/ বাগেরহাটে আসন সংখ্যা কমানোর প্রস্তাবে জেলাজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ

বাগেরহাটে আসন সংখ্যা কমানোর প্রস্তাবে জেলাজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: বাগেরহাট-৪ সংসদীয় আসনটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুসে উঠছে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ, মানব বন্ধন ও স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানোর তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।


বাগেরহাট ব্যুরো জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাগেরহাট জেলার সংসদীয় আসনের সংখ্যা চার থেকে তিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি কমিটি। এই খসড়া সুপারিশ প্রকাশের পর থেকেই জেলার বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।


রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ভোটার সংখ্যা ও ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় দেশের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন রাখার প্রাথমিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত পুনর্বিন্যাস অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ আসনে চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট, বাগেরহাট-২-এ সদর, কচুয়া ও রামপাল এবং বাগেরহাট-৩-এ মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা অন্তর্ভুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।


তবে এই খসড়া প্রকাশের পর থেকেই জেলায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ জনগণ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন। তাদের দাবি, বাগেরহাট জেলার আয়তন প্রায় ৩,৯৫৯ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১৬ লাখের বেশি। এত বড় একটি জেলায় চারটি আসনই যথাযথ, বরং আসন কমালে তা উন্নয়ন কর্মকান্ড ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকে ব্যাহত করবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এর আগে বাগেরহাট জেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এছাড়া বাগেরহাটের অন্যান্য উপজেলাগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।


এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহŸায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে বাগেরহাট চারটি আসন নিয়ে গঠিত। এই ঐতিহ্যবাহী জেলাকে তিনটি আসনে রূপান্তরের প্রস্তাব শুধু নিন্দনীয় নয়, অপমানজনকও। এটি একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, বাগেরহাটের উন্নয়ন এমনিতেই পিছিয়ে। এখন আসন কমানো হলে তা আরও বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন, আসন কমানোর সিদ্ধান্ত কোনভাবেই বাগেরহাটের মানুষ মেনে নেবে না। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আমরা আরও কঠোর বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনে বাধ্য হব।


জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, সুন্দরবনের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য যেখানে রয়েছে, সেই জেলাকে দুর্বল করতে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করছি।
এছাড়া জেলা বিএনপির সদস্য খান মনিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও মোংলা বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকা সত্তে¡ও বাগেরহাটকে অবহেলা করা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।


উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী বিন্যাস অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (মোংলা ও রামপাল), এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা) আসনে বিভাজিত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই জেলার রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছিল।


মোরেলগঞ্জ: মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিলসহ বাগেরহাট ৪ আসনটি পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ড. কাজী মোঃ মনিরুজ্জামান। স্মারকলিপিতে সাতটি কারণে আসনটি বহাল রাখার যৌক্তিতা তুলে ধরা হয়। ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে সরাসরি গিয়ে তিনি এ স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি পেশ শেষে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলার বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবেন।


রামপাল: ফয়লাহাট(রামপাল) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসন রামপাল-মোংলা বাগেরহাট- ৩ আসনটি পুণর্বিন্যাস করায় রামপাল – মোংলার মানুষ ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। অবিলম্বে আসন পুণর্বিন্যাসের ওই আদেশ প্রত্যাহার না করলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী দিয়েছে তারা।
রামপাল উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, নারী নেত্রী, কৃষক, শ্রসজীবি মানুষ, সাংবাদিকসহ সাধারন মানুষ বলেন, রামপাল- মোংলার মানুষের মধ্যে যুগ যুগ ধরে একটা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমরা এ বন্ধন ছিন্ন হতে দেবনা। আমরা নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত মানি না। প্রয়োজন হলে আমরা আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে নামবো।


চিতলমারী: চিতলমারী(বাগেরহাট) থেকে নিজস্বসংবাদদাতা জানান, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুন: নির্ধারনের নামে বাগেরহাট জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন সংখ্যা কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাবের প্রতিবাদে এবং পূর্বের ৪টি আসন পুন:বহালের দাবিতে চিতলমারীতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।


গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির কার্যলয় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করেন। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়া ও সাধারন মানুষ এতে অংশ নেন।


প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মমিনুল হক টুলু বিশ^াস। এসময় সাবেক উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আহসান হাবিব ঠান্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাবু, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সোহেব হোসেন গাজী, শিপন মুন্সি,ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খান মনিরুজ্জামান, শিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শেখ নোয়াব আলী, চরবানিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বিএনপির জাহিদুর রহমান, সন্তোষপুর ইউনিয়ন সভাপতি সরদার নজরুল ইসলাম, কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী গাউসুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও স্থানীয় নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।