খুলনা-৪ আসনের
সংসদ সদস্য

আব্দুস সালাম মুর্শেদী

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ৪ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহারের নাম হলো পদ্মা সেতু। এমন মন্তব্য করেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলো দেশের মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনার নাম। বাংলাদেশের জন্মের পর সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। এটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকা এবং আত্মবিশ^াসের ফসল। বিশ^কে তাক লাগিয়ে দিয়ে তিনি এই সেতু নির্মাণ করেছেন। বলা যেতে পারে একটি কঠোর প্রতিবাদের নাম হচ্ছে পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার মানুষ এমনটি উল্লেখ করে সাবেক এই ফুটবলার এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মূর্শেদী বললেন, পদ্মা সেতু হলে মোংলা বন্দরের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে বহুগুন। সেই সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপরও চাপ কমবে। পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ কম লাগবে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা মোংলাকে বেছে নেবেন। মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে আরও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্যোক্তারা এখানে শিল্পায়নের জন্য ইতোমধ্যেই জমি কিনেছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলেরও কার্যক্রম চলছে। বন্ধ শিল্প চালু হওয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্প গড়ে উঠবে খুলনাঞ্চলে। এছাড়া রূপসী রূপসা তথা সুন্দরবন দেখতে পর্যটকরা ঢাকা থেকে আসতে পারবে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায়। এর ফলে দেশের বৃহত্তম পর্যটন শিল্প হবে সুন্দরবন। সেই সাথে বাগেরহাটের খানজাহান(রহ:) এর স্মৃতি বিজড়িত ষাটগম্বুজ এবং কুয়াকাটায়ও পর্যটকরদের আগমন ঘটবে বেশি। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করেই খুলনা-বাগেরহাটে গড়ে উঠবে নতুন নতুন হোটেল ও মোটেল। কক্সবাজারের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন শিল্প হবে সুন্দরবন।
এসব কারণেই বিমান বন্দরের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের এখন প্রধান দাবি হচ্ছে বিমান বন্দর। যেটি বাগেরহাটের রামপালের ফয়লায় হচ্ছে। খানজাহান আলী(রহ:) বিমান বন্দর নাম দিয়ে এ বিমান বন্দরের কাজ এগিয়ে চলছে। খুব শীঘ্রই এর কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি। বিশেষ করে খুলনাঞ্চলে শিল্প কল কারখানা বাড়লে বিমান বন্দরের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিমানকেই যানবাহনের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেন। কেননা এতে কম সময়ে বেশি কাজের সুযোগ থাকে।
পদ্মা সেতু হলে শিল্প নগরী খুলনা তার অতীত গৌরব ফিরে পাবে উল্লেখ করে আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন এ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা। কেননা গ্যাস হলে শিল্পায়নের সুযোগ আরও বেশি সৃষ্টি হবে। ঢাকা-ময়মনসিংহসহ যেসব এলাকায় গ্যাস রয়েছে সেসব স্থানে নতুন নতুন গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়ন হচ্ছে, টেক্সটাইল মিল বাড়ছে। যেটি খুলনায়ও করা সম্ভব। পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলে এতোই শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে যে, এর ফলে সাত থেকে আট বিলিয়ন রপ্তানী বেড়ে যাবে। যা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই পদ্মা সেতুর মতো এই বিশেষ উপহার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার মানুষ পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি এ অঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে প্রধামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় এ এলাকার মানুষ ছিল অবহেলিত। কিন্তু শেখ হাসিনার বলিষ্ট পদক্ষেপের কারনে অবহেলিত এলাকা আর থাকছে না। উন্নয়নের চূড়ান্ত রূপ পেলো পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে। পদ্মা পারের দু:সহ স্মৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়েই অনেকে তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা অথবা অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি সময় লাগতো খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে অথবা ঢাকা থেকে খুলনা আসতে। আর এখন সর্বোচ্চ চার ঘন্টায় ঢাকা-খুলনা যাতায়াত করা যাবে।
পদ্মা সেতু গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, এর ফলে এ অঞ্চল থেকে মূমূর্ষ রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া যাবে খুব সহজে। ফেরি পার হতে গিয়ে আগে অনেক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। এখন আর অপেক্ষা করতে গিয়ে রোগীদের মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
এছাড়া পদ্মা সেতু দেশের মধ্যে আন্ত: ও আঞ্চলিক যোগাযোগ যেমন সহজ করবে তেমনি বহি:যোগাযোগ তথা আন্তর্জাতিক যোগাযোগেও ভূমিকা রাখবে।
সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি পদ্মায় রেল সংযোগকে আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপদ ভ্রমণের জন্য রেল একটি অন্যতম মাধ্যম। খুলনার সাথে পদ্মা রেল সেতুর যোগাযোগের জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও তিনি আশা করেন।
কৃষি ক্ষেত্রেও পদ্মা সেতু ব্যাপক ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, এক সময় দেখা গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিপণ্য ঢাকা বা দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিতে গিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। যার ফলে সেগুলো পঁচে নষ্ট হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু এখন দিনে দিনেই কৃষিপণ্য দেশের যে কোন স্থানে পাঠানো সম্ভব হবে। এর ফলে কৃষকরা লাভবান হবে। হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
পদ্মা সেতুর পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরও কিছু বিকল্প সড়কের প্রস্তাব দিয়ে আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, খুলনার জেলখানা ঘাট থেকে চার লেনের রাস্তা করে তেরখাদা হয়ে ভাঙ্গার সাথে সংযোগ করা হলে ১১টি জেলার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। এজন্য ভৈরবের জেলখানা ঘাটে তিনি ঝুলন্ত সেতু করার জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাব দিয়েছেন। যার আলোকে জাইকা এবং সড়ক ও জনপথ ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। পদ্মা সেতুর কারণেই এমন চাহিদা তৈরি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাওয়ার প্রয়োজন হবে না, বরং তিনি জনগনের এ চাহিদার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে তার বিশ^াস। কেননা না চাইতেই যখন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু দিয়েছেন সুতরাং মানবতার মা হিসেবে তিনি এ অঞ্চলের উন্নয়নে আরও যেসব চাহিদা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারেও পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা করেন।