খালিশপুরে পাটকল শ্রমিকদের সমাবেশে বক্তারা

পুলিশী বাধায়
অবরোধ পন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ঃ পুলিশী বাঁধায় পাটকল শ্রমিকদের পূর্ব নির্ধারিত সড়ক অবরোধ অবশেষে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্যদিয়েই শেষ হলো। গতকাল শুক্রবার সকালে খালিশপুর থেকে মিছিল নিয়ে পাটকল শ্রমিকরা নতুন রাস্তার দিকে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে পুলিশী বাঁধার মুখে পড়ে। এরপর প্রতিবাদ সমাবেশে শ্রমিক নেতারা পুলিশী বাঁধার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি পাটকল চালুসহ বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বকেয়া পরিশোধ না হলে রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করবে শ্রমিকরা।
উৎপাদন বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলের মধ্যে (খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিল, চট্টগ্রামের কেএফডি, আর আর এবং সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুটমিল) ৫টি জুটমিলের শ্রমিকদের ২০১৫ সালের পয়লা জুলাই-এর প্রাপ্য বকেয়া বেতন, খালিশপুর জুটমিলের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, নাম ভূলের শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী পরিশোধের দাবিতে এবং কারখানা কমিটির সহ-সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ চাঁন মিয়া সর্দার ও ফোরকানের ওপর হামলার প্রতিবাদে খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে রাজপথ অবরোধ পালনের জন্য খালিশপুর থেকে মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা রওয়ানা হলে পথেই পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে শ্রমিকরা নতুন রাস্তার দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও খালিশপুরের বিআইডিসি রোডের কাশিপুর মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ কড়া প্রহরা দিয়ে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের ঘিরে রাখে। অবশেষে কাশিপুর মোড়ে অবরোধের পরিবর্তে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে বাধ্য হয় শ্রমিকরা।
কাশিপুর মোড়ের প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য ডালিম কাজী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হক খান, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য খুলনা জেলা সমন্বয়ক রুহুল আমিন, প্লাটিনাম জুটমিলের সাবেক সিবিএ নেতা মোঃ খলিলুর রহমান, কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহবায়ক মোঃ অলিয়ার রহমান, কারখানা কমিটির সহ- সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, মোঃ উজ্জ্বল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, কারখানা কমিটির কোষাধ্যক্ষ চাঁন মিয়া সর্দার, প্রচার সম্পাদক মোঃ শামীম, ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিকনেতা মোশাররফ হোসেন, জেজেআই শ্রমিকনেতা শামস শারফিন শ্যামন, নাসিম উদ্দীন জয়, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহবায়ক আল আমিন শেখ প্রমুখ।
অবরোধ করতে না দেয়ায় এবং পুলিশী বাঁধার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, সরকার পাটশিল্প ধ্বংস করে দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর হাতে জনগণের সম্পদ তুলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সরকার বিদেশি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল। সরকার মহামারী করোনার সময়ে শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে প্রায় ৬০ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী-বদলী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব কর্মহীন অভুক্ত শ্রমিকদের জীবন অনিশ্চিত ও দিশাহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে সকল পাটকল শ্রমিক সম্পূর্ণ প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ফলে তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের লালন-পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাটকল বন্ধের ২ বা ৩ মাসের মধ্যেই শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা স্ট্রোক, হার্ট, কিডনীসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত। অথচ টাকার অভাবে এসব অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা করাতে পারছে না। এমতাবস্থায় দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক- কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অচল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের সকল সম্পদ এদেশের জনগণের। অথচ সরকার জনগণের সম্মতি ছাড়াই সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করার ব্যবস্থা করছে। দেশের পাটশিল্পসহ সমস্ত খাতে চুরি-দুর্নীতি রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিবিদ ও বিজেএমসির কর্মকর্তারা হাজার-হাজার কোটি টাকা লোপাট করছেন। অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া বানাচ্ছে। অথচ সরকার দুর্নীতির শিরোপাধারীদের আটক ও বিচার করতে পারছে না।