খুলনা বিভাগীয়
শিশু হাসপাতাল

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা কেডিএ’র ময়ুরি আবাসিক এলাকার দক্ষিণপাশে সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক সংলগ্ন প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর নির্মিতব্য খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের প্রথম পর্বের কাজ শেষের পথে। দ্বিতীয় পর্বের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজও শীঘ্রই শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ।
প্রথমপর্বে বেজমেন্টসহ এক তলা পর্যন্ত কাজের জন্য ২৪ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয়পর্বে দ্বিতীয় থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। দ্বিতীয়পর্বের এ কাজ শেষ হলেই ২শ’ বেডের মধ্যে একশ’ বেডের শিশু হাসপাতাল চালু করা যাবে। এরপর পরবর্তীতে আরও পাঁচ তলা করে ১০ তলার এ ভবনেই হবে বিভাগীয় সরকারি শিশু হাসপাতাল। এ হাসপাতালটি নির্মাণ হলেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে। সেই সাথে খুলনার একমাত্র বেসরকারি শিশু হাসপাতালের ওপরও চাপ কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটের অর্থে খুলনা সিভিল সার্জনের আওতায় এ হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণ করছে গণপূর্ত বিভাগ-১, খুলনা। গণপূর্ত বিভাগের স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচী’র আওতায় ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক অপারেশন প্লানের মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালিশপুরের জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে খুলনায় একটি বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী ২০১২ সালেই হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য জায়গার খোঁজা শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। প্রথমে নগরীর বয়রায় মন্নুজান স্কুলের সামনে জায়গা দেখা হলেও সেটি নির্বাচন করা হয়নি। সর্বশেষ ডুমুরিয়ার চকমাথুরাবাদ ও বটিয়াঘাটার কৃষ্ণনগর মৌজার সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়কের পাশের খুবি ও ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পের মধ্যবর্তী স্থানে চার একর ৮২ শতক জমি নির্ধারণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ শেষে তা’ গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। এর পরই টেন্ডারসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ।
নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথমপর্বের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখন বাকী শুধু সৌন্দর্যবন্ধনের কাজ। কিন্তু যেহেতু দ্বিতীয় পর্বের নির্মাণ কাজের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সেহেতু এখনই সৌন্দর্য বন্ধনের কাজে হাত না দিয়ে একবারে ৫ম তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ করে একসাথেই এটি করা হবে।
গণপূর্ত বিভাগ-১, খুলনা’র নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ^াস বলেন, জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় দরপত্র আহবানপূর্বক ঠিকাদারের সাথে ২০২০ সালের ১৪ মে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। বর্তমান চুক্তিতে বেজমেন্টসহ একটি ফ্লোর ধরা আছে। সার্ভিস পাইল কাটিং এবং কাজ চলা অবস্থায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে জমির প্রবেশ পথ নিয়ে জটিলতা থাকায় কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। এরপর কেডিএ’র পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে জমির প্রবেশ পথ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া গেলে আবারো শুরু হয়। বর্তমানে পবেশ পথের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। প্রথম তলার ছাদ ঢালাই শেষে এখন সিলিং প্লাষ্টারের কাজ চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একইসাথে তিনি বলেন, দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজের দরপত্র মূল্যায়ণ চলমান রয়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক থেকে নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ২২ ফুটের একটি রাস্তার জন্য আবেদন করায় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যেই অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন কেডিএ ওই রাস্তার জায়গা লিখে দেবে এমন পর্যায়ে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
তমা কনষ্ট্রাকশন লি: এবং রইতি এন্টারপ্রাইজ নামের দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। বর্তমানে খুলনার সিভিল সার্জন এ হাসপাতাল নির্মাণসহ সার্বিক তদারকি করলেও ভবন নির্মাণ শেষ হলে এর জন্য পৃথক পরিচালক নিয়োগসহ স্বতন্ত্রভাবেই অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও সিভিল সার্জন জানান।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ের শিশু হাসপাতাল নির্মাণ খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প। দীর্ঘদিন পর হলেও এটি যে নির্মাণ হচ্ছে এটি খুলনাবাসীর জন্য একটি সুখবর। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে তিনি পদ্মার এপারের মানুষের স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সেবা এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজ সঠিকভাবে তদারকির জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।