সোহেল মাহমুদ ঃ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি। ইতিমধ্যেই আধুনিক দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের জন্য চলছে একাডেমির সাউন্ড, লাইটসহ নানা ধরনের উপকরণ স্থাপন কাজ।
২০১১ সালের ৫ মার্চ নগরীর খালিশপুরের প্রভাতী স্কুল মাঠের জনসভায় অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ দিন খুলনার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিকরা যৌথভাবে আন্দোলন করে খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাবাসীর সেই আশা পূরণ করেন। ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শিল্পকলা একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ১ একর জমির ওপর ২০১৬ সালের ১০ জুন খুলনার শিল্পকলা একাডেমীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত আধুনিক দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমীতে রয়েছে ৫০০ আসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং প্রতিধ্বনিমুক্ত অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটরিয়া, মুক্তমঞ্চ, আর্ট গ্যালারি, ভিভিআইপি ও সাধারণ কক্ষ, ডরমেটরী, ডাইনিং রুম, সেমিনার রুম, রিহার্সেল রুম, লিফট, ও লাইব্রেরী। এছাড়া সর্বাধুনিক সাউন্ড ও লাইট সিষ্টেম। খুলনার শিল্পকলা একাডেমি বাংলাদেশের যে কোনো শিল্পকলা একাডেমীর চেয়ে ব্যতিক্রম ও দৃষ্টিনন্দন।
খুলনা আবৃত্তি সমন্বয় মঞ্চের আহবায়ক কাজল ইসলাম বলেন, শিল্পকলা একাডেমি আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। এতদিনে আমরা সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য একটি জায়গা পেয়েছি। তিনি বলেন, শিল্পকলা ভবন নির্মাণ হলেও জনবলের অভাবে এখনও এটা অনেকটাই অরক্ষিত। তিনি দ্রুত এটি কার্যকরের দাবি জানান।
খুলনার আব্বাস উদ্দীন একাডেমির পরিচালক এনামুল হক বাচ্চু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল শিল্পকলা একাডেমির নির্মাণ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, খুলনার শিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের কোন জায়গা নেই। যে কারনে তিনি দ্রুত শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধনের দাবি জানান।
খুলনার আবৃত্তি শিল্পী সালমান মেহেদী মুকুট বলেন, খুলনায় শিল্প চর্চার কোন সুযোগ ছিলনা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সদিচ্ছার কারনে আমরা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন পেয়েছি। এটি দ্রুত কার্যকর এবং প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধনের প্রত্যাশা করেন।
খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সচিব জেলা কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বলেন, খুলনা শিল্পকলা একাডেমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক শিল্পকলা একাডেমীর নির্মাণ শেষ হয়েছে। এটি এখন উদ্বোধন যোগ্য। তিনি বলেন, খুলনাতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য কোন অডিটোরিয়াম নেই। খুলনা শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধন হলে খুলনার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান হবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা রাখবে।
খুলনার সাংস্কৃতিক কর্মী সাবিত্রী গাইন বলেন, শিল্পকলা একাডেমি আমাদের বহুদিনের দাবি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রাণের একটি সংগঠন। এখানকার যে স্থাপত্য শৈলী রয়েছে সেটা একেবারেই আলাদা বিশেষত পানির উপর নির্মিত মুক্ত মঞ্চটি একটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ কমিটির সদস্য মকবুল হোসেন মিন্টু বলেন, খুলনায় দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমির নির্মাণ শেষ হয়েছে এবং অচিরেই এটি প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, করোনার কারনে উদ্বোধন কিছুটা বিলম্বিত হলেও এটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দ্রুতই উদ্বোধন হবে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তারা জানান, একটি আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের জন্য অনেক আন্দোলন করেছে খুলনার মানুষ। অবশেষে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রতীক্ষার ক্ষণ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। চালুর পর এটিই হবে খুলনার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র।