কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ সুন্দরবনের দুবলার চরে পাপ মোচনের আশায় পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব। এ বছর রাস উৎসবে প্রায় ১৫ হাজার পুন্যার্থীর আগমন ঘটে। গত সোমবার সুন্দরবনের দুবলার চরে ভোর ৬ টায় সূর্য ওঠার আগেই পুন্যার্থীরা সাগরের লোনা জলে স্নান করেন। পুন্যস্নান শেষ হয় সকাল ৭ টায়। স্নানের পূর্বে পূণ্যার্থীরা সাগর পাড়ে মনের আশা পূরণ ও পুণ্য লাভের আশায় প্রার্থনা করেন। এর আগে রোববার পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা । সোমবার ভোরে স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেন। তবে এ বছর সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের কঠোর নিরাপত্তা সকলের চোখে পড়ার মতো। কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে রাস উৎসব। নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা শেখ মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, এ বছর খুলনা রেঞ্জে ৯৮ টি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে ২৩ শ ৮৮ জন পুনর্থীরা পাশ (অনুমতি) গ্রহন করেন। এতে ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬ শ ৭৩ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব বা মেলা হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকতার কমতি ছিলনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। এ বছর শুধুমাত্র সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের মানুষ অর্থাৎ পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দুবলার চরে যাবার অনুমতি পায়নি। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশ গ্রহণ করতে পেরেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে পূণ্যর্থীদের সব সময় মুখে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছেন। আলোরকোল বন টহল ফাঁড়ির স্টাফ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা ও ৩০ নভেম্বর সকালে দুবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের রাস উৎসব শেষ হলো। স্বাভাবিক সময়ে রাস মেলায় লক্ষাধিক মানুষের আগমন হলেও এবার মেলা বন্ধ থাকায় প্রায় ১৫ হাজার লোক সমাগম হয়েছে রাস উৎসবে। এর আগেও ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে কোনো মেলা বা উৎসব হয়নি। তিনি আরও বলেন প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে শুক্লাপক্ষের ভরা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে তিনদিন ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি এশিয়ার সব থেকে বড় সমুদ্র মেলা। খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ সালেহ বলেন, রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের অধিনস্থ এলাকায় ১৭ টি টহল টিম সপ্তাহ ব্যাপী টহল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সুন্দরবনে পরিচয় গোপন করে প্রবেশ করায় ৫ জন এবং আলাল নামে আলোচিত এক হরিন শিকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের (ডিএফও) ড.আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলার তিন দিন আগে নিজেই সুন্দরবনে অবস্থান করে টহল কার্যক্রম চালিয়েছি। নির্বিঘেœ পুর্ণাথীদের চলাফেরা নিশ্চিত করা হয় বলে তিনি জানান।