৫৫ কোটি টাকার প্রকল্পে
অর্থায়ন করছে এডিবি,
চলতি বছরই কাজ শুরু

এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনা নগরী থেকে প্রতিদিন উৎপাদিত হওয়া বর্জ্য থেকে ডিজেল, কমপোস্ট সার ও বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপন্ন করবে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এজন্য খুলনার দৌলতপুর-শাহপুর সড়কের শলুয়া বাজারের কাছে ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্টিগ্রেটেড ল্যান্ডফিল অ্যান্ড রিসোর্চ রিকভারি ফ্যাসিলিটি শলুয়া’।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। গতবছর থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ করোনার কারণে প্রায় একবছর ধরে থমকে ছিলো। সম্প্রতি কাজে গতি পেয়েছে। প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন, মাটি পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন মাসে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করার আশা করছে কেসিসি। কেসিসি বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই মডেল দেশে এটাই প্রথম।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, ১৫ লাখ মানুষের এই নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ টন গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে কেসিসি। এর বেশিরভাগই রাজবাঁধ ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। এই বর্জ্য সেভাবেই পড়ে থাকে। বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্যকে শক্তি রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েই এই প্রকল্প শুরু হয়।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, প্রতিদিন নগরীর ভেতর থেকে সংগ্রহ করা ৩৭৫ টন বর্জ্য শলুয়ায় আমাদের দ্বিতীয় গ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে হাতে ও যন্ত্রের সাহায্য পচনশীল ও প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করা হবে। এর মধ্যে পচনশীল বর্জ্য দিয়ে কমপোস্ট প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫ টন জৈব সার উৎপাদন করা হবে। আর প্লান্টের গ্যাস দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল করে ডিজেল তৈরি করা হবে। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার লিটার ডিজেল এখানে উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি জানান, সার ও বিদ্যুত উৎপাদনের পর বাকি বর্জ্য দিয়ে ৩টি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ডে রাখা হবে। হবে। এই ল্যান্ডফিলের পানি পরিশোধনের জন্য পৃথক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকবে। পানি ট্রিটমেন্ট হয়ে পুকুরে যাবে। সেই পানি সার, বিদ্যুৎ ও ডিজেল উৎপাদনে ব্যবহার হবে। মোট কথা শলুয়া ল্যান্ডফিলে আনা সবটিকু বর্জ্যই উৎপাদন খাতে কাজে লাগানো হবে। এই বর্জ্যরে পানি জমিতে মিশবে না বা নদীতে ফেলা হবে না।
প্রকল্প থেকে জানা গেছে, শলুয়া ল্যান্ডফিলে দুটি বায়োগ্যাস প্লান্ট, দুটি কমপোস্ট প্লান্ট এবং প্লাস্টিক থেকে ডিজেল উৎপাদনের পৃথক দুটি প্লান্ট থাকবে। এখানে সব কাজই হবে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। শুধুমাত্র যন্ত্র পরিচালনা, প্লান্ট ব্যবস্থাপনা ও প্রাথমিক স্তরের কাজের জন্য ৩০ জন শ্রমিক এবং ৮ জনু সুপার ভাইজার কাজ করবে। উৎপাদিত বিদ্যুত প্লান্টেই ব্যবহার করা হবে। কমপোস্ট সার ও ডিজেল বিক্রি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।
কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, বর্জ্যকে এক সময় বোঝা মনে হতো। কিন্তু এই বর্জ্যকেই শক্তি রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য এডিবি আমাদের সহযোগিতা করছে। চলতিবছরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজ শুরু হবে।