বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান

শেখ সৈয়দ আলী

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ৯ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে বদলে যাবে পদ্মার এপারের একুশ জেলার অর্থনৈতিক চিত্র। এমনটি উল্লেখ করে বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ২৫ জুন খুলনাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হবে। ওইদিনকে সামনে রেখে খুলনার বিভিন্ন স্থান সাজানো হবে নতুন সাজে। বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন ও দৌলতপুর থানা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকেও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে থেকেই আলোকসজ্জা করা হবে। ওইদিন শুধু খুলনার মানুষের নয়, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নয় বরং গোটা দেশের জন্যই একটি আনন্দের দিন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এটি যে খুলনার মানুষের জন্য কতটা আনন্দের সেটি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলেও ঢাকায় গেছি, স্বাধীনের পরও গেছি এখনও যাচ্ছি আর পদ্মা সেতু চালু হলেও যাবো। এটি ভাবতেও অবাক লাগে যে, পদ্মা পাড়ি দেয়ার সেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিড়ম্বনার সত্যিই অবসান হচ্ছে !’ তিনি বলেন, এক সময় ঢাকায় যেতে গিয়ে কখনও কখনও ক্ষেত্র বিশেষে ২৬/২৭ ঘন্টাও লাগতো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনও কখনও স্পিড বোটেও পার হতে হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা থেকে রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় গিয়ে নাস্তা করা যাবে। যেটি অনেকটা কল্পনায় আনতেও অবাক লাগে। অনেকে আবার সকালে ঢাকায় গিয়ে কাজ সেরে রাতে খুলনায় ফিরে আসতে পারবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই যে সাফল্য এজন্য একমাত্র কৃতিত্বের দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ^ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে তিনি যে ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে অবশেষে যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে যাচ্ছেন এটি জাতি কোনদিন ভুলবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পদ্মা সেতু চালু হলে মংলা বন্দরে আরও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে উল্লেখ করে বিজেএ চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় বিএনপি-জামায়াত সরকার এ বন্দরকে অচল করে রেখেছিল। জাহাজ সংকটের কারণে পাট রপ্তানীতে ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের। দিনের পর দিন অপেক্ষা করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানী করতে হতো। এর ফলে অনেক সময় সিডিউল বিপর্যয়ের মুখেও পড়তে হতো রপ্তানীকারকদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মংলা বন্দরকে সচল করা হয়। সর্বশেষ যে বাঁধাটি ছিল সেটিরও অবসান হচ্ছে ২৫ জুন। এর ফলে মংলা বন্দর দিয়ে আমদানী-রপ্তানীও বাড়বে। বন্দর আরও সচল হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে একদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল পণ্য কম সময়ে ঢাকা বা পূর্বাঞ্চলে নেয়া যেমন সহজ হবে অপরদিকে ঢাকার গার্মেন্টসের পণ্য সামগ্রীও মংলা বন্দর দিয়ে রপ্তানী করা যাবে। সেই সাথে গার্মেন্টেসের কাঁচামালও মংলা বন্দর দিয়ে আমদানী করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
পদ্মা সেতুর সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে যেমন বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না আর মহান আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনা বেঁচে না থাকলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আমরা পেতাম না।
পদ্মা সেতুর ফলে খুলনাসহ ২১ জেলা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে উল্লেখ করে শেখ সৈয়দ আলী বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের আত্ম মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। একদিকে বিশ^ ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে এ সেতু করার ফলে বিশ^ব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে তেমনি এখন যেসব মিল কল কারখানা বন্ধ রয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে, নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, খুলনাঞ্চলে গার্মেন্টস হবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প গড়ে উঠবে, বেকারত্ব দূর হবে, নি¤œবিত্ত ও বিত্তহীন মানুষ আর্থিক সুবিধা পাবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হলেই বিশ^ দরবারে এদেশের মানুষের টিকে থাকাও সহজ হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও খুলনা এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ইতোমধ্যেই খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে দেশের বহু অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসবে। সেই সাথে আগে থেকেই চালু থাকা খুলনা বিশ^বিদ্যালয়, কুয়েট, কৃষি বিশ^বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা আসবে স্বাচ্ছন্দে। এমনকি খুলনায় রয়েছে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল। যেখানেও দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে রোগীরা আসতে পারে চিকিৎসা সেবা নিতে। অর্থাৎ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়ও আসবে পরিপূর্ণতা।
পদ্মা সেতু চালুর পর এ অঞ্চলের রাস্তাঘাটের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হবে সেদিকে বিবেচনা করেই ইতোমধ্যে কালনাঘাট সেতু, খুলনার ভৈরব সেতুসহ অনেক সেতু নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে খুলনা ছাড়াও যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের বাসিন্দাদের ঢাকার সাথে যোগাযোগের পথ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। আর এতেই প্রমাণ হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবদিকে খেয়াল রেখেই কাজ করেন। এছাড়া ইতোমধ্যেই যানজট নিয়ন্ত্রণেও নেয়া হয়েছে নানামুখি পদক্ষেপ।
পদ্মা সেতুর পর বিমান বন্দর এখন খুলনাবাসীর প্রধান দাবি উল্লেখ করে শেখ সৈয়দ আলী বলেন, এ ব্যাপারে খুলনার সিটি মেয়র, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্যসহ এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা তৎপর রয়েছেন। অচিরেই বাগেরহাটের খানজাহান আলী(রহ:) বিমান বন্দরের কাজ সম্পন্ন করে চালু করা হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
সর্বোপরি পাট শিল্পের জন্য পদ্মা সেতু ব্যাপক ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে বিজেএ’র চেয়ারম্যান বলেন, কাঁচা পাটসহ খুলনা-যশোরের যেসব জুট মিল, কুটির শিল্প, স্পিনিং মিল রয়েছে সেগুলোর পণ্য সামগ্রী মংলা বন্দর থেকে রপ্তানীর সুযোগ সৃষ্টি হবে। আগে মংলায় জাহাজ সংকট থাকায় চট্টগ্রামে যেতে হতো। এখন আর তার প্রয়োজন হবে না। কেননা এখানে জাহাজ সংকট থাকবে না। যেহেতু মংলার সাথে ঢাকার যোগাযোগ কাছাকাছি হয়ে যাবে সে কারণে আমদানীকারকরা মংলা বন্দরকে ব্যবহার করতে উৎসাহি হবেন বলেও আশা করেন তিনি।