১৫ দিনের আল্টিমেটাম
পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিকদের ১০ দফা দাবির মুখে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ন্যূনতম ৭% কমিশনসহ দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ার পর দেশব্যাপী প্রতীকী ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকায় বিপিসি ও মালিক সংগঠনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান দাবি এবং দুই মাসের মধ্যে বাকি দাবিগুলোর বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি পেলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়সীমায় দাবি পূরণ না হলে তারা পুনরায় ধর্মঘটে যাবেন এবং প্রয়োজনে কর্মসূচি আরও কঠোর হবে।
আমাদের দৌলতপুর(খুলনা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল থেকে খুলনার দৌলতপুরের কাশিপুরে অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো ঘিরে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সকল প্রকার তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাম্পগুলোতে লম্বা সারি দেখা যায় এবং সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ ছিল।
খালিশপুর মোড়ে স্থানীয় কয়েকটি মাহেন্দ্র ও প্রাইভেট কারচালক অভিযোগ করেন, বিনা নোটিশে এমন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে। পাম্প বন্ধ থাকায় আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বালানি পাচ্ছি না।
ডিপো গেট ঘুরে দেখা যায়, ডিপোর গেট তালাবদ্ধ, ভেতরে কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোর অভ্যন্তরে নির্ধারিত ডিউটি অফিসাররাও কর্মসূচির সময় ছিলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশব্যাপী ৪,২০০টির বেশি পেট্রোল পাম্প এবং কয়েক হাজার ট্যাংকলরি নিয়ে গঠিত এই খাতের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে লাভজনক ব্যবসা পরিচালনায় সংকটে রয়েছেন বলে দাবি করেন।
বিপিসি নির্ধারিত বর্তমান কমিশন প্রতি লিটারে মাত্র ২-৩ শতাংশ, যা দিয়ে পাম্প পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে অভিযোগ মালিকদের।
এছাড়া, তারা বলেন, অতিরিক্ত লাইসেন্স ফি, একাধিক সংস্থার হয়রানি, এবং অবৈধভাবে খোলা স্থানে জ্বালানি বিক্রির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে তেল বিক্রিতে ন্যূনতম ৭% কমিশন নির্ধারণ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ইজারা মাশুল পুর্বের ন্যায় বহাল রাখা। ডিপোর গেটে লাইসেন্স নবায়নের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও কাগজপত্র পরীক্ষা নির্দিষ্ট স্থানে সীমিত রাখা। বিপণন কোম্পানির অনুমোদন ছাড়া তেল বিক্রি বন্ধ। অবৈধ মিনি পাম্প ও ঘরোয়া ব্যবস্থায় তেল বিক্রি নিষিদ্ধকরণ। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ক্যালিব্রেশনসহ বিভিন্ন ফি বাতিল। লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ট্যাংকলরি চালকদের সংকট সমাধানে ব্যবস্থা। পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানা অধিদপ্তর থেকে পাম্প লাইসেন্স বাধ্যবাধকতা বাতিল। ট্যাংকলরির আন্তজেলা চলাচলের জন্য রুট পারমিট ইস্যু। বিএসটিআইয়ের দায়িত্ব শুধু ডিসপেনসিং ইউনিট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা।
এদিকে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে কর্মসূচিতে মৌখিক সংহতি প্রকাশ করেছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, গ্যাস সরবরাহ নিয়মিত রাখা, মূল্যহার সমন্বয়, লাইসেন্স প্রক্রিয়ার সরলীকরণ প্রভৃতি।
তবে অনেকে বলেন, হঠাৎ এমন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ ও পরিবহন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা চেম্বার অব কমার্সের এক সদস্য বলেন, চাহিদা যৌক্তিক হলেও জনদুর্ভোগের পথ বেছে নেওয়া সমাধান নয়।
খুলনা ট্র্যাংকলরি মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকায় বিপিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের লিখিত প্রক্রিয়া শুরু না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচির প্রস্তুতি নেব।