খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক
এড. শফিকুল আলম মনা

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ১৪ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. এস এম শফিকুল আলম মনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিল বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা জাইকা’র মাধ্যমে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। ওই সময় জাইকা একটা সম্ভাব্য প্রাক্কলনও দিয়েছিল। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল নয় হাজার কোটি টাকা। এরপর বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলে পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে সেই নয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। আবার রেল সেতু নিয়ে এর খরচ দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। তিনি মনে করেন পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ নি:সন্দেহে উপকৃত হবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্র্যক্ষণকে সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বিএনপি নেতা মনা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে বলেই বিএনপি প্রথমে পদ্মা সেতুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে যেটি করা হলো তাতে পৃথিবীর সকল উন্নত দেশের সড়ক নির্মাণকে হার মানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর যে কোন দেশে এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে খরচ হয় ১০ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে লাগে ১১০ কোটি টাকা। তবে এ অঞ্চলের জন্য যে কোন প্রকল্প নেয়া হবে সেটিকে তিনি সাধুবাদ জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন।
অবশ্য পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে এটি পরোক্ষভাবে হত্যার হুমকি বলেও তিনি মনে করেন।
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কেমন ভূমিকা রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে নগর বিএনপির আহবায়ক বলেন, ঠিক এখনই বলা যাবে না। কারণ শুধু একটা পদ্মা সেতু তৈরি করেই জনগনের বাহবা নেয়া যাবে এটি ঠিক, কিন্তু আনুসঙ্গিক যেসব অবকাঠামো দরকার সেগুলো না হলে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সুতরাং পদ্মা সেতুর পাশাপাশি মূল সড়ক প্রশস্তকরণ, অন্যান্য বিকল্প সড়ক নির্মাণ, বন্দরের উন্নয়নসহ অনেক উন্নয়নের সাথেই সবকিছু সম্পর্কযুক্ত।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্দরগুলো সচল করতে গেলে যে পরিকল্পনা করা দরকার তা’ নেই। যে পরিমাণ গভীরতার জাহাজ মংলায় আসতে পারবে সে পরিমান ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে। মংলা সমুদ্র বন্দরকে সচল রাখতে হলে সারা বছরই নদী ড্রেজিং করে রাখতে হবে বলেও তিনি মনে করেন। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হলে সকল পণ্য সামগ্রী যে মংলা থেকে রপ্তানী হবে সেটিও এখনই বলা যাবে না। এজন্য তিনি মংলা ও পায়রা এবং বেনাপোল ও ভোমরা বন্দর এবং রাস্তাঘাটকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। পরিকল্পিত উন্নয়ন না হলে শুধু একটি পদ্মা সেতু সবকিছু পাল্টে দেবে এমন ভাবনাও সঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
তিনি পদ্মা সেতুর পাশাপাশি খুলনায় বিমান বন্দর নির্মাণের অগ্রগতি কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুলনায় বিমান বন্দর হলে শুধুমাত্র খুলনার মানুষ যে বিমানে আসা-যাওয়া করবে সেটি মনে করার কারণ নেই। কেননা বিমান বন্দর থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে, পর্যটকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুতরাং তিনি দ্রুত বিমান বন্দরের কাজ এগিয়ে নেয়ার আহবান জানান।
এক সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পদ্মায় দু’টি সেতু হবে। একটি মাওয়ায় আর একটি দৌলতদিয়ায়। ওই বক্তব্যকে সমর্থন করে বিএনপি নেতা শফিকুল আলম মনা বলেন, রাজধানীর সাথে দেশের সকল মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে গেলে অবশ্যই পদ্মায় দু’টি সেতু দরকার। পদ্মা সেতু হয়েছে এজন্য যেমন তিনি সরকারকে সাধুবাদ জানান তেমনি দৌলতদিয়ায়ও আরও একটি পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়ার আহবান জানান।
এছাড়া পদ্মা সেতু হলেই খুলনা শিল্প নগরীর ঐতিহ্য ফিরে আসবে সেটিও মনে করেন না এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, একযোগে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়ে শুধু একটি পদ্মা সেতু দিয়ে কিভাবে শিল্প নগরীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব ? শিল্প নগরীর ঐতিহ্য ফেরাতে তিনি আগে মিলগুলো চালুর দাবি জানান। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিকল্পিত উন্নয়ন না হবে ততক্ষণ সার্বিক উন্নয়ন আশা করা যায় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সেইসাথে ট্যাক্স ফ্রি জোন, ইপিজেড, অর্থনৈতিক জোন করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু মানেই হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে সেটি ভাবাও ভুল।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত: ভাঙ্গা থেকে মংলা পর্যন্ত রেল লাইন গেলে বন্দরকে যেমন পুরোপুরি কাজে লাগানো যেতো তেমনি যশোরের পরিবর্তে শেষ ষ্টেশন খুলনা করা হলে রেল সেতু হতো লাভজনক। তিনি খুলনার যাত্রীদের জন্য সরাসরি রেল সার্ভিস দাবি করেন।
সার্বিক দিক দিয়ে পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগকে সহজ করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকটা দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষ ঢাকা বা দেশের পূর্বাঞ্চলে যেতে পারবে এটি ঠিক, কিন্তু টোল নির্ধারণ অনেক বেশি করা হয়েছে। ব্রীজ ও রাস্তার টোল সহনীয় পর্যায়ে নেয়া দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি ঢাকা-খুলনা ভায়া ভাঙ্গা-গোপালগঞ্জ মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি বিকল্প সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান। বিশেষ করে বিকল্প সড়ক না হলে একটি সড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করা হলেও লোড নিতে পারবে না। এজন্য বিকল্প ও মজবুত সড়ক করার দাবি জানান তিনি।