# জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো: শফিকুল ইসলাম মধু

আর বাকী ২৩দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ মাওয়ায় পদ্মাসেতু চালু হলে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর প্রাণ ফিরে পাবে। আরও কার্যকরী হবে এসব সমুদ্র ও স্থল বন্দরগুলো। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে পদ্মাসেতু পারাপারের জন্য যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি পুন:বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এবং খুলনা জেলা সভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি বলেন, টোলের হার বাড়ানো হলে তার প্রভাব পড়বে পরিবহন সেক্টরে। যেটি সর্বশেষ জনগনের ওপরও গিয়ে পড়বে। সুতরাং জনগনের জন্য করা সেতু শুধু টোলের কারণে জনদুর্ভোগে পড়–ক এটি কারও কাম্য নয়। এ বিষয়টি তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোভাবকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কেননা, বিশ^ব্যাংক, জাইকাসহ যখন বিদেশীরা পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন তিনিই অনেকটা বিশ^ মোড়লদের সাথে চ্যালেঞ্জ করেই এ সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেন। তাছাড়া তিনি নিজেও যেহেতু এ অঞ্চলের মানুষ এবং বঙ্গবন্ধু কণ্যা, সেহেতু তার রাজনীতিও জনগনের জন্য। তাই জনগনের স্বার্থেই টোলের হার কমিয়ে এটিকে আরও কার্যকর করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
মাওয়ায় পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ করে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আর মাত্র ২৩দিন পর প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়েই এ সেতুর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাত্র তিন মিনিটে টোল আদায়ের জন্য মেশিনও বসানো হয়েছে। থাকছে মেনুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়েরও ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলবে এমন প্রস্তুতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জনগনের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সে বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখার দাবি জানান জাতীয় পার্টির এই কেন্দ্রীয় নেতা।
পদ্মাসেতু সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য এটি অবশ্যই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে এ অঞ্চলের মানুষ আনন্দিত। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তাকে অভিনন্দন জানান।
পদ্মাসেতু চালু হলে এ অঞ্চলের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন সহজে করা যাবে দেশের অন্যসব অঞ্চলে। বাড়বে ট্রানজিট সুবিধাও। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটবে। তবে পদ্মাসেতুর ফলে খুলনায় বিমান বন্দরের চাহিদা শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যদিয়ে আরও বিমান বন্দরের চাহিদা বরং বেড়েছে। কেননা, মংলা ইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য যেমন বিদেশীরা আসবে তেমনি সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের জন্যও বিমান বন্দর জরুরি। সেই সাথে খুলনা-নলিয়ান সড়ক দ্রুত বাস্তবায়ন, মংলা নদীতে সেতু নির্মানের মধ্যদিয়ে জয়মনিরগোল পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশাপাশি সড়ক বিভাগের অন্যান্য যেসব পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
পদ্মাসেতুকে ঘিরে দেশী-বিদেশী অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে জাপা নেতা মধু বলেন, দেশের মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোন রাজনীতি করা উচিত নয়। এটি এগিয়ে নিতে যেমন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা করা উচিত তেমনি যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদেরও আরও মার্জিতভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত। কেননা সরকারি-বিরোধী উভয় দলের মধ্যে আন্তরিকতা না থাকলে দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। তাছাড়া পদ্মাসেতুকে ঘিরে এখনও যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে সেগুলো পরিহার করে তিনি এর কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানান।
পদ্মাসেতুকে ঘিরে এ অঞ্চলে শিল্প বিপ্লব ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে খুলনার টেক্সটাইল, দাদা ম্যাচ, নিউজপ্রিন্ট, হার্ডবোর্ড মিলসহ যেসব পাটকল বন্ধ রয়েছে সেগুলো সচল করার জন্যও সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প কল কারখানাগুলো যদি লাভজনক হতে পারে তাহলে সরকারি মিলগুলো কেন লাভজনক করা যাবে না এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
পদ্মাসেতুকে ঘিরে এ অঞ্চলের যে শিল্প বিপ্লব ঘটবে তার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে যাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।
সর্বোপরি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তার কাছে খুলনাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আর এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশার দিকটি বিবেচনা করে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য তিনি প্রধামন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।