শ্রম ও কর্মসংস্থান
প্রতিমন্ত্রী
বেগম মন্নুজান সুফিয়ান

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ২ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন স্বাধীনতা আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দিলেন পদ্মা সেতু। সুতরাং তাদের এ অবদান জাতি কোনদিন ভুলবে না। দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন।
স্বপ্নের, গৌরবের এবং আত্ম মর্যাদার পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আর মাত্র দু’দিন বাকী। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে তিনি দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে এ সাক্ষাতকার দেন।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বাঙালী জাতির জন্য লড়াই করে গেছেন, কারাভোগ করেছেন এমনকি তাকে যখন ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও তিনি বাঙালী জাতির মুক্তির কথা বলেছেন। সেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানীদের পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এভাবেই বঙ্গবন্ধু আমাদের যেমন একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন তেমনি তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে উপহার দিলেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তাদের এ কীর্তি ততোদিন থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পদ্মা সেতু ২০৪১ এর রূপকল্প বাস্তবায়নেরও একটি সিড়ি বলে তিনি উল্লেখ করেন। যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে তা’ বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু জনভোগান্তি দূর করতে যেমন ভূমিকা রাখবে তেমনি যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে স্বাক্ষী হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু অনেকেই করতে পারতো, কিন্তু পারেনি। যেমনটি স্বাধীনতা অনেকে দিতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতা দিতে চেয়েছিলেন, প্রিতীলতা, সূর্যসেন, হাজী শরীয়ত উল্লাহ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ অনেকেই। কিন্তু একমাত্র বঙ্গবন্ধুই পেরেছেন স্বাধীনতা দিতে, অন্য কেউ কিন্তু পারেননি। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করে প্রমাণ করেছেন কোন ষড়যন্ত্রের কাছে তিনি হার মানেননি। অথচ এই পদ্মা সেতু যাতে না হয় সেজন্য অনেকেই ষড়যন্ত্র করেছিল। ষড়যন্ত্রের কারনেই বিশ^ ব্যাংক অর্থায়ন করতে চেয়েও পিছিয়ে যায়। তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করতে চেয়েও ষড়যন্ত্রকারীরা পারেনি বলেও উল্লেখ করেন এই শ্রমিক নেত্রী। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে বলেও জানান তিনি।
পদ্মা সেতু হলে দেশের শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে উল্লেখ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, এর ফলে শিল্প নগরী খুলনা তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে। বন্ধ মিল কল-কারখানা চালুর সুযোগ সৃষ্টি হবে। নতুন নতুন মিল, কল-কারখানা তৈরি হবে। আর এর ফলে সৃষ্টি হবে বিপুল কর্মসংস্থানের। মোংলা বন্দরে যে কর্মচাঞ্চল্য ইতোমধ্যেই ফিরে এসেছে তা’ আরও কয়েকগুন বেড়ে যাবে। আর পায়রা বন্দরের কথাতো কেউ চিন্তাই করেনি। সেটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি উন্নয়নের নেত্রী। আর পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলের এ দু’টি সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দরও চাঙ্গা হবে। আমদানীকৃত পণ্য এসব বন্দর দিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
পদ্মা সেতুর পর এবার বাগেরহাটের খানজাহান আলী(রহ:) বিমান বন্দরের কাজও দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে উল্লেখ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, একে একে সব উন্নয়নমূলক কাজই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে নেয়া হবে। সে বিশ^াস তার রয়েছে। পদ্মা সেতু হলেই বিমান বন্দরের চাহিদা কমে যাবে না বলেও তিনি মনে করেন। কেননা এখন মানুষের আরও কর্মব্যস্ততা যেমন বাড়বে তেমনি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও পর্যটকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বেশি কাজ করতে চাইবে। এজন্য বিমান বন্দরের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যে হারে কর্মব্যাস্ততা বেড়ে যাবে তাতে এ অঞ্চলের রাস্তাঘাটের ওপরও পড়বে বাড়তি চাপ। এজন্য যেসব সড়ক এখনও চার লেনে নেই সেগুলোকে চার লেন এবং কিছু সড়ক ছয় লেনে করার পরিকল্পনা এখনই হাতে নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। যদিও এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বিষয়ও প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনায় রয়েছে। কেননা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই ইতোমধ্যে মংলা বন্দরের জেটির উন্নয়ন ও ড্রেজিং পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এভাবেই অন্যান্য সড়ক, সেতুর উন্নয়নেও হাতে নেয়া হবে নতুন নতুন পরিকল্পনা। যার ফলে খুলনা-ঢাকার পথ আরও কমে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে এই পদ্মা সেতু এমনটি উল্লেখ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার উম্মোচিত হলো। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।