/ বাগেরহাটের সংসদীয় আসন কমানোর প্রতিবাদ: দ্বিতীয় দফায় ডাকা দু’দিনের হরতালের প্রথম দিন অতিবাহিত, সর্বত্র অচলপ্রায়

বাগেরহাটের সংসদীয় আসন কমানোর প্রতিবাদ: দ্বিতীয় দফায় ডাকা দু’দিনের হরতালের প্রথম দিন অতিবাহিত, সর্বত্র অচলপ্রায়

পূর্বাঞ্চল ডেস্ক: বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্য থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাগেরহাটের সর্বদলীয় জোটের ডাকা দ্বিতীয় দফার টানা দু’দিনের হরতালের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। হরতালের প্রথম দিনে বুধবার বাগেরহাট জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলা কার্যত: অচল হয়ে পড়ে। থমকে যায় দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলাও।

এর আগে গত সোমবার দিনভর জেলাব্যাপী হরতাল পালিত হয়। মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দু’দিনের হরতাল শুরু হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।

বাগেরহাট: বাগেরহাট ব্যুরো জানায়, বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে অচল হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলাসহ পুরো বাগেরহাট জেলা। বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা এই কর্মসূচির কারণে জেলার জীবনযাত্রা কার্যত স্থবির হয়ে পরেছে।

সকাল থেকেই বাগেরহাট হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের সব দূরপাল্লা ও আন্তজেলার রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনও থেমে যায়। এদিন শহরের দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। হরতালকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নির্বাচন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কর্মকর্তারাও অফিসে ঢুকতে পারেননি। জেলার মোরেলগঞ্জের পানগুছি ও মোংলা নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার শতাধিক স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে, গাছ ফেলে ও মাছ ধরার জাল টানিয়ে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। ফলে মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে সারাদিনে কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল।

হরতালের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার যাত্রীদের অনেকেই বাস টার্মিনাল বা সড়কের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যানবাহন পাননি। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। শহরের ওষুধের দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে সাধারন মানুষের।

পিরোজপুর থেকে খুলনায় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সালেহা আক্তার বলেন, সকালে বের হয়েছি, কিন্তু বাস নেই। রিকশা-ভ্যানেও দূরে যাওয়া যায় না। মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছি না, অসহায় লাগছে।

ব্যবসায়ী আবী হোসেন জানান, মোংলা বন্দরে মাল আটকে আছে, পরিবহন না চলায় সময়মতো সরবরাহ করতে পারছি না। এতে ব্যবসায় বড় ক্ষতি হবে।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের একটি সংসদীয় আসন কমিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, মোংলা বন্দর, ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল ও দুটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় চারটি আসন বহাল রাখা জরুরি।

জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, এ আন্দোলন কোনো দলের নয়, এটি জনস্বার্থের আন্দোলন। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে, নইলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

মোংলা: মোংলা(বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে আবারও শুরু হয়েছে টানা ৪৮ ঘন্টার হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। তৃতীয় দফায় শুরু হওয়া হরতালের প্রথম দিন বুধবার সকাল ৬টা থেকে ‘সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি’র নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এবং গাছের গুড়ি ফেলে হরতাল পালন শুরু করেন।

মোংলা-খুলনা মহাসড়কের কাটাখালী, ফয়লা, দিগরাজসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সর্বদলীয় রাজৈনতিক দলের সমর্থকরা। এসময় সড়কে বিক্ষাভ, টায়ার পুড়িয়ে আগুন জ্বালানো হয়। সকল ধরনরে পরিবহন যাত্রীবাহি বাস, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের কারনে মোংলা সমুদ্র বন্দরের জেটিতে সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বর্হিনোঙ্গরে জাহাজের পন্য খালাস স্বাভাবিক রয়েছে। মোংলা নদীর খেয়া ও ফেরী চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারন মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌছায়। মোংলা শিল্পঅঞ্চলের সিমেন্ট কারখানা, গ্যাস সহ প্রায় ২৩ উৎপাদিনমুখী প্রতিষ্ঠান পুরোপুরো বন্ধ রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে না পারায় মোংলা ইপিজেড এ অবস্থানরত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে এ সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ থাকায় কয়েক কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়।

মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের উপচরিচালক মাকরুজ্জামন মুন্সী জানান, বন্দর চ্যানেলের বহিঃনোঙ্গর বেসরকারি জেটিতে সার,ক্লিংকার ও তরল গ্যাসবাহী ৯টি বানিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এ সকল জাহাজের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বন্দরের নিজস্ব জেটিতে কোন জাহাজের অবস্থান না থাকলেও কন্টেইনার ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দর থেকে পন্যবাহী কোন ট্রাক বের হয়নি। ছাড় হয়নি রিকন্ডিশন গাড়িও। একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় বন্দরের দাপ্তরিক কার্যক্রমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নিতে পারেনি। একই অবস্থা মোংলা কাস্টমস হাউজের। নেই কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের আনা গোনা। গোটা বন্দর এলাকা জুড়ে স্থাবিরতা ও সুনসান নিরাবতা বিরাজ করছে। স্থানীয় ব্যাংক,বীমা,সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজও বন্ধ রয়েছে। এ হরতাল ও অবরোধ কর্মস‚চিতে সর্বদলীয় রাজৈনতিক দলের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয় । জেলার ৯টি উপজেলার কমপক্ষে ১৪০টি পয়েন্টে স্থানে ব্যারিকেড দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তি চরমে পৌছেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম জানান, ‘সর্বদলীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হরতাল পালন করছি। আমাদের প‚র্বের চারটি আসন ফেরত দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের হঠকারী সিদ্ধান্তে জেলার ২৬ লাখ মানুষ ব্যাথিত হয়েছে। তাদের হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখনও সময় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত হতে না সরে আসলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।

সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্য সচিব মো. শেখ মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, ‘আমাদের প‚র্বঘোষিত কর্মস‚চি অনুযায়ী হরতাল চলছে। দাবি না মানা হলে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।’

মোরেলগঞ্জ: মোরেলগঞ্জ অফিস জানায়, বাগেরহাটের ৪টি আসন পুর্নবহলের দাবিতে সর্ব দলীয় সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতাল কর্মসূচির সফল করার লক্ষ্যে বুধবার সকল থেকেই মোরেলগঞ্জের শহরের দোকান পাট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। নব্বইরশি ও ছোলমবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ বাগেরহাট আন্ত: পরিবহনসহ দূরপাল্লার বাস ও নৌ যানসহ সকল পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস ও নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরসহ সকল সরকারি দপ্তর গুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ¦ালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হরতাল কারীরা। বেলা ১১ টায় নির্বাচন অফিসের সামনে এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ শরণখোলা) আসনের দলিয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপি নেতা কাজী খায়রুজ্জামান শিপন। সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের আহবায়ক উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শহিদুল হক বাবুল, সদস্য সচিব পৌর জামায়াতের আমীর মাষ্টার মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

অপরদিকে, হরতাল কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যে ৯০ এর জাতীয়তা বাদী ছাত্রদল ফোরামের ব্যানারে ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল শেষে নির্বাচন অফিস ঘেরাও করে কার্যালয়ের মুল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী ছাত্র ফোরাম সংগঠনের পৌর শাখার সভাপতি আব্দুল হাদি নাহিদ, সহ সভাপতি মাসুম হোসেন কচি, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম মিঠু, ছাত্রদল ফোরামের সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম বায়েজিদ, সাধারণ সম্পাদক এজাজুল ইসলাম জুয়েল, মল্লিক আবুল কালাম খোকনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

বাধাল: বাধাল(বাগেরহাট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কে বেরিকেট দিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে বাধালসহ সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। যানবাহন চলাচল না করায় দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েন বিপাকে। সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা থাকলেও সেবা গ্রহিতার উপস্থিতি ছিল খুবই কম।

সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির পাঁচ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচি অংশ হিসেবে ২য় দফা ৪৮ ঘন্টার হরতালের ১ম দিন বুধবার উপজেলার বাধাল বাজার, সাইনবোর্ড, গোয়াল মাঠ, সাংদিয়া, ভাষা বাজার সহ আশপাশের এলাকায় হরতালের কারণে বিভিন্ন বাজারের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যান চলাচল ছিল বন্ধ। রাস্তায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি, সাধারণ মানুষও ঘর থেকে বের হননি।

চিতলমারী: চিতলমারী (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাট জেলায় ৪টি সংসদীয় আসন পূর্ণবহালের দাবিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকে নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে টানা ৪৮ ঘন্টার হরতাল পালন করছেন। তৃতীয় দফা হরতালের প্রথম দিন সড়কে যান চলাচল সীমিত রয়েছে। বাগেরহাটের সব উপজেলা থেকে দূরপাল্লার সবধরনের বাস বন্ধ রয়েছে। হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত নেতাকর্মী সমর্থকরা।

বুধবার সকালে ঢাকা- মাওয়া-পিরোজপুর-বাগেরহাট চিতলমারী ও খুলনা সড়কের মচন্দপুর মোড়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ¦ালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয় । হরতালের সমর্থনে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে শ্রেনী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কার্যত অচল হয়ে হয়ে পড়েছে চিতলমারী।

