নিষিদ্ধ হলেও সবার
দাবি সাব মার্সিবল

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মহানগরীতে গভীর নলকূপ ও সাব মার্সিবল টিউবওয়েল বসানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে খুলনা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ বা খুলনা ওয়াসার। পরিবেশ ও পানি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নাগরিক নেতৃবৃন্দেরও দাবি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হোক। কিন্তু গতকাল বুধবার খুলনা সিটি কর্পোরেশন-কেসিসি, খুলনা ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি এবং নাগরিক নেতৃবন্দের উপস্থিতিতে মিলল ভিন্ন চিত্র। নগরীর খালিশপুরের বাস্তুহারা কলোনী, দৌলতপুরের দত্তবাড়ি বস্তি, নেছারিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন বস্তি ও কদমতলা রেলওয়ে জংশন বস্তির বাসিন্দাদের মূল দাবিই ছিল সাব মার্সিবলের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি নাগরিক নেতৃবৃন্দের পরিদর্শনকালে খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিমকেও নিরব থাকতে দেখা যায়। ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলনের মাধ্যমে পরিবেশ নষ্ট হয় বলে পুকুর-জলাশয় সংরক্ষণের মাধ্যমে ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দেন যিনি সেই বেলার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুলও গতকাল বলতে বাধ্য হন ‘প্রয়োজন কোন বাঁধা মানে না’।
খুলনা নগরীর সুপেয় পানি, পয়নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এমন নানা সংকটের চিত্রও মেলে ওইসব এলাকা পরিদর্শনকালে। কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: আব্দুল আজিজ বলেন, দিনদিন নগরবাসীর চাহিদা বাড়ছে। চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে অনেক সমস্যার সমাধানও হচ্ছে। কিন্তু নতুন নতুন চাহিদা যুক্ত হওয়ায় পর্যায়ক্রমে সমাধানেরও আশ^াস দেন তিনি।
ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিমও কয়েক জায়গায় দ্রুত ওয়াসার লাইন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সংশ্লিষ্টদের তিনি তাৎক্ষনিক নির্দেশও দেন যাতে আবেদন করার সাথে সাথেই দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
দৌলতপুরের দত্তবাড়ি এলাকায় ওয়াসার পানি খাওয়ার অনুপযোগী এমনকি মাঝে-মধ্যে বালু আসে এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে তিনি একটি বাড়িতে গিয়ে পর্যবেক্ষন করেন। বালুর সত্যতা তাৎক্ষনিক পাওয়া না গেলেও পানযোগ্য কি না সেটি পরীক্ষা করা যায়নি রোজার জন্য। তবে পানিতে বালু পাওয়া গেলে তিনি পরে নমুনা নিয়ে খুলনা ওয়াসায় যাওয়ার পরামর্শ দেন নাগরিকদের।
ওই এলাকার একটি ফাঁকা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা-পলিথিনের স্তুপ দেখিয়ে নগরবাসী নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ডাষ্টবিন স্থাপনের দাবি জানান। একই সাথে কেসিসির পক্ষ থেকে গাড়ি গিয়ে সেখান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলারও দাবি জানান সেখানকার বাসিন্দারা।
এসময় অবশ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: এমদাদুল হক পরিবেশ রক্ষায় নগরবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
‘খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর নাগরিক চাহিদা পূরনে পরিবেশগত সক্ষমতা তৈরি’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে গতকালকের এভাবে এলাকা পরিদর্শন হয়। ইএসএইড ও কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা সুশীলন ও পরিবর্তন খুলনা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ওই প্রকল্পের আওতায় গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা ওই পরিদর্শন টিমে ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন, কেসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফকির মো: সাইফুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: মাহফুজুর রহমান লিটন, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান, নাগরিক নেতা মীনা আজিজুর রহমান, কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর মেহেদী হাসান, পরিবর্তনের নির্বাহী পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড, সোনালী দিন প্রতিবন্ধী সংস্থার ইশরাত আরা হীরা, বেলার মাহফুজুর রহমান মুকুল, কনসেন্স এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম বুলবুল, সুশীলনের সহকারী পরিচালক শাহীনা পারভীন, প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: শাহীন ইসলাম, মনিটরিং অফিসার নুর নবী প্রিন্স, হিউম্যানিটিওয়াচ’র নির্বাহী পরিচালক শরীফুল ইসলাম সেলিম, গ্লোবাল খুলনার শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, শরীফ সাইফুল বিন আযম, জাহানারা আক্তার বৃষ্টি প্রমুখ।
পরিদর্শন শেষে নগরীর বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে তা’ সমাধানের জন্য কেসিসির মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক রাস্তার পাশাপাশি ড্রেন নির্মানসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরে বলেন, নাগরিক সংকট মোকাবেলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নগরীর যে কোন স্থানে যে কোন সংস্থা রাস্তা করুক না কেন আগে ড্রেন নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।