সম্পাদকীয়
পলিথিন আবার সদর্পে ফিরে এসেছে। বাজার সয়লাব পলিথিনে। হেন জিনিস নেই যা বহনে পলিথিন ব্যবহার করা হয় না। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ‘সিঙ্গেল ইউজ’ পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় দেখা যায় সরকারী মহলে। বাজারে, শপিং মলে প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেও দেখা যায়। কিন্তু কিছু দিন পরে সব উদ্যোগেই ভাটার টান দেখা যায়। স্তিমিত হয়ে যায় পলিথিন নিষিদ্ধের সব উদ্যোগ-আয়োজন। এখন বাজারে হাটে দোকানে শপিং মলে সর্বত্র পলিথিনের ব্যাগ খুবই সহজলভ্য। সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে পলিথিন নিষিদ্ধের অবয়বে পলিথিনের সরব উপস্থিতি সর্বত্র। এমনি বাস্তবতায় সরকারের ঘোষণা এখন শুধু কাগুজে ঘোষণা হিসেবেই বিদ্যমান রয়েছে। এর প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন শূণ্য। আমরা লক্ষ করছি পলিথিন নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। আইন করেই সিঙ্গেল ইউজ পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার এই আইনের কঠোর প্রয়োগে প্রতিশ্রæতিবন্ধ হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। এরপর প্রচার মাধ্যম্যে নানা ধরণের খরবও প্রচারিত হলো। দেশব্যাপী বিষয়টি ব্যাপক আলোচনারও জন্ম দিলো। বেশীরভাগ লোকই সরকারের এই কঠোর অবস্থানকে স্বাগতও জানাল। কেউ কেউ উপযুক্ত বিকল্প না দিয়ে পলিথিন নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রশ্নও তুলল। কিন্তু দিন শেষে দেখা গেল সরকারের এ ঘোষণা কোন কাজেই আসল না। রাজধানীকেন্দ্রীক কয়েকটি মেগা শপে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তনে কাপড়ের বা কাগজের ব্যাগের ব্যবহার দেখা গেলেও অন্যান্য শহর, বন্দর, গ্রাম,গঞ্জ সর্বত্রই পলিথিন ব্যবহারের কোন কমতি দেখা গেল না। এতে সরকারের ঢিলেঢালা নীতিই প্রতিভাত হলো। আমরাতো এমনি অবস্থা চাই না। দেশের মানুষ একঅর্থে পলিথিনের আগ্রাসনে অতিষ্ট। কিন্তু যেহেতু উপযুক্ত বিকল্প এখনো বাজারে জনপ্রিয় করা যায়নি তাই পলিথিনে শহর, বন্দর, হাটবাজার, বাসাবাড়ি, বন-জঙ্গল, সাগর-নদী -খাল-বিল-জলাশয় সর্বত্র পলিথিনের জঞ্জাল এখন দৃশ্যমান। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসহ সার্বিক অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। এমনি অবস্থার পরিবর্তন এখন খুবই জরুরী। আমরা তো সকলেই জানি পলিথিন এমন একটি পণ্য, যা মাটির সঙ্গে মিশতে আনুমানিক দেড় হাজার বছর সময় লাগে। পলিথিন সুস্থ্য পরিবেশ ও নির্মল প্রকৃতির অন্যতম প্রধান শত্রæ। এ শত্রæ আমাদের জীবনহানির জন্য যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে ধীরে ধীরে। অতি সন্তর্পনে। মাটি ও পানি আমাদের জীবন ধারণের উপকরণগুলির জন্য অন্যতম প্রধান অনুঘটক। পলিথিন বিষাক্ত দূষক হিসেবে আমাদের মাটি ও পানিকে ক্ষতি করে আমাদের জীবনকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। শুধু মানুষ নয় এ পৃথিবীর সকল জীবকূলের জন্যই পলিথিন মারাত্মক দূষক। ইউনেস্কোর তথ্য মতে, প্রতি বছর ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি প্লাস্টিক দূষণের কারণে মারা যায়। এক লাখ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে মারা যায়। পরিবেশবিদদের মতে, পলিথিন তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে পলিথিন বন্ধে প্রচলিত আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করলেও কাজ হচ্ছে না। পলিথিন বন্ধ হচ্ছে না। এখনো আগের মতই দেশব্যাপী পলিথিনের দেদারসে ব্যবহার ও ব্যবসা চলছে। এমনি অবস্থায় প্রচলিত আইন প্রায় অকার্যকরই হয়ে যাচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকে কিছুদিন আগে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, নজরদারি না থাকায় নিষিদ্ধ সত্তে¡ও রাজধানীর সব বাজারে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। ব্যবহৃত ওইসব পলিথিনের আশ্রয়স্থল হচ্ছে ময়লার ভাগাড় ও জলাশয়। এসব পলিথিন শেষ পর্যন্ত মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। এছাড়া যত্রতত্র পলিথিন পুড়িয়ে ফেলার কারণেও পানি, বায়ু ও মাটি দূষিত হচ্ছে। দেশের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ সর্বত্রই নিষিদ্ধ ছোট, বড়, মাঝারি পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে রয়েছে হাতলসহ ও হাতল ছাড়া পলিথিন ব্যাগ। প্রকাশ্যেই আইন ভঙ্গ করে ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাত ও বিপণি বিতানগুলোতেও প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করে চলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ দেখার যেন কেউ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানও এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সব দোকানেই বিক্রেতারা পলিথিনে ভরেই পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও পলিথিনে করেই নিচ্ছেন। মূলত, পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণেই দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা এ অবস্থার অবসান চাই। সাড়াশি অভিযান চালিয়ে পলিথিনকে দেশ থেকে নির্মুল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সরকারী ঘোষণার বাস্তবায়ন আমরা চাই। ‘সবার আগে পরিবেশ’- এমনি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকারের পরিবেশ বান্ধব এ ধরণের ইতিবাচক উদ্যোগের সাথে আমরা সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।