কর্মসূচিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষ এ হরতালের সমর্থন জানিয়ে অংশগ্রহন করেন। হরতাল চলাকালীন রাস্তায় ভ্যান ড়াড়ি, কিছু মাহেন্দ্র ও অটো ভ্যান ছাড়া অন্য কোন যান চলাচল করেনি। জরুরী পরিসেবার বাইরে সকল দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চিতলমারী কার্যত সারা দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারন মানুষ।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুনিয়া বাসস্ট্যান্ডে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মমিনুল হক টুলু বিশ^াস, সাধারন সম্পাদক শরিফুল হাসান অপু, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মনিরুজ্জামান, সেক্রেটারী জাহিদুজ্জামান নান্না,উপজেলা বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডঃ ফজলুল হক,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ উপজেলা শাখার সভাপতি ডাঃ কাজী আবুল কালাম, সাধারন সম্পাদক মাওঃ শাহাদাৎ হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোঃ জাকারিয়া মিলন, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোঃ নেয়ামত আলী খান প্রমুখ।

রামপাল: ফয়লাহাট ( রামপাল) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবীতে টানা ৪৮ ঘন্টার হরতালের ১ম দিনে বুধবার রামপাল উপজেলায় শান্তিপুর্ণ ভাবে হরতাল পালিত হয়েছে।

সকাল থেকে খুলনা- মোংলা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় হরতাল সমর্থনকারিরা।
এসময় রোগী পরিবহনের এ্যম্বুলেন্স ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। ছাড়া রামপাল- গিলাতলা- বাগেরহাট সড়ক ও ফয়লাহাট- গোবিন্দপুর- বারাকপুর সড়কে দু/একটি ভ্যানগাড়ী ছাড়া আর তেমন কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। সরকারি – বেসরকারি অফিস, ব্যাংক খোলা থাকলেও তেমন কোনো কাজকর্ম হয়নি। কর্মকর্তা- কর্মচারীদের উপস্থিতিও কম ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও কোনো শিক্ষক- শিক্ষিকা- ছাত্র-ছাত্রী আসেনি। হাট বাজারে দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। দক্ষিনাঞ্চলের প্রতিটি হাট বাজারের কাচা ও মুদি দোকানের মালামাল খুলনা থেকে পাইকারি দরে কেনা হয়। হরতালে সড়কে যানাবাহন বন্ধ থাকায় মালামাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আর এতেই বাজারে দামের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

হরতাল চলাকালে মহাসড়কের বিভিন্ন ফাকা স্থানে হরতাল সমর্থরকারিদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। জরুরী প্রয়োজনে বের হয়ে শিশু ও নারীরা দুর্ভোগে পড়ে। অনেকে বাধ্য হয়ে মহাসড়কে পায়ে হেটে চলাচল করেন। মহাসড়কের কোথাও কোথাও হরতালের সমর্থনে বিএনপি- জামায়াত- এনসিপির নেতা কর্মিরা বক্তব্য রাখেন।রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য নারী- পুরুষ মোংলা ইপিজেডে কাজ করেন। হরতালে তারা যেতে পারেননি।

কাটাখালী: কাটাখালি (বাগেরহাট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা কর্মসুচির অংশ হিসেবে কাটাখালি এলাকা সহ ফকিরহাট উপজেলায় কঠোরভাবে হরতাল পালিত হয়েছে ।
এসময় ফলতিতা মৎস্য আড়ৎ বন্ধ করে দেয় হরতাল সমর্থনকারীরা। এছাড়াও সকল দোকান-পাট বন্ধ দেখা গেছে।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ৪৮ ঘন্টা হরতালের প্রথমদিন সকালে হরতাল সমর্থনকারী দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ফকিরহাট ফলতিতা মৎস্য আড়ৎ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ি ও চাষীরা।

এদিন সকাল থেকে ফকিরহাট সড়ক ও মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন যাতায়াত করতে দেখা যায়নি। ফকিরহাট বিশ্বরোড় মোড়, কাটাখালী চত্ত¡রসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তবে গ্রাম অঞ্চল দিয়ে সীমিত আকারে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও ভ্যান চলতে দেখা গেছে। হরতালের কারণে উপজেলার সকল দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কিছু ফার্মেসীর দোকান খোলা দেখা গেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মহাসড়কে সিমিত আকারে কিছু মটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। স্কুল-কলেজের অফিস খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক, বাঁশ ও কাঠের গুড়ি ফেলে সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে রাখে। তবে এ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিবহনগুলো ছেড়ে দিতে দেখা গেছে।