সর্বোচ্চ মৃত্যু তালিকায় আবারো খুলনা বিভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ বন্ধের চার দিনের মাথায় সচল হলো খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাব। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরীক্ষামূলক পরীক্ষায় সফলতা পাওয়া গেছে। সরকারি দু’টি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে গতকাল ১৭ জনের নেগেটিভ ফল পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৫৭জনেরই পুনরায় করোনা শনাক্ত হওয়ায় তাদেরকে ছাড়পত্র দেয়া যায়নি। আর যে ১৭জনের নেগেটিভ ফল এসেছে তাদেরক ছাড়পত্র দিয়ে নতুন রোগী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া গত ৩০ জুন ল্যাবটিতে জীবানুর সংক্রমন হওয়ায় সেই থেকে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। পরের দু’দিন ৯১টি ও ৮০টি অর্থাৎ ১৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে। কিন্তু তৃতীয় দিনে সেখানেও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায় বায়োসেফটিক ল্যাবের আল্ট্রা ভায়োলেট লাইট নষ্ট হওয়ার ফলে। এরপর গত দু’দিন ধরে খুমেক কর্তৃপক্ষ ল্যাবে পরীক্ষামূলক পরীক্ষা করে গতকাল সফলতা পেয়েছেন। আজ সোমবার থেকে এ ল্যাবে পূর্বের ন্যায় আবারো স্বাভাবিকভাবে করোনার পরীক্ষা হবে বলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন। এছাড়া গত পয়লা জুন জমে থাকা দু’হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠানোর পর গতকাল সন্ধ্যায় ফলাফল খুলনায় আসে বলেও তিনি জানান।
খুমেক করোনা ইউনিটে একদিনে পাঁচজনের মৃত্যু ঃ এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতায় পরিচালিত ১৩০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গতকাল ভোর পাঁচটা ২০ মিনিট থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ১০ ঘন্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী গতকাল ভোর পাঁচটা ২০ মিনিটে মৃত্যু হয় যশোরের কেশবপুর থানার মিজানগর এলাকার বাসিন্দা আ: জলিল খান(৫২) নামের একজনের। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৩ জুন তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় মৃত্যু হয় খুলনার পাইকগাছা থানার বান্দিকাটি এলাকার বাসিন্দা আ: রউফ(৪৫) নামের এক ব্যক্তির। তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল গত ২৯ জুন।
গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় মৃত্যু হয় বাগেরহাট সদর থানাধীন কুলিয়ার গাইন এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শেখ(৫২) নামের একজনের। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ২৩ জুন।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় মৃত্যু নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন শেখপাড়া মেইন রোড এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান(৮০) নামের এক ব্যক্তির। তাকে গত ২৯ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল বিকেল তিনটায় নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন বানরগাতি এলাকার বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র বিশ^াস(৮২) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তাকে গত ৩০ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গতকাল সকালে ওই হাসপাতালে ১৯৭জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
বিভাগে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঃ এ যাবতকালের মধ্যে বিগত ২৪ ঘন্টায় যেমন দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে করোনায় তেমনি সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল খুলনা বিভাগেও অর্থাৎ ৪৬জন। আবার খুলনা জেলায়ও এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল বিগত ২৪ ঘন্টায়। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর এবং খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়। অবশ্য এর আগে খুলনা বিভাগে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৩৯জন। কিন্তু গতকাল সেটিও ছাড়িয়ে গেলো।
গতকাল সকালে দেয়া বিভাগীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ১৩০৪জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ হাজার ৫৬৪জনে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রতিবেদন বলছে, বিগত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫৬৬জন এবং এ নিয়ে মোট সুস্থ্য হয়েছেন ৪০ হাজার ২১৮জন।
জেনারেল ও গাজীতে ২৪ ঘন্টায় আটজনের মৃত্যু ঃ খুলনা জেনারেল হাসপাতালে গতকাল সকালে রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৫জন। গতকাল সকালে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ বলেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহুরুল হক(৬৫) ও ডুমুরিয়ার জাহানারা বেগম(৬০)।
এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় ছয়জনের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন। এরা হলেন, ডুমুরিয়ার চুকনগরের জাকির হোসেন(৫০), বাগেরহাটের চিতলমারীর কাজী আহাদ(২৬), নগরীর বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা আফতার হোসেন(৭৬), নড়াইল সদরের দর্জিপুরের হালিমা(৫৫), গোবরার মিন্টু বিশ^াস(৮১) এবং খুলনার ডুমুরিয়ার গোলনার সালেহা বেগম(৬৭)। ওই হাসপাতালে ১২০ বেডের মধ্যে গতকাল ১১৫জন ভর্তি ছিল বলেও তিনি জানান।
আবু নাসেরে দ্বিতীয় দিনে ২৪ রোগী ঃ খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশোয়িত হাসপাতালে গতকাল দ্বিতীয় দিনে সর্বমোট ২৪জন রোগী ভর্তি ছিল বলে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছেন।
খুলনা জেলায় একদিনে ১৫০ শনাক্ত ঃ খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা গতকাল সকালে বলেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলায় ৪৩৬টি নমুনা পরীক্ষার পর ১৫০জনের করোনা শনাক্ত হয়।