খালিশপুরে নাগরিক পরিষদের সমাবেশে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল-চিনিকল বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্ত বাতিল ও আধুনিকায়ন, আলীম জুট মিলের শ্রমিকদের ৬৪ সপ্তাহের বিলসহ বকেয়া সকল পাওনা পরিশোধ, দৈনিক ভিত্তিক, বদলীসহ শ্রমিকদের উৎসব বোনাসসহ সকল বকেয়া পরিশোধ, বকেয়া ৬ সপ্তাহের মজুরী ও ইনক্রিমেন্টসহ জুলাই মাসের ২ দিনের মজুরী পরিশোধ এবং পাটকল রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ ১৪ দফা দাবিতে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ-এর উদ্যোগে গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় খালিশপুর জুট মিলের প্রধান ফটকের সামনে গেট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি শ্রমিকনেতা মোজাম্মেল হক খান এবং সঞ্চালনা করেন পরিষদের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য এস এ রশীদ।
বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. আ ফ ম মহসিন, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক (বাসদ) খুলনা জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনা মহানগর সভাপতি এইচ এম শাহাদাৎ, সাধারণ সম্পাদক এড. মোঃ বাবুল হাওলাদার, নারী নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ, সিপিবি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা নেতা আঃ জলিল মল্লিক, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন খুলনা জেলা সভাপতি এড. নিত্যানন্দ ঢালী, টিইউসি মহানগর সভাপতি রঙ্গলাল মৃধা, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাবু, জেলা সহ-সভাপতি রুস্তম আলী হাওলাদার, খালিশপুর থানা নেতা মিজানুর রহমান স্বপন, কৃষক সমিতির খুলনা জেলা সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল হান্নান, গণসংহতি আন্দোলন খালিশপুর থানা আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন লিটু, জেলা যুব ইউনিয়ন নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি, মহানগর আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাজু, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কে এম হুমায়ুন কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি সনজিত ম-ল, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহবায়ক আল আমিন শেখ, সম্পাদক অনিক ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা নেতা সবুজ হোসেন দুর্জয়, শ্রমিকনেতা সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, বদলী শ্রমিকনেতা আবদুর রাজ্জাক তালুকদার, কাজী মাহামুদ মিন্টু, ইলিয়াস হোসেন, রিপন সরদার, শামস শারফিন শ্যামন, মোঃ নওশের আলী, রানা মল্লিক প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার লোকসানের খোঁড়াযুক্তি দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার শ্রমিকদের কর্মহীন করে চরম নিষ্ঠুর খেলায় মেতেছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে পাটকলের যে-লোকসান তা নিরাপরাধ শ্রমিকদের নয়। বর্তমান ও বিগত সকল সরকারের দুর্নীতিবাজ আমলাদের সৃষ্ট অবাধ লুন্ঠন-দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-ভ্রান্তনীতি-লুটপাট ও মাথাভারী প্রশাসনের কারণে পাটকলে লোকসান হচ্ছে। তাদের এই লোকসানের দায় নির্দয় ও নিষ্ঠুরভাবে শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার খেলা বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, পাটকল বন্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাটশিল্পের সাথে যুক্ত প্রায় তিন কোটি মানুষ। পাটকল বন্ধ হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আর পাট ক্রয় করবে না। এই সুযোগে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকলগুলো সিন্ডিকেট করে যথেচ্ছভাবে পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। এতে করে পাটচাষীরা পাটের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে। পাটকল বন্ধ হওয়ায় সামাজিক সা¤্রাজ্যবাদী ভারতে কাঁচা পাট পাচার আরো বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এক সময় এই পাটশিল্প বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো। বক্তারা বলেন, দুর্নীতি-লুটপাট-লুণ্ঠন ও অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে গণবিরোধীদের ঐক্য থাকে অটুট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিগত জোট সরকারের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী পথে হাঁটছে। বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই টাকা ভর্তুকি না দিয়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের (সোনালী করমর্দন) জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। অতীতেও এ রকম ঘটনা ঘটেছিল ২০০২ সালে। তখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে এশিয়ার বিখ্যাত আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন আদমজী পাটকল আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০০ কোটি টাকা। অথচ তৎকালীন জোট সরকার বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ১৩শ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল পাটকল বন্ধের জন্য। বর্তমানে এই সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তাই জনসম্মতিহীন সরকারের দেশ ও জনগণের প্রতি কোন দায় নেই। নেতৃবৃন্দ পাটকলসহ সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।