# খুলনা জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ
# গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকি ২২ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ স্বপ্নের, গৌরবের, দৃঢ়চেতার পদ্মাসেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে ঋণী করেছেন বলে উল্লেখ করেন খুলনার জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এ ঋণ যুগ যুগ ধরেও শোধ করা যাবে না। এছাড়া পদ্মাসেতু চালু হলেও খুলনায় বিমান বন্দরের চাহিদা শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আরও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রামপালের ফয়লার নির্মাণাধীন বিমান বন্দরের কাজকে এগিয়ে নেয়া উচিত। সেই সাথে খুলনাঞ্চলের যেসব সংকীর্ণ সড়ক আছে সেগুলো সম্প্রসারণ করে পরিকল্পিত উন্নয়ন গড়ে তোলার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক্ষেপ নেবেন বলেও তিনি আশা করেন। কেননা শেখ হাসিনার প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা আছে, এমনকি শেখ হাসিনারও এ অঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আর মাত্র ২২দিন পর পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণ। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তে ঘটবে কোটি মানুষের উপস্থিতি। অনুষ্ঠিত হবে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আর যারা পদ্মা সেতু নির্মাণের ষড়যন্ত্র করেছিল তারাই এ অনুষ্ঠানকে বাঁধাগ্রস্ত করতে চাইছে বলেও তিনি মনে করেন। এজন্য সরব উপস্থিতির মধ্যদিয়ে পদ্মাসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানানোর পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে কালিমা লেপনেরও আহবান জানান।
পূর্বাঞ্চলকে দেয়া সাক্ষাতকারে জেলা পরিষদ প্রশাসক বলেন, পদ্মা সেতু এমন একটি স্থাপনা যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে মুগ্ধ করেছে। এ সেতুর মধ্যদিয়ে পদ্মার এপারের ২১ জেলার সকল মানুষই উপকৃত হবে। এ অঞ্চলের মানুষের অতীত দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এক সময় খুলনা থেকে গাজী রকেটে বা লঞ্চে করে ঢাকায় যেতে হতো। সড়ক পথে যেতে পার হতে হতো ছয়টি ফেরি। এখন রয়েছে একটি ফেরি। সেখানেও তিন, চার অথবা পাঁচ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় বসে থাকতে হতো। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক কষ্ট করে এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু করতে হয়েছে। এ সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করেও বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা অনেক খেলা করেছেন। কাজ শুরুর আগেই পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে এমনটি প্রচার করা হয়েছে। যে কারণে বিশ^ব্যাংক ফিরে গেলো। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীও পদত্যাগ করলেন। দুর্নীতির অভিযোগ এনে কানাডার আদালতে মামলাও হলো। মামলায় দুর্নীতি প্রমাণ না হওয়ায় বিশ^ব্যাংক যখন আবারো টাকা দিতে চাইলো প্রধানমন্ত্রী তা না নিয়ে রেমিটেন্স ও নিজস্ব অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু করার পরিকল্পনা নিলেন। শেষ পর্যন্ত সেটিও বাস্তবায়নও হলো। এখন শুধু ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের অপেক্ষার পালা। পদ্মা সেতুতে এখন লাইটিং হচ্ছে। সাড়ে ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতু নির্মাণের কথা আগের কোন সরকার চিন্তাই করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটি নির্মাণ করে দেখিয়েছেন তিনি যা সিদ্ধান্ত নেন তা’ করেন। যদিও এ সেতু নিয়ে কেউ কেউ বিরুপ মন্তব্যও করেছিলেন। বলেছিলেন পদ্মা সেতু ভেঙ্গে পড়বে। কিন্তু আজ শুধু পদ্মাসেতু দৃশ্যমানই নয়, বরং উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
পদ্মাসেতুর পাশাপাশি দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে খুলনা জেলা আ’লীগ সভাপতি বলেন, আজ দেশের ৬৫ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে মেট্রোরেল চালু হচ্ছে, কর্ণফুলিতে টানেল তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা যত জায়গায় হাত দিয়েছে সব জায়গার উন্নয়ন হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে মংলা বন্দর আরও সচল হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। মংলা, পায়রা, বেনাপোল, ভোমরা বন্দর থেকে আমদানী-রপ্তানী বাড়বে।
পদ্মা সেতুর নামকরণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকটা উদারতার পরিচয় দিয়েছেন উল্লেখ করে জেলা পরিষদ প্রশাসক বলেন, এ নিয়ে যখন গণভবনে মিটিং হয়েছিল তখন তিনিসহ ৬৪টি জেলার জেলা পরিষদ প্রশাসকই শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তার নামে না করে পদ্মা নদীর নামেই সেতুর নামকরণ করেন।
পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে শেখ হারুন বলেন, রাজধানীর সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষের যে হা হুতাশ করতো এখন তার অবসান হবে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। সেই সাথে অর্থনৈতিকভাবেও খুলনাঞ্চল সমৃদ্ধ হবে।
পদ্মা সেতুর পাশাপাশি পদ্মা রেল সেতুর ব্যাপারে তিনি বলেন, খুলনার মানুষ যাতে সড়কের পাশাপাশি রেলের সুবিধা পায় সেদিকেও নজর রাখা উচিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন খুলনা-কোলকাতা ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ বন্ধ থাকার পর যেহেতু আবারো সরকার চালু করেছে সেহেতু পদ্মা রেল সেতুর সুবিধাও খুলনাবাসী পাবে এ বিশ^াস তার আছে। তবে এ ব্যাপারেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পদ্মা রেল সেতুর রেল লাইনের শেষ স্টপেজ তিনি খুলনায় করার দাবি জানান।
সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন এ অঞ্চলের যেসব সড়ক রয়েছে সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ করা দরকার। এজন্য তিনি সড়ক বিভাগকে নতুন নতুন প্রস্তাবনা সরকারের কাছে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ অঞ্চলের কোন প্রস্তাবনা গেলে তিনি সেটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন।