পরীক্ষামূলক
চাষে সফল

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ চাকার চেয়ে বড় আর বাগদার চেয়ে ছোট। দেখতেও বাগদার চেয়ে বেশ পরিষ্কার। তবে চাকার মতো অতোটা সাদা নয়। শারিরীক গঠন প্রায় হরিণা চিংড়ির মতো। তবে মাথা বাগদার ন্যায়। এমন একটি চিংড়ির নাম ভেনামী। আমেরিকান হাওয়াই প্রজাতির এ চিংড়ি উপ মহাদেশের প্রায় ১৪টি দেশ দখল করে আছে। ওই তালিকায় নেই শুধু বাংলাদেশ। অথচ বিশ^ বাজারে রপ্তানী হওয়া চিংড়ির প্রায় ৮০ ভাগই ভেনামী। কেননা এর দাম যেমন কম তেমনি সুস্বাদু। অবশ্য দাম কম বলে চাষীদের কিন্তু লোকসান নেই, বরং লাভ। কেননা অল্প জমিতে কম সময়ে বেশি ফলন মেলে এই চিংড়ি চাষে। বিশাল আকারের জমি নিয়ে ঘের করে জোয়ার-ভাটার পানি উঠিয়েও এর চাষ করার প্রয়োজন নেই। বাড়ির পুকুরেও সুযোগ রয়েছে ভেনামী চাষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের ব্লাক টাইগার খ্যাত বাগদা চিংড়ি যেখানে হেক্টর প্রতি মাত্র ৩১৪ কেজি উৎপাদন হয় সেখানে ভেনামী চিংড়ি হয় প্রায় ১০ মে: টন। আবার সময়ও লাগে কম। বাগদা চাষ করে বিক্রি উপযোগী করতে যেখানে পাঁচ মাস সময় লাগে সেখানে ভেনামী চিংড়ি চাষে লাগে সর্বোচ্চ তিন মাস। এছাড়া বাগদা চিংড়ি বছরে মাত্র একবার চাষ করা গেলেও ভেনামী চাষের সুযোগ রয়েছে বছরে তিনবার। এজন্য ভেনামী চিংড়ি চাষের ওপর জোর দিচ্ছেন চাষীরা। তবে প্রয়োজন সরকারি অনুমোদন। খুলনায় পরীক্ষামূলক ভেনামী চাষের পর সফলতা খুঁজে পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, অনেক পরীক্ষা হয়েছে, অনেক দেখা হয়েছে, আর দেরি নয়, এখনই ভেনামী চাষের অনুমোদন দিয়ে চাষী পর্যায়ে ছেড়ে দেয়া হলে একদিকে যেমন চিংড়ি শিল্পটি রক্ষা পাবে তেমনি লবন পানি উঠিয়ে উপকূলীয় এলাকার ভেড়িবাধ ও জমির ক্ষতি করার প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া পাশাপাশি পৃথক পুকুরে একটিতে ভেনামি অন্যটিতে অন্য মাছের চাষও করা যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ভেনামী চিংড়ি চাষ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিতে আনা হয় মূলত: ২০০৫ সালে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শুধু চলছে গবেষণা। বিগত তিন বছর আগে সরকার দেশের দু’টি জায়গায় পরীক্ষামূলক ভেনামী চিংড়ি উৎপাদনের অনুমতি দেয়। একটি কক্সবাজার অপরটি খুলনায়। খুলনার পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের ছয়টি পুকুর ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে এ সংক্রান্ত সরকারের সাথে একটি চুক্তি হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের। স্থানীয় উদ্যোক্তা হিসেবে সুশীলন যশোরের এম ইউ সী ফুড নামের একটি রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেয়। যার আলোকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ থাইল্যান্ড থেকে ১০ লাখ ভেনামীর পোনা এনে লোনাপানি কেন্দ্রের চারটি পুকুরে ছাড়া হয়। পর্যায়ক্রমে চারটি পুকুর থেকেই মাছ সংগ্রহ করে সর্বশেষ ফলাফলে দেখা যায় হেক্টর প্রতি প্রায় ১০ মে: টন বা ১০ হাজার কেজি উৎপাদন সম্ভব। কেজি প্রতি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা খরচ পড়লেও এর বিক্রয়মূল্য সাড়ে চারশ’ টাকার উপরে।
সর্বশেষ পুকুর থেকে মাছ সংগ্রহকালে সেখানে এ প্রতিবেদকের কথা হয় এম ইউ সী ফুডস লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাসের সাথে। তিনি বলেন, পারমিশনটা হয় ২০১৯এর শেষের দিকে। ২০২০ এ থাইল্যান্ড থেকে পোনা এনে অবমুক্ত করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কোভিডের উদ্ভুত পরিস্থিতে সেটি আনা সম্ভব হয়নি। এ বছর ৩১ মার্চ ১০ লাখ পোনা সিপি থাইল্যান্ড থেকে আনা হয় এবং সেদিনই পাইকগাছার লোনা পানি কেন্দ্রে অবমুক্ত করা হয়। তবে পোনা আনতে গিয়ে দুই লাখের কিছু বেশি মৃত্যু হয়। লোনা পানি কেন্দ্রের ৬টি পুকুর তাদেরকে দেয়া হলেও তার মধ্যে চারটিতে পোনা ছাড়েন। ৯০ দিন থেকে শুরু করে ১০৭ দিনের মধ্যে সর্বশেষ পুকুর থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়। চারটি পুকুরে প্রায় ১৩ হাজার কেজি মাছ উৎপাদন হয় বলেও তিনি জানান। যার জমির পরিমান ছিল আড়াই হেক্টর।
তিনি নিজেও একটি রপ্তানী কারখানার এমডি হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কাঁচামালের অভাব অনুভব করছিলেন। কিন্তু ভেনামী চিংড়ি চাষে মনে হচ্ছে, এটি যদি সার্বজনীন চাষের সুযোগ হয় তাহলে মাছ কোম্পানীগুলোর কাঁচামালের অভাব দূর হবে। সেই সাথে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে মৃতপ্রায় এই শিল্পটি।
তাছাড়া দেশে পোনা উৎপাদন হলে একদিনে যেমন বিদেশ থেকে আনতে গিয়ে পোনা মৃত্যু হবে না তেমনি এর খাদ্যও তখন দেশেই উৎপাদন হবে। এতে খরচ কমার পাশাপাশি উৎপাদনও বেশি হবে।
তাদের এই পরীক্ষামূলক ভেনামী চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রধান পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার। এছাড়া কারিগরি সহায়তায় ছিলেন জেপি এগ্রোকেয়ার ইন্ডিয়ার একজন। আর সামগ্রিক সহযোগিতা করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিএফআরআই)।
বাগদার সাথে ভেনামী চাষের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে শ্যামল দাস বলেন, এটি অবশ্য সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ। ভেনামী চাষের ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা প্রতিনিয়ত করতে হয়। বিশেষ করে পানির পিপিটি, নাইট্রেড, পানির গুনাগুন, মাছের কিছু টেষ্ট এগুলো নিয়মিত করতে হয়। স্বল্প আকারে এই সমস্যাগুলো মেটানোর জন্য একটি ছোট্ট ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রতিনিয়ত করা হলেই কেবল এটি সফল হবে। তবে বিশ্বের চিংড়ির বাজারের ৮০ ভাগই ভেনামীর দখলে থাকলেও সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মোটেই নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পরীক্ষামূলক ভেনামী চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রধান পরামর্শক, খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার বলেন, এটি একটি বিদেশী প্রজাতির চিংড়ি মাছ। সারাবিশ্বে বাদগা চিংড়ির নিবিড় বা আধা নিবিড় চাষে যখন বিপর্যয় আসলো তখন বাড়তি সুবিধার জন্য ভেনামি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ৬৫ থেকে ৭০টি দেশে এবং এশিয়ার প্রায় ১৬টি দেশে চিংড়ি চাষ হয়। আর এই চিংড়ি চাষকে কেন্দ্র করেই বিশ্বে চিংড়ির একটি বাজার গড়ে ওঠে। ভেনামি চিংড়ি চাষের ফলে বাজার যখন বড় হয়ে ওঠে তখন বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। কেননা বাগদা ও গলদা ছাড়া এদেশ থেকে আর কোন চিংড়ি রপ্তানী হয় না। অথচ বিশ্বের ৭৮ ভাগ বাজারই ভেনামির দখলে। আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থান ও আবহাওয়ায় ভেনামী চাষ সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক চাষে এটিই প্রমাণিত। পরীক্ষামূলক চাষে দেখা গেছে এদেশে প্রতি হেক্টরে ৯ থেকে ১০ মে: টন উৎপাদন সম্ভব। যেখানে একেবারে নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করা হলে তিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মে: টন উৎপাদন হয়। তাও সময় লাগে অন্তত: দু’মাস বেশি। চাষী এবং চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা মালিকদের পক্ষ থেকে ভেনামী চাষের দাবি উঠলে সরকার এক পর্যায়ে এসে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয়। এর চাষ সার্বজনীন করা হলে বিশ^ বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় নতুন দিগন্ত উম্মোচন হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
জাতীয় চিংড়ি চাষী সমিতির কারিগরি কমিটির সদস্য এড. শেখ রফিকুজ্জামান বলেন, একদিকে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের ফলে বাগদায় দিন দিন যেমন ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও বাগদার চাহিদা কম। যেহেতু উপকূলীয় অঞ্চলে দু’লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর বাগদা ও গলদা চিংড়ি চাষযোগ্য জমি আছে সেহেতু এবং বৈশি^ক উষ্ণতার কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়ে দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে সে কারণে লবণ পানির চিংড়ি চাষকে টিকিয়ে রাখতে ভেনামির বিকল্প নেই। পরীক্ষামূলক ভেনামী চাষ যেহেতু সফল হয়েছে সেহেতু এখন ব্যাপক আকারে এটি চাষের অনুমতি দেয়া হলে দেশে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। এছাড়া বাগদার পোনা ধরতে গিয়ে প্রতি বছর অন্যান্য মাছে কোটি কোটি পোনা মারা যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাবে। এতে দেশীয় প্রজাতিও টিকে থাকবে।
খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপপরিচালক মোহা: মজিনুর রহমান বলেন, পাইকগাছার লোনা পানি কেন্দ্রে চারটি পুকুরে পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষে আশাব্যাঞ্জক সফলতা পাওয়া গেছে। পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষে বোঝা যাচ্ছে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে এটি চাষ করলে হেক্টর প্রতি ১০ টন উৎপাদন সম্ভব। এতে হিমায়িত রপ্তানীর জন্য কাঁচামালের সংকট দূর হবে এবং বৈদিশিক মুদ্রা আয়ও বাড়বে। তার মতে ভেনামি চিংড়ি চাষে ঝুকি অনেক কম। এর সহ্য ক্ষমতাও বেশি। ঠিকমত ব্যবস্থাপনা করতে পারলে প্রতি হেক্টরে ১০ টনেরও বেশি উৎপাদন সম্ভব। অর্থাৎ কম সময়ে বেশি উৎপাদন বলে লাভও বেশি হবে। তবে এজন্য বিদেশের ওপর নির্ভর না করে এদেশেই হ্যাচারীতে উৎপাদন করতে হবে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো: আব্দুল বাকী বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামির চিংড়ি চাষ করতে পারলে বন্ধ হওয়া চিংড়ি কোম্পানীগুলো আবারো চালু হবে। এ সেক্টরটি আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক সময় চিংড়ি রপ্তানীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ছিল, এখন সপ্তমে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশে নিবিড়-আধানিবিড় বাগদা চিংড়ি চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা এম এ হাসান পান্না বলেন, ভেনামি চিংড়ি চাষকে পুরোপুরি সফল করতে হলে ব্রুড আমদানী করতে হবে। রোগমুক্ত এসপিএফ চিংড়ির পোনার সরবরাহ বৃদ্ধি করে এখানের হ্যাচারিতে চাষ করতে হবে। তাহলে ভাল মানের পোনা পাওয়া যাবে এবং সুলভ মূল্যে চাষীদের দেয়া যাবে। সেই সাথে তিনি চাষীদেরও বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দেয়ার আহবান জানান। বিশেষ করে ভারতে যেখানে চিংড়ি চাষীদের কাছ থেকে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল নেয়া হয় মাত্র দু’টাকা সেখানে আমাদের দেশে বিদ্যুতের রেট পড়ে যায় ১১/১২টাকা। ভারতের চাষীরা ডিজেলেও ভর্তুকি পায়, অথচ আমাদের দেশে এ নিয়ে কোন পরিকল্পনাই নেই। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের চাষীদের ওপর দিয়েই বয়ে যায় আইলা, সিডর, আম্ফানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অন্যান্য দেশে ক্রপ ইন্সুরেন্স, সহজ শর্তে ঋণ ইত্যাদি থাকলেও এদেশে নেই। এসব বিষয় মাথায় রেখে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলেই চিংড়ি চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
ভেনামি চাষ হলে নদী থেকে পোনা ধরার প্রয়োজন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীর পোনা ধরা বন্ধ হলেই অন্যান্য দেশীয় প্রজাতির মাছ ধংস হবে না।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস, হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৭৮টি চিংড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এখন আছে মাত্র ১০৫টি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি শিল্প রয়েছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি। এভাবে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের অন্যতম কারণ হচ্ছে কাঁচামাল অর্থাৎ চিংড়ির অভাব। আমাদের দেশের বাগদা যেখানে হেক্টর প্রতি মাত্র ৩৪১ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয় সেখানে ভেনামি হয় ১০ হাজার কেজি অর্থাৎ ১০ মে: টন। তাই শুধুমাত্র বাগদার ওপর নির্ভর না করে ভেনামি চাষের প্রতি অবশ্যই জোর দিতে হবে। আর ভেনামি চাষ হলে যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং আংশিক চালু রয়েছে সেগুলোও সচল হবে। এশিয়ার ১৪টি দেশে ভেনামি চাষ করে এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে রয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশ। সুতরাং আর পেছনে থাকার সময় নেই। এখনই কিছুটা নিয়মের মধ্যে রেখে ভেনামি চাষের অনুমতি দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ উম্মুক্ত করা উচিত। তাহলে কাঁচামালের সংকট যেমন দূর হবে, তেমনি রপ্তানী বাড়বে এবং বেকারত্বও কমবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বেশি হবে। তিনি বলেন, যদি ৩০ বছর আগে ভেনামির চাষ শুরু করা যেতো তাহলে কমপক্ষে একশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হতো। সুতরাং পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক হয়েছে, আর নয়। এখন সময় সামনে এগিয়ে চলার।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সূত্র মতে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ (প্রাক্তন পশুসম্পদ) মন্ত্রীকে একটি পত্রের মাধ্যমে ভেনামি চিংড়ি সম্পর্কে অবগত করে। ২০১১ সালে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ (প্রাক্তন পশুসম্পদ) সচিবকে পত্র দিয়ে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি চাওয়া হয়। এর বাইরেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সভা, সেমিনার এবং ফোরামে ভেনামি চাষের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ভেনামি চাষের অনুমতি মেলে। ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ভেনামী চিংড়ি চাষ প্রবর্তনের জন্য গঠিত কারিগরী কমিটি “খুলনা ও কক্সবাজার এলাকায় পৃথক পৃথকভাবে ১০-২০ একর আয়তনের সম্পুর্ন আলাদা জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামী চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয়া হয়। খুলনার পাইকগাছায় সুশীলন এবং কক্সবাজারে গোল্ডেন একুয়া শ্রিম্প হ্যাচারী লি: কে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক ভেনামী চাষের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রে ভেনামী চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ বাস্তবায়নের জন্য সুশীলন তার পার্টনার এম.ইউ সী ফুড্স লি:কে অনুমোদন দেয়। একই বছর ৬ নভেম্বর মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন এবং উদ্যোক্তা সুশীলন-এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তির আলোকে সুশীলন কর্তৃক প্রণয়নকৃত খসড়া কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষামূলকভাবে এক বছরের জন্য ভেনামী চাষ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়।
ইন্টারনেটের তথ্য অনুযায়ী চীনে ভেনামী চাষ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে, ফিলিপাইনে ১৯৯৭ সালে, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ায় ২০০০ সালে, ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ২০০১ সালে, সিঙ্গাপুরে ২০০২ সালে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০০৩ সালে, ইসরাইলে ২০০৪ সালে, ইরানে ২০০৬ সালে এবং সৌদী আরবে ২০০৮ সাল থেকে ভেনামী চিংড়ির চাষ শুরু হয়। কিন্তু এখন ২০২১ সাল হলেও বাংলাদেশ শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।