘাটে। জনভোগান্তি দূর করাসহ সময় বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আর তার উদ্যোগের পর যারা বিরোধীতা করে তাদের বিরোধীতাকে উপেক্ষা করে এমনকি বিশ^ব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু করা বঙ্গবন্ধু কন্যা ছাড়া অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না। এ সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে পদ্মার এপারের ২১ জেলার মানুষ শুধু যে যাতায়াতের ক্ষেত্রেই উপকৃত হবে তা নয়, বরং এ অঞ্চলের শিল্পায়ন বৃদ্ধি পাবে, বন্দরগুলো সচল হবে, বেকারত্ব দূর হবে সর্বোপরি অর্থনৈতিক বিশাল পরিবর্তন ঘটবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই মাওয়া থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই জমি কিনে রেখে সেখানে শিল্পায়নের চেষ্টা করছেন। পদ্মা সেতুকে ঘিরেই মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং ইপিজেড সচল হবে। এমনকি বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর থেকে দেশে আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধি পাবে। যেটি হবে এ অঞ্চলের জন্য একটি অর্থনৈতিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
‘পদ্মা সেতুর পর এখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের একটাই চাওয়া সেটি হচ্ছে বিমান বন্দর’ এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমান বন্দর হলে বিদেশী বিনিয়োগকারী ও পর্যটকরা আসবে। অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বেকারত্ব দুর হবে। এজন্য বিমান বন্দরের কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন। সর্বোপরি পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে খুলনাঞ্চলের মানুষের জন্য বহুমুখী ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
পদ্মা রেল সেতু সম্পর্কে এমডিএ বাবুল রানা বলেন, শুধু পদ্মা রেল সেতুই নয়, বরং এর বাইরেও ইতোমধ্যে খুলনা-মংলা রেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, মংলা সব অঞ্চলের যাত্রীরাই পাবে রেল সুবিধা। আর তখন খুলনাই হবে রেলওয়ের জন্য একটি মধ্যবর্তী ষ্টেশন। সুতরাং খুলনাবাসীর হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপাতত: দৃষ্টিতে পদ্মা রেল সেতুর শেষ ষ্টেশন যশোর হলেও খুলনাই হবে এর শেষ ষ্টেশন। তবে এজন্য তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে তিনি নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাকেও সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। যেসব সড়ক দুই লেনে আছে সেগুলো চার লেনে অথবা ছয় লেনে উন্নীত হবে। যার মধ্যদিয়ে এ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগেও আসবে বিশাল পরিবর্তন।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বাবুল রানা বলেন, এ ধরনের একটি উন্নয়ন প্রকল্পকে নিয়েও ষড়যন্ত্র হবে সেটি ছিল অপ্রত্যাশিত। সরকার আসবে আবার পরিবর্তন হবে এটাতো স্বাভাবিক। উন্নয়ন কাজ এক সরকার শুরু করলে পরবর্তী সরকারের সেটি চলমান রাখা উচিত। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তা সবাই জানে। এখানে কারও বিষয়ে গোপন করার কোন সুযোগ নেই।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিরোধীতাকারীদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কিন্তু এখনও স্থানীয় পর্যায়ের কোন কোন বিরোধী রাজনৈতিক নেতা অসহনশীল বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে গতকালকের দৈনিক পূর্বাঞ্চলে প্রকাশিত নগর বিএনপির আহবায়ক এড. এস এম শফিকুল আলম মনার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু কাদের উদ্যোগে হয়েছে, কার বেশি চেষ্টা ছিল সেটি ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এমনকি জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আলোচনা হয়েই সমাধান হয়েছে। সুতরাং মীমাংসিত একটি বিষয়কে সামনে এনে বিতর্ক সৃষ্টি করা খুলনাবাসী প্রত্যাশা করে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।