এইচইডি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং
মন্ত্রণালয়ের ধীরে চলো নীতি

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য অর্থ সংস্থান পেতে শুধু পত্র চালাচালিতেই চলে গেলো তিন মাস। সর্বশেষ গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বললেন, নতুন করে নোট দিয়ে কালই কাজ শুরু হয়েছে। এখন আবার এজন্য প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে কতদিন লেগে যায় সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের চিত্রে খুলনা করোনা হাসপাতালে করোনার রোগীর চাপ কিছুটা কমতে দেখা গেলেও আবারো রোগী বাড়লে তখন রোগীরা অক্সিজেন সংকটে পড়তে পারে এমন আশংকাও সংশ্লিষ্টদের। এজন্য পত্র চালাচালির ধীরে চলো নীতির অবসান চায় খুলনাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী গ্রীড হাসপাতালে সরকারি অর্থায়নে সরবরাহকৃত মালামাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরপূর্বক চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য একটি লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য একটি ট্যাংকসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক মালামাল আনা হয়। কিন্তু সেটি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন প্রায় এক কোটি টাকা। যে টাকার সংস্থান কে দেবে তার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এজন্য ট্যাংকটি করোনা হাসপাতালের পাশে অর্থাৎ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালায়েড সায়েন্সেস বা পরমানুর সামনে ফেলে রাখা হয়। প্লান্টটি স্থাপনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অপর একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এইচইডি। এজন্য এইচইডি থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দিয়ে এজন্য ৯৭ লাখ টাকার একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়। খুলনাসহ অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠানে বসুন্ধরার মালামাল দেয়া হয় সেগুলো স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ৪ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওই পত্র দেয়া হয়। এতে অবশ্য খুলনাসহ দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অক্সিজেন প্লান্টসহ অন্যান্য মেশিনারিজ স্থাপনের জন্য সর্বমোট দুই কোটি ১৬ লাখ টাকার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়। সেই থেকে পত্র চালাচালি শুরু হয়ে এখনও চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এইচইডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৪ মার্চ দেয়া এইচইডির পত্রটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেলে সেখান থেকে আবার প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। ওই পত্রটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক(হাসপাতাল ও ক্লিনিক)-এর স্বাক্ষর হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যায় গত ৫ এপ্রিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন গত ১২ এপ্রিল আবারো পত্র দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। ওই পত্রে সংশ্লিষ্ট কাজটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে(ডিপিএম) বাস্তবায়ন করা যায় কি না সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গতকাল বুধবার অর্থাৎ আরও প্রায় এক মাস পর আবারো পত্র দিয়ে জানানো হয় এটি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। সুতরাং মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন এজন্য প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন এ প্রতিবেদককে মোবাইলে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি ই-মেইল তিনি গতকাল পেয়েছেন। যার আলোকে তিনি গতকালই আবারো ফাইল প্রস্তুত করে কার্যক্রম শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত অনুমোদন দেয়া সম্ভব হবে। ফলে খুলনাসহ অন্যান্য যেসব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বসুন্ধরা থেকে ফেরত দেয়া সরকারি মালামাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা’ হয়তো অচিরেই স্থাপন শুরু হবে।
খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ এ ব্যাপারে বলেন, অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য যে প্রক্রিয়ায় পত্র চালাচালি হচ্ছে সেটি আরও সহজীকরণ করে ঈদের আগেই যাতে কাজটি শুরু করা যায় সে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ কাজটি যেখানে বেধে আছে সেটি খুবই সামান্য একটি বিষয়। এখানে শুধুমাত্র আন্তরিকতাই যথেষ্ঠ। যে প্রক্রিয়ায় গেছে তাতে কাজটি হবে এটি ঠিক, কিন্তু কত দ্রুত হবে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। এজন্য তিনি পত্র চালাচালি আরও সহজ করে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান।
পত্র চালাচালি এবং পত্রের ভাষা আরও সহজ করে কাজটি দ্রুত করার দাবি জানিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আব্দুল আহাদও। তিনি বলেন, অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন হলে করোনা রোগীদের যেমন চিকিৎসা সহজ হবে তেমনি যেহেতু করোনা হাসপাতালটি আইসিইউ ভবনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে সেহেতু করোনার প্রাদুর্ভাব কমলেও আইসিইউ’র জন্যও অক্সিজেন প্লান্টের প্রয়োজন হবে। সুতরাং এটিকে কোনক্রমেই খাটো দেখার সুযোগ নেই।
করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, অক্সিজেন প্লান্ট না থাকলেও বিকল্পভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। খুমেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ও পোষ্ট অপারেটিভ কাম আইসিইউ বিভাগের জন্য পূর্বে লিন্ডে অক্সিজেন কোম্পানী যে লিকুইড প্লান্টটি স্থাপন করেছিল সেটিও ডাবল ইউনিটে উন্নীত করে পাইপ লাইনে মাধ্যমে করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করোনা হাসপাতালের দোতলায় ২০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা সম্ভব হবে। যেটি আজ থেকে চালু হতে পারে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর(এইচইডি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনপত্র এইচইডির প্রধান কার্যালয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে নির্দেশনা আসার সাথে সাথেই অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হবে।