প্রথমবারের সফল প্রতিষ্ঠান এম.ইউ সী ফুড্স এবারও এগিয়ে

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের ন্যায় সফল হওয়া যশোরের এম.ইউ সী ফুড্স লিঃ আবারো খুলনার পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রে শুরু করেছে বিদেশী চিংড়ি ভেনামি চাষ। গত বছর দেশের দু’টি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয়া হলেও এবার দেয়া হয় ১১টিকে। যার মধ্যে খুলনা অঞ্চলের আটটি এবং কক্সবাজারের তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর খুলনা অঞ্চলের ওই আটটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও প্রথম চাষ শুরু করলো গতবারে সফল হওয়া যশোরের এম.ইউ সী ফুড্স লিঃ।
এম.ইউ সী ফুড্স লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, গত সোমবার থাইল্যান্ড থেকে আনা ১২ লাখ ভেনামির পোনা এনে তিনি পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রের ছয়টি পুকুরে ছেড়েছেন। তবে ১২ লাখ পোনা আনা হলেও এর মধ্যে সাড়ে নয়লাখ টেকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমানযোগে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পোনাগুলো আনতে গিয়ে বেশকিছু মারা যায়। তবে দেশেই ভেনামি পোনা উৎপাদন করা গেলে মৃত্যুহার কম হতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পোনা ছাড়ার সময় খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস. হুমায়ুন কবিরসহ মৎস্য বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, সরকারের মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ বছর দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চাষের অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলের আটটি ও কক্সবাজার অঞ্চলের তিনটি রয়েছে। খুলনা অঞ্চলের আটটির মধ্যে খুলনা জেলার ছয়টি ও সাতক্ষীরার জেলার দু’টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খুলনার ছয়টির মধ্যে এম.ইউ সী ফুড্স এর পক্ষ থেকে পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রে গত সোমবার রাতে পোনা ছাড়া হয়। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কয়রার আইয়ান ¯্রম্পি কালচার ও প্রান্তি এ্যাকোয়া কালচার এবং ডুমুরিয়ার ইএফজি এ্যাকোয়া কালচার। এছাড়া জেবিএস ফুড প্রডাক্ট ও এম.ইউ সী ফুড্স যৌথভাবে বটিয়াঘাটায় একটি জায়গায় ভেনামি চাষের অনুমোদন পেয়েছে বলেও তিনি জানান। এর বাইরে খুলনা অঞ্চলের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার যে দু’টি প্রতিষ্ঠান ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন পেয়েছে তা’ হলো শ্যামনগরের রেডিয়েন্ট ¯্রম্পি কালচার ও নলতা আহসানিয়া ফিস। তাছাড়া খুলনার ফ্রেশ ফিস্ ও জেমিনি সী ফুড্স নামের দু’টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন এখনও অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে।
অবশ্য গত বছরের চেয়ে এ বছর এক মাস ১০ দিন পিছিয়ে পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, গত বছর পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রে এম.ইউ সী ফুড্স পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছিল ৩১ মার্চ। কিন্তু এ বছর শুরু হলো ৯ মে। যদিও মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বছরের ১২ এপ্রিল খুলনা অঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও চাষ শুরু করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, চাকার চেয়ে বড় আর বাগদার চেয়ে ছোট কিন্তু বাগদার চেয়ে কিছুটা পরিষ্কার এমন একটি চিংড়ির নাম ভেনামী। আমেরিকান হাওয়াই প্রজাতির এ চিংড়ি উপমহাদেশের প্রায় ১৪টি দেশ দখল করে থাকলেও বাংলাদেশে এর চাষ প্রক্রিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক চাষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। অথচ বিশ^ বাজারে রপ্তানী হওয়া চিংড়ির প্রায় ৮০ ভাগই ভেনামী। দাম কম ও সুস্বাদু হওয়ায় ভেনামি চিংড়ি বিশ^ বাজার দখল করে আছে বলেও জানান বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন, খুলনার অতিরিক্ত সচিব গোপাল চন্দ্র দাশ। দাম কম হলেও অধিক উৎপাদন হওয়ায় চাষীদের লাভ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রে ভেনামি চাষ করে এম.ইউ সী ফুড্স লিঃ প্রতি হেক্টরে এক হাজার কেজি উৎপাদন পায়। যা সাধারণ বাগদা চাষের চেয়ে তিন গুনেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের ব্লাক টাইগার খ্যাত বাগদা চিংড়ি যেখানে হেক্টর প্রতি মাত্র ৩১৪ কেজি উৎপাদন হয় সেখানে ভেনামী চিংড়ি হয় প্রায় ১০ মে: টন। আবার সময়ও লাগে কম। বাগদা চাষ করে বিক্রি উপযোগী করতে যেখানে পাঁচ মাস সময় লাগে সেখানে ভেনামী চিংড়ি চাষে লাগে সর্বোচ্চ তিন মাস। এছাড়া বাগদা চিংড়ি বছরে মাত্র একবার চাষ করা গেলেও ভেনামী চাষের সুযোগ রয়েছে বছরে তিনবার।
বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব মতে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আয় ছিল ৬৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় হয় ৫৬৮ দশমিক তিন মিলিয়ন ডলার, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫৩৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয় ৫২৬ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে আয় হয় ৫০৮ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৫০০ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৪৬৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা’ ৪৭৭ মিলিয়ন ডলার (৪০৮৬ কোটি টাকা) নেমে আসে। এজন্য রপ্তানীকারদের দাবি ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দিয়ে বিশ^ বাজারে চিংড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে।